গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা এলাকা থেকে একটি পরিবারের ১৭ জনের ছয় জন অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছেন।
- পুরো পরিবারটির টিকিট খরচ লাগছে ৮৫ হাজার ডলার যা সম্পূর্ণ কমিউনিটির সহায়তায় সংগৃহীত হয়েছে।
- ক্যানবেরার বাসিন্দা নাজিয়া আহমেদ অর্থ সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবার থেকে আসা নাজিয়া আহমেদ সামাজিক ও গণউন্নয়ন ভিত্তিক সংগঠন দ্য সোশ্যাল আউটকামস ল্যাবের সিইও।
তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এবং সহকর্মী হানা জারুর, যিনি একজন সাইকোলজিস্ট, তার কাছ থেকে নাজিয়া জানতে পারেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার একটি ফিলিস্তিনি পরিবার বিপুল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসতে এবং এখানে থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ভিসা পেয়েছে।
কিন্তু পরিবারটিকে আনতে তাদের বিমান ভাড়ার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে 'গো ফান্ড মি'-তে আবেদন জানান নাজিয়া।
শুরুতে উল্লেখ করার মত অর্থ সংগ্রহ না হলেও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সদস্য এগিয়ে আসেন, যাদের প্রচেষ্টায় অল্প কয়েক দিনেই সংগৃহীত হয় প্রয়োজনীয় তহবিল।
নাজিয়া আহমেদ এসবিএস বাংলাকে জানাচ্ছেন কীভাবে তিনি এই দুরূহ কাজটি সংগঠিত করলেন।
নাজিয়া জানান যে, ওই পরিবারটির ছয় জন ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছে ফ্যামিলি স্পন্সর্ড ভিসায় টুরিস্ট হিসেবে।
"তাদের জন্য লেবানিজ কমিউনিটি একটা ফার্নিশড বাসা ঠিক করে দিয়েছে, তাদের জন্য কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
উত্তর গাজার এই পরিবারের অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানো এই ছয় জনের সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। কোন শিশু তাদের সাথে আসে নি। তবে ওই পরিবারের বাকি ১১ জনের মধ্যে ছয় জন শিশুও আছে।
নাজিয়া বলেন, "যদিও ওদের সবকিছু (ভিসা প্রক্রিয়া) রেডি হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমাদের জন্য (প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের কারণে) দেরি হচ্ছিল। এই ছয় জনের খরচ একটা মসজিদ লোন হিসেবে দিয়েছিল যেটা আমরা ফান্ড রেইজিং থেকে ফিরিয়ে দেব।"
আশা করা হচ্ছে সেই পরিবারের বাকি ১১ জনও শীঘ্রই চলে আসবেন। তবে মিশরীয় সরকারের নিয়মানুযায়ী যারা মিশর হয়ে ফিলিস্তিনী পাসপোর্টে ভ্রমণ করবে তাদের একটি ট্রাভেল ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হবে। এই পাসপোর্টগুলো মিশরীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আছে, এই ক্লিয়ারেন্স পেতে সাত থেকে ১৪ দিন লাগতে পারে।
Canberra economist Nazia Ahmed launched GoFundMe campaign to bring the Gaza family to Australia. Credit: Nazia Ahmed
আগতরা এখনও পর্যন্ত সরকারি বা কোন বেসরকারি সংগঠন বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য পায় নি। এ পর্যন্ত যা করা হয়েছে পুরোটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কমিউনিটির সহায়তা নিয়ে করা হয়েছে।নাজিয়া আহমেদ
নাজিয়ার সহকর্মী ও বন্ধু হানা জারুর ওই পরিবারের অস্ট্রেলিয়ান সদস্যদের প্রতিবেশী, তিনিই প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেন।
এসবিএস বাংলাকে দেয়া একটি বক্তব্যে হানা বলেন, শৈশব থেকেই আমার কাছে ফিলিস্তিনিদের উপর নিপীড়ন ও তাদের মুক্তির সংগ্রাম সমার্থক। সম্প্রতি গাজার পরিস্থিতি আমার মধ্যে ভয়াবহ যন্ত্রণা ও অসহায়ত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।
"যেহেতু আমার পক্ষে কিছু করার সুযোগ পাওয়া গেছে, তাই কিছু মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছি। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় সম্প্রদায় একে অপরকে সাহায্য করার জন্য একত্রিত হয়েছে তা জেনে আমার মন ভরে গেছে।
"যদিও দুষ্ট লোকদের আওয়াজই সবচেয়ে বেশি শোনা যায়, তবে আমি দেখছি যে এই পৃথিবীতে আরও অনেক ভালো মানুষ আছে।
"আমি উদ্বিগ্নভাবে এই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছি এবং আশা করি আমি অন্যদের জন্যও সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করতে পারব।"
নাজিয়া বলেন, "আগতরা এখনও পর্যন্ত সরকারি বা কোন বেসরকারি সংগঠন বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য পায় নি। এ পর্যন্ত যা করা হয়েছে পুরোটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কমিউনিটির সহায়তা নিয়ে করা হয়েছে।"
বিষয়টি জরুরি বিবেচনা করে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ৮৫,০০০ ডলার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এই অর্থ পুরো সংগ্রহ না হওয়ায় নাজিয়া এই বাকিটুকু সংগ্রহ করতে গো ফান্ড মি-তে আবেদন জানান। "যদিও আমার বান্ধবী হানা বলছিল 'গো ফান্ড মি'-এর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার," বলেন নাজিয়া।
Many members of the Bangladeshi community, notably Dr. Shamaruh Mirza and her husband Dr. Faham Abdus Salam, stepped forward and took to social media to raise the necessary funds for the Gaza family to assist in their relocation to Australia. Credit: Dr. Shamaruh Mirza
তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত-বন্ধুবান্ধবদের কাছে আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানান এবং কয়েক দিনের মধ্যেই এই অর্থ সংগৃহীত হয়ে যায়।
আরও দেখুন
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস কী?
কমিউনিটির উদারতা এবং ভালোবাসা, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কথা উল্লেখ করে নাজিয়া বলেন, "আমাকে এটা বলতেই হয় যে, এতো সুন্দর মনের মানুষ আছে পৃথিবীতে, তারা অনেকেই নানাভাবে সাহায্য করতে চেয়েছেন।"
অবশেষে গো ফান্ড মি-এর মাধ্যমে তাদের প্রায় ২২,০০০ ডলার সংগ্রহ হয়।
এমন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে কীভাবে পরিবারটি পৌঁছল এ বিষয়ে নাজিয়া বলেন, "বিষয়টি নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছিল, পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল ছিল, এক পর্যায়ে যখন ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু হয়, তখন তাদের আসা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।”
"এই পরিস্থিতিতে ওরা যদি না আসতে পারতো হয়তো তারা সে অবস্থায় মারা যেত। তবে তারপরে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ জায়গা দিয়ে তারা রাফা পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং সেখানে ইয়া হালা নামের যে ট্রাভেল এজেন্ট তাদের ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে সেই এজেন্টের মাধ্যমেই তারা মিশরে পৌঁছে। তবে এজন্য একটি বড় অ্যামাউন্ট এর ফান্ড দরকার হয়ে পড়েছিল," বলেন তিনি।
মিশরে আসার পর অস্ট্রেলিয়ান এমব্যাসিতে তাদের ভিসার ব্যবস্থা করা হয়, যদিও তা ছিল একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং সেখান থেকেই এখন পর্যন্ত ছয় জন অস্ট্রেলিয়ায় আসতে সক্ষম হয়েছেন।
নাজিয়া আহমেদের পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।