অস্ট্রেলিয়ায় ইতিপূর্বে সর্বমোট ৪৪টি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে সফল হয়েছে মাত্র আটটি।
দেশের সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবে জনগণের মতামত জানতে চেয়ে সাধারণত আয়োজন করা হয় গণভোটের। অংশগ্রহণকারী ভোটাররা হ্যাঁ অথবা না ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজের মতামত জানাতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য গণভোটগুলির মধ্যে রয়েছে ১৯৪৬ সালের গণভোট, যার মাধ্যমে সেন্টারলিঙ্কের সূচনা হয়েছিল। তারপরেই রয়েছে ১৯৬৭ সালের গণভোট, যার মাধ্যমে অ্যাবরিজিনাল জনগোষ্ঠীকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।
গত মাসে সিনেটে ভয়েস টু পার্লামেন্ট বিষয়ক বিলটি পাশ হয়ে গেলে, সাধারণ নিয়মে তার দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি নিশ্চিত করেছেন যে এ বছরেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তিনি বলেন, ইন্ডিজেনাস মানুষদের কথা শোনবার এটাই প্রকৃষ্ট সময়।
অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ভয়েসের পক্ষে এবং বিপক্ষে চলছে প্রচারণা। ‘কাম টুগেদার ফর ইয়েস’ -নামক কার্যক্রমে অনেক মানুষের সমাগমে অংশগ্রহণকারীরা ‘ইয়েস’ ভোটের পক্ষে জনমত গড়ে তুলছেন।
‘ইয়েস২৩’ নামের ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে এসমস্ত র্যালী ও কার্যক্রম। ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার লিন্ডা বার্নি ২ জুলাই ব্রিসবেনে এরকমই এক লোকসমাগমে বক্তৃতা করেন।
তিনি গণভোটে ইয়েস ভোটের মাধ্যমে এই ভয়েস আন্দোলনকে সফল করার আহ্বান জানান সবাইকে।
যদিও ইয়েস২৩ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা র্যাচেল পারকিন্স সিডনি ইভেন্টে এবিসি-কে জানান, সাম্প্রতিক জরিপে যদিও দেখা গেছে ‘ইয়েস’ মতবাদের পক্ষে সমর্থন কমে গেছে, তারপরেও তিনি আশাবাদী মানুষ এ বিষয়ে আরও আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে আসবে।
এদিকে ‘নো ক্যাম্পেইন’-এর কার্যক্রমও জোরদার গতিতে চলছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ এ একটি কার্টুন প্রকাশিত হয় এই ক্যাম্পেইনের পক্ষে, যা বর্ণবাদী হিসেবে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়।
এই পত্রিকাটির প্রকাশক ‘নাইন’ অবশেষে এই কার্টুনটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছে, এই কার্টুনটি প্রকাশ করা তাদের উচিত হয়নি।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র সিনেটর লিডিয়া থর্পের নেতৃত্বে ব্লাক সভেরিন মুভমেন্ট বা বিএসএম ‘ভয়েস’ এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন ফার্স্ট নেশনস জনগোষ্ঠীর বেশ কিছু প্রতিনিধিদল।
তাদের মতামত, ভয়েস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি কার্যত একটি দুর্বল প্রস্তাব এবং এটি কোনোভাবেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে না।
টাজমানিয়ান অ্যাবরিজিনাল সেন্টারের চেয়ারপার্সন ও বিএসএম এর একজন সদস্য মাইকেল ম্যানসেল বলেন, এই সংস্থার হাতে অ্যাবরজিনাল মানুষদের কাছে ভূমি ফেরত দেয়ার ক্ষমতা থাকবে না, আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না, এটি কেবল একটি উপদেষ্টা কমিটিই হয়ে রইবে।
তিনি অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে এর বিপক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান, যেন সরকার আবারও সঠিক উপায় খুঁজে পেতে আলোচনার জন্যে উদ্যোগী হয়।
মিজ লিন্ডা বার্নি ভয়েসের সমর্থনে বলেছেন, এটি কেবল একটি দুর্বল উপদেষ্টা সংস্থা হিসেবে কাজ করবে এরকমটা হবে না, বরং ইন্ডিজেনাস মানুষদের স্বার্থ সংরক্ষণে এটি সচেষ্ট থাকবে।
মিজ বার্নি ভয়েসের জন্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই চারটি বিষয় হচ্ছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আবাসন।
যদিও বিরোধীদলীয় ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ান মুখপাত্র জাসিন্টা প্রাইস এ সমস্ত ক্ষেত্রে ভয়েসের ক্ষমতার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন।
তবে মিজ বার্নি মিজ প্রাইসের ভয়েস-বিরোধী কৌশলকে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশলের সাথে তুলনা করেছেন।
বিরোধীদলগুলির বাধা ও সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল অন্য কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি গণভোট সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।