গণভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখন নির্ধারণ করা হয়নি। এমনকি সেখানে অস্ট্রেলীয়দের সামনে কী প্রশ্ন রাখা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া এখনও বাকি।
ভয়েস কী? এর গঠন ও কাজ কী হবে?
‘ভয়েস’ হবে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী সংস্থা যা মূলত সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবে। আদিবাসী ও টরেস স্ট্রেট আইল্যান্ডারদের বিষয়গুলিকে প্রভাবিত করবে, এমন সব সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়ান সংসদ ও সরকারকে পরামর্শ দিবে ভয়েস।
তবে, সংসদে ভয়েস প্রতিষ্ঠা করার জন্যে অস্ট্রেলীয় সংবিধানে পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজন হবে। আর সে জন্যেই দরকার হবে একটি গণভোট বা রেফারেন্ডামের।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের ভেতরে রেফারেন্ডাম আয়োজন করা হবে।
সাধারণত যেহেতু শনিবারে গণভোটের আয়োজন করা হয়, তাই সরকারের হাতে সেরকম শনিবার খুব বেশি নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি, ক্রিসমাসের সময় এবং সংসদ অধিবেশনের তারিখগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মাত্র চারটি শনিবার রয়েছে গণভোট আয়োজনের জন্যে।
রেফারেন্ডাম বা গণভোট কী?
রেফারেন্ডাম বা গণভোট সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে হয়, তবে গণভোটে সাধারণত কোনও একটি প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে হ্যাঁ অথবা না ভোটের মাধ্যমে নিজের রায় জানানোর সুযোগ পায় নাগরিকেরা।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী লিন্ডা বার্নি বলেছেন, ভয়েস টু পার্লামেন্ট ইন্ডিজেনাস মানুষদের জীবনে সত্যিকারের একটি পরিবর্তন আনবে এবং সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতিকেও বাস্তব রূপ দিবে। তিনি তাই এই গণভোটকে গুরুত্বের সাথে নেয়ার কথা বলেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় রেফারেন্ডামের ইতিহাস
এবারের রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় সিকি শতাব্দী পরে। অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।
তবে সংবিধান পরিবর্তনের জন্যে ভোট দেয়ার ঘটনা ১৯৭৭ সালের পরে এটিই হবে প্রথম।
যদিও গত ১২২ বছরের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ানরা সংবিধানে পরিবর্তনে খুব বেশি ইচ্ছুক বলে প্রমাণিত হয়নি। এবারের আগ পর্যন্ত ৪৪ বার গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে এ দেশে, যার মধ্যে সফল হয়েছে মাত্র আটটি।
আগ্রহীদের হয়ত জানা থাকবে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে সর্বপ্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে।
গণভোটের প্রশ্ন
যেমনটা বলা হলো, গণভোটের জন্যে যে প্রশ্ন করা হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি প্রশ্নের একটি রূপরেখা দিয়েছেন।
সে অনুযায়ী আসন্ন গণভোটের প্রশ্নটি হবে এরকম: একটি আইন প্রস্তাব করা হচ্ছে যার দ্বারা অ্যাবোরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডারদের ভয়েস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন সাধিত হবে। আপনি কি এই পরিবর্তন অনুমোদন করছেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ সুযোগ পাবে হ্যাঁ অথবা না ভোট দেয়ার।
পক্ষে ও বিপক্ষে প্রচারণা
ভয়েসের পক্ষে ও বিপক্ষে ইতিমধ্যেই জোর প্রচারণা শুরু হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেরা নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করছেন এ বিষয়ে।
সম্প্রতি নর্দার্ন টেরিটরিতে আয়োজিত বারুঙ্গা ফেস্টিভ্যালে যে নতুন ঘোষণা আসে, সেখানে অংশগ্রহণকারীরা হ্যাঁ ভোটের পক্ষে মত দেন।
সেখানে জাওয়েন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন লিসা মামবিন বলেন, এই নতুন ঘোষণায় ঐতিহ্যবাহী রক্ষকদের আকুতি শোনার আহ্বান জানানো হয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের।
টমাস মায়ো অস্ট্রেলিয়ানস ফর ইন্ডিজেনাস কনস্টিটিউশনাল রেকগনিশন নামের একটি সংস্থার বোর্ড ডিরেক্টর। তিনি বলেন, বারুঙ্গার নতুন এই বিবৃতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে, সরকারসহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলি ভয়েস এর পক্ষে মত দিলেও বিরোধী দল অর্থাৎ কোয়ালিশনের নেতা পিটার ডাটন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
কিন্তু স্টোলেন জেনারেশনের একজন প্রতিনিধি স্কট উইলসন চান, ভয়েস টু পার্লামেন্টের এই প্রস্তাব যেন সফল হয়।
অন্যদিকে প্রায় ১১০টিরও বেশি অভিবাসী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমর্থন জানিয়েছে হ্যাঁ ভোটের পক্ষে। গণভোটের সফলতা নিশ্চিত করতে সব অস্ট্রেলিয়ানকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে এই সংগঠনগুলি।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।