গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- আরবীতে ‘হারাকাত আল মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ এর আদ্যাক্ষর নিয়ে হামাস নামটি গঠিত হয়েছে
- হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে
- ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় হামাস
- সম্প্রতি ফিলিস্তিনি একটি মতামত জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের সমর্থন, গত ৭ অক্টোবরের পর, হ্রাস পায়নি এবং পশ্চিম তীরে তা প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যকার বিরোধ সম্প্রতি তীব্রতা পেলেও এর পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ঘরে ঘরে হামাসের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তবে, এই গোষ্ঠীটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেকেই বিশেষ কোনো ধারনা রাখেন না।
হামাস হলো ফিলিস্তিনি একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আরবীতে ‘হারাকাত আল মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ এর আদ্যাক্ষর নিয়ে এই সংক্ষিপ্ত নামটি গঠিত হয়েছে। এর অর্থ, ‘ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন’।
ফিলিস্তিনি ইসলামী এই গোষ্ঠটির সঙ্গে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে।
ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি করেছেন মোহাম্মদ আল-জারাওয়াহ। তিনি মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, হামাস হলো মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা, যা গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ওয়েস্ট ব্যাংক এবং গাজায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দখলদারির ২০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর, ১৯৮৮ সালে, ফিলিস্তিনি জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। এটি প্রথম ‘ইন্তিফাদা’ বা উত্থান নামে পরিচিত।
আরও শুনুন
গাজায় সংঘাতের বিস্তৃতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, সেই সাথে বিমান হামলা আরও তীব্র হয়েছে
SBS Bangla
24/10/202308:41
সিডনি ইউনিভার্সিটির পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডির সিনিয়র লেকচারার আয়াল মেইরোজ বলেন, সেই সময়ে হামাস তাদের প্রথম চার্টার বা ফরমান জারি করে এবং ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।
মিস্টার মেইরোজ বলেন, সেই সময়ে হামাসের কর্মকাণ্ড অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখন শাসকদল ফাতাহ ফিলিস্তিনের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছিল বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছিল।
প্রতিবাদ কর্মসূচি বা প্রথম ইন্তিফাদা স্থায়ী হয়েছিল ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। তাদের নিজস্ব ম্যান্ডেট এবং নেতৃত্ব ছিল।
অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইন্তিফাদা সমাপ্ত হয়। এতে, ফাতাহ্র নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পি-এল-ও ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করে।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ দেখা যায়, গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা তখনও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস করছিল। সে সময়ে উত্তেজনা প্রবল আকার ধারণ করলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূচনা হয়। এটি ছিল প্রথমটির তুলনায় আরও বেশি সহিংস এবং বিস্তৃত।
পরবর্তী বছরগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি এবং ১১০০ এরও বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
২০০৪ সালে, হামাস নেতা আহমেদ ইয়াসিন বলেন, পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেমে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিনিময়ে এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা বন্ধ করবে।
কিন্তু, ইসরায়েল তখন মার্চ মাসে আহমেদ ইয়াসিনকে লক্ষ করে বিমান হামলা চালায় এবং তাকে হত্যা করে।
মোহাম্মদ আল-জারাওয়াহ বলেন, এর ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলোতে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
২০০৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় হামাস। ইসমাঈল হানিয়াহ প্রধানমন্ত্রী হন।
ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট ফাতাহ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব দেশগুলো এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এবং হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা চালায়। ফলে, গাজার রাস্তায় রাস্তায় রক্তক্ষয়ী লড়াই বেঁধে যায়।
২০০৭ সালের জুলাই নাগাদ, ফাতাহ্র বাহিনীকে পরাস্ত করে হামাস এবং তারা গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
ইসরায়েল তখন স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ-পথে অবরোধ করে এবং গাজাতে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। ফলে, গাজার অর্থনীতি দাতাদের সাহায্যের ওপরে আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
আরও দেখুন
গাজায় তীব্র মানবিক সংকট, যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য কোন সাহায্য নেই
SBS Bangla
11/12/202306:45
মোহাম্মদ আল-জারওয়াহ বলেন, ২০১৭ সাল নাগাদ হামাস একটি নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রকাশ করে। এতে তারা ইসরায়েলের প্রতি তাদের মনোভাব আরও নমনীয় করে এবং ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব ভূখণ্ড দখল করেছিল সেই সীমানায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাটি মেনে নেয়।
কিন্তু, ২০১৭ সালের আগস্টে, গাজায় হামাসের নতুন নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার বলেন, ইরান ছিল হামাসের সামরিক শাখার ‘সবচেয়ে বড় আর্থিক এবং সামরিক পৃষ্ঠপোষক’।
এ সম্পর্কে মিস্টার আল-জারওয়াহ বলেন, হামাসের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক খুবই জটিল।
আয়েল মেইরোজ বলেন, হামাসের সঙ্গে সংঘাতে সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর নীতি কিছু অনভিপ্রেত ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনি একটি মতামত জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের সমর্থন, গত ৭ অক্টোবরের পর, হ্রাস পায় নি; তবে, পশ্চিম তীরে তা প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।