২৭ মে থেকে ৩ জুন সপ্তাহজুড়ে পালিত ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন উইকে ১৯৬৭ সালে অনুষ্ঠিত রেফারেন্ডাম বা গণভোট এবং ১৯৯২ সালে হাইকোর্টে মাবো কেইসের কথা স্মরণ করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬৭ সালের গণভোটে ৯০ ভাগ অস্ট্রেলিয়ান সংবিধান সংশোধনের পক্ষে "হ্যাঁ ভোট" দিয়েছিল। যার ফলে আদিবাসীদের জাতীয় আদমশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ফেডারেল বা কমনওয়েলথ সরকার আদিবাসীদের জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়।
উপনিবেশায়নের ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে টেরা নুলিয়া জ্ঞান করা হতো। টেরা নুলিয়া মানে এমন দেশ যা কারোরই নয়। যদিও বা আদিবাসীরা হাজার বছর ধরে এই মহাদেশে বসবাস করে আসছেন।
১৯৯২ সালে এডি মাবোর নেতৃত্বে টোরেস স্ট্রেইট দ্বীপের আদিবাসীরা হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ে নামে। কোর্ট তাঁদের পক্ষে রায় দেয় এবং নেটিভ ল্যান্ড স্বীকৃতি দেয়।
আদিবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে রিকসনসিলিয়েশন কর্মসূচীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। রিকনসিলিয়েশনের মানে আদিবাসীদের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সকল জাতিগোষ্ঠীর পুনঃমৈত্রী, সমন্বয়, ঐক্য এবং সংহতি।
এ বছর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন উইকের থিম হচ্ছে: More than a word. