ম্যাজেস্টিক কম্পিউটা টেকনলজিতে সফ্টওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে দু’বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন মরিস পেরেরা। তিনি মনে করেন এটা তার জীবনের পরম পাওয়া। দক্ষ অভিবাসী ভিসায় কাজ পাওয়ার পর এখন তিনি সফল হওয়ার একটি সুযোগ চান।
ম্যাজেস্টিক আইটি কয়েক মাস ধরে বিজ্ঞাপন দিয়েও মরিসের মতো দক্ষ কাউকে স্থানীয়ভাবে পায় নি। প্রতিষ্ঠানটির সিইও ট্যাল ইভান্স বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ানদের চাকুরী অন্যদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন একটি ভুল ধারণা নিয়ে বহুবার তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী অভিবাসী গ্রহণের সংখ্যা কমানোর একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। পরবর্তীতে সরকার এ নিয়ে কাজ করে।
অন্য অনেক দেশের মতো ইমিগ্রেশন বিষয়ক বিতর্ক অস্ট্রেলিয়ার জন্য এখন একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এটি আরো চরম আকার ধারণ করেছে ফেডারেল ইলেকশনে কোয়ালিশনের অপ্রত্যাশিত বিজয়ে।
স্থায়ী এবং অস্থায়ী অভিবাসীরা স্থানীয়দের চাকুরী নিয়ে নিচ্ছে এবং এতে করে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে বলে সাধারণভাবে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে Committee for Economic Development of Australia (CEDA) এর এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, এটি মোটেও সঠিক নয়।
প্রতিষ্ঠানটির সিইও মেলিন্ডা সিলেন্টো বলেন, অস্থায়ী দক্ষ অভিবাসীদের সুযোগ দেয়ার ফলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির দুটো চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কয়েক দশক ধরে অভিবাসীরা কোনোভাবে স্থানীয়দের চাকুরী পাওয়ার কিংবা মজুরির ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় নি। অন্যদিকে, অস্থায়ী দক্ষ অভিবাসীরা অত্যন্ত দক্ষ এবং অনেক বেশি উৎপাদনশীল এবং তারা ব্যবসা এবং বৃহত্তর অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনছে।
CEDA এর গবেষণায় দেখানো হয়, অস্থায়ী দক্ষ অভিবাসীরা দেশের কর্মীসংখ্যার এক শতাংশের কম। তবে 4-8-2 ভিসাতে এবং এর আগের 4-5-7 ভিসাতে ক্রমাগত পরিবর্তন আনার কারণে ব্যাবসায়ীদের জন্য তাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়তো।
তিনি বলেন, অনেক অস্থায়ী দক্ষ অভিবাসীরা অতি দক্ষ ও উচ্চ বেতনের চাকুরীগুলো নিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়রা এটি নিশ্চিত করতে চায় যে, সেইসব কাজ অস্ট্রেলিয়ানদের জন্যও পাওয়া যাবে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্রফোর্ড স্কুল অফ পাবলিক পলিসির প্রফেসর রবার্ট ব্রিউনিগ বলেন, Productivity Commission এর জন্য তার করা রিপোর্টটি CEDA রিপোর্টটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, তিনি এমন কোন প্রমাণ পান নি যে অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারের উপর বিরূপ কোনো প্রভাব ফেলেছে। যা নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।
তার মতে, তেমন কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও তার মানে এটা নয় যে, এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। তবে, যে সব প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ প্রভাব রয়েছে।
Australian Council of Trade Unions (A-C-T-U) বলছে, অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন সিস্টেমে দক্ষ কর্মীদের অভাব পূরণের জন্য অস্থায়ী দক্ষ কর্মীদের সুযোগ রয়েছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান হতে পারে না। ইউনিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লিয়াম ও’ব্রায়েন বলেন, টেম্পোরারি স্কিলড মাইগ্রেশন স্কিমের অপব্যবহার করেন অনেক চাকুরীদাতা।
তিনি বলেন, CEDA রিপোর্ট নিয়ে A-C-T-U উদ্বিগ্ন। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার টেম্পোরারি স্কিলড মাইগ্রেশন স্কিম আরো সহজ করা উচিত, যাতে করে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী খুঁজে আনতে পারেন বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে।
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।