অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডারদেরকে ক্রমবর্ধমানভাবে ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করা হচ্ছে। নিউজিলান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক Erina Morunga মাইগ্রেশন এজেন্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য।
অ্যাডিলেড-ভিত্তিক ওই এজেন্ট বলেন, প্রচুর অনুরোধ তিনি পাচ্ছেন ওই সকল নিউজিল্যান্ডারদের সাহায্য করার জন্য। ওই সকল নিউজিল্যান্ডাররা উদ্বিগ্ন তাদের অস্ট্রেলিয়া থেকে বের করে দেয়া হবে তাদের কৃত অপরাধের জন্য যা তারা বহু বছর আগে করেছিল কিন্তু এর কারণে তাদের জেলে যেতে হয় নি।
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এই ডিপোর্টেশন ইস্যু। ২০১৪ সালে ক্যারেক্টার টেস্টের বিষয়টি আরও কঠোর করা হয়। এর ফলে বহু অস্ট্রেলিয়ান রেসিডেন্ট, যারা দীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেছেন, তাদের মধ্যে যারা কোনো অপরাধের জন্য ১২ মাসের কারাভোগ করেছেন তাদেরকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
নিউজিলান্ডের প্রধানমন্ত্রী Jacinda Ardern বারংবার এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, এটি দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি হুমকি। গত মাসে মেলবোর্ন সফরে তিনি এরকম কথা বলেন।
অন্য দিকে, অস্ট্রেলিয়া সরকার এ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসছে না।
অন্য দিকে, ইমিগ্রেশন মিনিস্টার ডেভিড কোলম্যান প্রস্তাব করেছেন এই আইনটি আরো কঠোর করতে, যাতে করে সহজেই এই চারিত্রিক ইস্যু প্রয়োগ করে ১০ হাজারের বেশি অভিবাসীকে এদেশ থেকে বের করে দেয়া যায়।
প্রস্তাবিত এই নতুন আইনে বিধান রাখা হয়েছে কোনো ভিসা-ধারক যারা অপরাধ করেছে এবং কমপক্ষে দুই বছরের সাজা প্রাপ্ত হয়েছে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ক্যারেক্টার টেস্টে ফেল করবে। এমনকি যদি তারা জেলে না গিয়েও থাকে।
মাইগ্রেশন রিসার্চার এবং লেবার দলের সাবেক পলিসি অ্যাডভাইজর হেনরি শ্যারেল বলেছেন যে, সর্বশেষ প্রস্তাবটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হুমকিস্বরূপ। এর ফলে ওই সম্প্রদায় ওই সকল মানুষেরা বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
মিস্টার শেরেল বলেন, নিউ সাউথ ওয়েলস লোকাল কোর্টে ২০০৫ সালে সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে তিনি বিশ্লেষণ করেন।
প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো অতীতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ, যারা ইতোপূর্বে কোনো অপরাধ করেছেন এবং সেই সময়ের আইন অনুসারে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে, তাদেরকেও কারেক্টার গ্রাউন্ডে ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় ভিসাধারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই নিউ জিল্যান্ডাররাই। যদিও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি লাভের ক্ষেত্রে তাদের সীমিত সুযোগ রয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে নিউ জিল্যান্ডাররাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভাবা হচ্ছে।
গত বছর যতগুলো সাবক্লাস ৮৮৬ ভিসাধারীকে তাদের দেশে অর্থাৎ তারা যে দেশে জন্ম নিয়েছেন সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার অর্ধেক সংখ্যকই ছিল নিউ জিল্যান্ডের।
মিজ মোরুঙ্গা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সমাজকে পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছে সরকার।
মিস্টার কোলম্যান গত মাসে সংসদে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সকল অনাগরিককে এই বিলটি একটি পরিষ্কার বার্তা দিবে যে, অস্ট্রেলিয়ান সমাজে এ ধরনের অপরাধে দণ্ডিত অপরাধীদেরকে সহ্য করা হবে না।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করা এবং থাকাটা একটি সুবিধা, এটি কোনো অধিকার নয়। আর, যে-ব্যক্তিই আইন ভঙ্গ করবে তাকে এটা মনে রাখতে হবে যে, সে তার এই সুবিধাটি হারাবে।
নিউ জিল্যান্ডারদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেট না করে লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির ল প্রফেসর প্যাট্রিক কেইজার বলেন, প্রস্তাবিত এই আইনটিতে ট্রান্স-টাসমানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকগুলো দিক রয়েছে।
প্রফেসর কেইজার ২০১৪ সালের পরিবর্তনগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, এই নীতিমালার প্রয়োগ করা হলে বহু পরিবারে ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
সরকার যদি সাম্প্রতিক এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে অগ্রসর হয়, সেক্ষেত্রে নিউ জিল্যান্ডারদের ঝুঁকি কমানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন মিস্টার শেরেল।
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।