গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার
নিউ সাউথ ওয়েলসে গাড়ি চালানোর সময়ে আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। জানুয়ারি ২০১৯ থেকে সিডনির অন্তত দুটি স্থানে হাই-টেক ক্যামেরার মাধ্যমে ড্রাইভিংয়ের সময়ে ফোনের ব্যবহার নজরদারি করা হবে।
এম ফোর মোটরওয়ে এবং অ্যানজ্যাক প্যারেডে নব্বই দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। এই ট্রায়াল পিরিয়ডে কোনো জরিমানা করা হবে না।
যে-কোনো আবহাওয়ায় দিনে-রাতে এই ক্যামেরা কাজ করবে। কোনো ব্যক্তি গাড়ি চালানোর সময়ে ফোন ব্যবহার করলে তা এই ক্যামেরায় ধারণ করা হবে।
বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে নিউ সাউথ ওয়েলসে গাড়ি চালানোর সময়ে কোনো চালক অবৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তার পাঁচ ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা হয়। লার্নার ড্রাইভার, পি-১ এবং পি-২ লাইসেন্সধারীদেরও গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অনুমতি নেই। ট্রাফিক লাইটে অপেক্ষা করার সময়ে কিংবা ট্রাফিক জ্যামের কারণে অপেক্ষা করার সময়েও গাড়ির চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই।
ফুল লাইসেন্সধারী চালকেরা শুধুমাত্র তখনই মোবাইল ফোন দিয়ে কল করতে পারবেন যদি তাদের মোবাইল ফোন গাড়িতে সংযুক্ত করা থাকে কিংবা যদি তারা মোবাইল ফোন সেটটি স্পর্শ না করেই তা ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, ব্লুটুথ কিংবা ভয়েস অ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে। গাড়ি চালানোর সময়ে চালকেরা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টেক্সট কিংবা ইমেইল করতে পারবেন না এবং সামাজি-যোগাযোগ-মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন না এবং এর মাধ্যমে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও কল করতে পারবেন না। বিস্তারিত দেখুন: ।
নিউ সাউথ ওয়েলস গভার্নমেন্ট প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, মিনিস্টার ফর রোডস, মেরিটাইম অ্যান্ড ফ্রেইট মেলিন্ডা প্যাভেই বলেন, গত অক্টোবরে যখন একমাস ব্যাপী এটি পরীক্ষা করে দেখা হয়, তখন ১১ হাজারেরও বেশি চালক অবৈধভাবে ফোন ব্যবহার করেছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন,
“পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর যদি দেখা যায় যে এই প্রযুক্তি নিখুঁত, তখন এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহার করার কথা কমিউনিটিকে জানানো হবে।”
“ক্যামেরার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের অবৈধ ব্যবহার শনাক্ত করার বিষয়টি নিউ সাউথ ওয়েলসের কমিউনিটির ৭৪ শতাংশ লোক সমর্থন করেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রযুক্তি গাড়ির চালকদের আচরণ পরিবর্তন করবে এবং মানুষের জীবন বাঁচাবে।”টোল এবং রেজো
NSW Roads Minister Melinda Pavey announcing a crackdown on drivers using mobile phones. Source: AAP
এ বছর ২০১৯ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার তাদের টোল রিলিফ প্রোগ্রাম বিস্তৃত করবে। এর ফলে উপযুক্ত গাড়ির চালকদের কেউ কেউ অর্ধেক খরচে কিংবা বিনা খরচে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
১ জুলাই ২০১৯ থেকে যেসব চালক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫ ডলার বা তারও বেশি অর্থ টোল প্রদান করেন তারা অর্ধেক খরচে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। আর যেসব চালক সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫ ডলার বা তার চেয়ে বেশি অর্থ টোল দেন তারা বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
এই প্রোগ্রামের আওতায় থাকবে স্ট্যান্ডার্ড প্রাইভেটলি রেজিস্টার্ড কার, ইয়ুট, ফোর-হুইল ড্রাইভ এবং মোটর-সাইকেল।
