সাদা-কালো এই ফিলিস্তিনি স্কার্ফ পরার কি কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে?

SENATE QUESTION TIME

Greens Senator Mehreen Faruqi during Question Time in the Senate chamber at Parliament House in Canberra, Monday, November 6, 2023. (AAP Image/Mick Tsikas) NO ARCHIVING Source: AAP / MICK TSIKAS/AAPIMAGE

অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কুফিয়া নামে পরিচিত এই সাদা-কালো স্কার্ফটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভগুলিতে দৃশ্যমান হয়েছে। অস্ট্রেলীয় রাজনীতিবিদ মেহরিন ফারুকী ও লিডিয়া থর্প সংসদে এই স্কার্ফ পরিধান করেছেন এবং ওয়াশিংটনে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাস্কর্যও এই স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। এই স্কার্ফের গুরুত্ব ও বিশেষত্ব কী?


গুরুত্বপূর্ণ দিক:
  • কুফিয়া, কেফিয়া, হাট্টা বা ঘাটরাহ, অঞ্চলভেদে এরকম বিভিন্ন নামে এই পোশাকটিকে ডাকা হয়ে থাকে
  • এটিকে বিশ্বব্যাপী মূলত জনপ্রিয় করেছিলেন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত
  • বর্তমানে এই পোশাক প্রতিরোধ, সাহস ও স্বাধীনতার প্রতীক
গত দুই মাস ধরেই অস্ট্রেলিয়া এবং সারা বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশগুলিতে অংশগ্রহণকারীদের পরনে কয়েক ধরণের সাদা-কালো স্কার্ফ দেখা গেছে।

কুফিয়া নামের এই স্কার্ফ লাল-সাদা বা শুধু সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। অনেক সময় এগুলিতে বিভিন্ন ধরণের এমব্রয়ডারির কাজ বা সূচিকর্মও দেখা যায়।

আর কেউ এটিকে ঘাড়ের চারপাশে, কেউ মাথা ঢেকে আর কেউ কেউ মুখের চারপাশে মুড়িয়ে এই স্কার্ফ পরে থাকেন।

এই স্কার্ফগুলি ফিলিস্তিনিদের কাছে সাধারণত 'কুফিয়া' বা ‘কেফিয়া’ নামে পরিচিত। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই ধরণের স্কার্ফগুলি অনেকের কাছে প্রতিরোধ এবং স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

বিশ্বজুড়ে যেখানেই বিক্ষোভ হচ্ছে, সেগুলিতে অংশ নেয়া মানুষেরা সংহতি প্রকাশের জন্যেও এটি পরিধান করে থাকে।
ড. আনাস ইকতাইত অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যারাব অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের প্রভাষক।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের আত্ম-পরিচয়ের সঙ্গে কুফিয়ার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

যদিও এই পোশাকটি ফিলিস্তিনিদের সাথেই সবচেয়ে সহজে সনাক্ত করা যায়, তবে কুফিয়া নামের উৎপত্তি কিন্তু ফিলিস্তিন নয়।

এর উৎপত্তি আরও পূর্বদিকের অঞ্চলে, যেটি এখন ইরাক নামে পরিচিত।

কুফিয়া শব্দটি ইরাকের কুফা শহরের নামের সাথে সম্পর্কিত, যেটি বাগদাদের দক্ষিণে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত।

আরব বিশ্বের অনেক মানুষই এই স্কার্ফ পরিধান করে থাকেন। অঞ্চলভেদে এটি অন্য অনেক নামেও পরিচিত। যেমন, লেভান্ট উপভাষায় এটিকে 'হাট্টা' এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে এটিকে 'ঘাটরাহ' নামেও ডাকা হয়।

ড. ইকতাইত আরও বলেন, এই পোশাকটি সাধারণত কৃষকরাই বেশিরভাগ সময় পরিধান করতেন।
১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের সময় এটি মূলত ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে।

এরপর নাকবা সংঘটিত হয়, আরবি ভাষায় নাকবা শব্দের অর্থ "বিপর্যয়"। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের মানুষদের ব্যাপকভাবে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়নের শিকার হতে হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬০-এর দশকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়।

ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে কুফিয়া পরিধান করাটা প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে। তৎকালীন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত মূলত কুফিয়াকে বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে সহায়তা করেছিলেন।

ইয়াসির আরাফাত ছিলেন একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নেতা, যিনি ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলি সরকারের সাথে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যু বরণের আগ পর্যন্ত তিনি প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

একজন ফিলিস্তিনি নেতা হিসাবে তিনি নিয়মিত কুফিয়া পরতেন। অনেকেই ধারণা করে থাকেন, ইয়াসির আরাফাত কুফিয়ার সামনের দিকটা ফিলিস্তিনের মানচিত্রের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে ত্রিভূজের মত করে পরতেন।
কুফিয়ার ডিজাইনেরও বিশেষ অর্থ রয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, কুফিয়ার সূচিকর্ম ও নকশার প্রতীকী অর্থ রয়েছে যা ফিলিস্তিনের সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।

এর ফ্রেমের চারপাশের কালো পাতাগুলি দিয়ে জলপাই গাছের পাতা বোঝানো হয়, যা প্রতিরোধ, শক্তি এবং সাহসকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আর মাছ ধরার জালের মত নকশা আসলে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের মানুষ এবং ফিলিস্তিনি সেইসব মানুষের প্রতীক, যাদের জীবিকা নির্ভর করে মাছ ধরার উপর।

আর কাপড়ের মাঝের বিস্তৃত লাইনটি এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিক পথগুলিকে চিত্রিত করে যেগুলি ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতীক।

ড. ইকতাইত বলেন, যদিও এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই পোশাক পরার রাজনৈতিক অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে, কিন্তু তারপরেও কুফিয়ার সমৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার লিঙ্কে ক্লিক করুন।

এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।

কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

এ সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন:

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share