নিউ সাউথ ওয়েলস গভার্নমেন্ট ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ১৪০ হাজারেরও বেশি চালক অর্ধেক খরচে কিংবা বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন সুবিধা পাওয়ার জন্য উপযুক্ততা লাভ করেছে। এ বছর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ৩০০ হাজারেরও বেশি ছাড়িয়ে যাবে।
গাড়ি চালানোর সময়ে যে-সব ভুল করা যাবে না
গাড়ি চালানোর সময়ে যদি খুব জোরে গান বাজানো হয় এবং গাড়ির জানালা যদি খোলা থাকে সেক্ষেত্রে শব্দ-দূষণের অভিযোগে জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধে কুইন্সল্যান্ডে ১৭৫ ডলার এবং নিউ সাউথ ওয়েলসে ২০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
যৌক্তিক কারণ ছাড়া শুধু শুধু হর্ন বাজালেও জরিমানা গুণতে হবে। নিউ সাউথ ওয়েলসে এর পরিমাণ ২৯৮ ডলার এবং ভিক্টোরিয়ায় এর পরিমাণ ২৮২ ডলার।
সামনে পুলিশ থাকলে কিংবা স্পিড ক্যামেরা থাকলে কোনো কোনো চালক ফ্লাশ লাইটের মাধ্যমে পেছনের গাড়িগুলোকে সতর্ক করে থাকেন। এর জন্যও জরিমানা গুণতে হতে পারে। পেছনের চালককে সতর্ক করাটা অপরাধ নয়, তবে যথাযথ ও যৌক্তিক কারণ ছাড়া লাইট ফ্লাশ করাটা অপরাধ। এক্ষেত্রে নিউ সাউথ ওয়েলসে ১১০ ডলার, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ১০০ ডলার এবং কুইন্সল্যান্ডে ৫০ ডলার জরিমানার পাশাপাশি এক ডিমেরিট পয়েন্টও কাটা হতে পারে।
একাধিক লেনের রোডে সাধারণত বাম দিকের লেন ধরেই গাড়ি চালাতে হয়। ওভারটেক করার প্রয়োজন হলে তখন ডান দিকের লেন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু, বাম পাশের লেন খালি থাকা সত্ত্বেও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ডান লেনে গাড়ি চালালে নিউ সাউথ ওয়েলসে ১০৮ ডলারের পাশাপাশি দুই ডিমেরিট পয়েন্ট এবং কুইন্সল্যান্ডে ৬৬ ডলারের পাশাপাশি দুই ডিমেরিট পয়েন্ট জরিমানা করা হতে পারে।নির্ধারিত গতিসীমার উপরে গাড়ি চালানো উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবেন নির্ধারিত গতিসীমার ১০ শতাংশ বেশি গতিতে গাড়ি চালালে সমস্যা হয় না। অর্থাৎ, ঘণ্টায় ৬০ কি.মি. রাস্তায় ৬৬ কি.মি. বেগে কিংবা ৫০ কি.মি. রাস্তায় ৫৫ কি.মি. গতিতে গাড়ি চালালে কোনো সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন। আসলে, নির্দিষ্ট গতিসীমার বেশি গতিতে গাড়ি চালালে জরিমানা করা হবে কিনা তা পুলিশের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে, স্পিড-ক্যামেরা থাকলে এক কি.মি. বেশি গতিতে গাড়ি চালালেও তা ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে ১১৯ ডলার জরিমানার পাশাপাশি এক ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা হয়, ভিক্টোরিয়ায় ২০১ ডলারের পাশাপাশি এক ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা হয়, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ১৭৪ ডলার, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ১০০ ডলার জরিমানা এবং কুইন্সল্যান্ডে ১৭৪ ডলার জরিমানা করা হয়।
Source: Drive safe NT
খুব আস্তে গাড়ি চালালেও জরিমানা করা হয়। নিয়মানুসারে অপর গাড়ির পথ রোধ করাটাও বে-আইনী কাজ। যৌক্তিক কারণ ছাড়া খুব ধীর গতিতে গাড়ি চালালে নিউ সাউথ ওয়েলসে ২৫৩ ডলার জরিমানার পাশাপাশি ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট, কুইন্সল্যান্ডে আদালত জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করে এবং ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ২৮৯ ডলার জরিমানা করা হয়।
গাড়ির নম্বর প্লেটে যদি ময়লা থাকে এবং সেজন্য যদি তা পড়া না যায় তাহলে ৪১৫ ডলার জরিমানার পাশাপাশি তিন ডিমেরিট পয়েন্ট, কুইন্সল্যান্ডে ৩৪১ ডলার এবং ভিক্টোরিয়ায় ১৬১ ডলারের পাশাপাশি তিন ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা হয়।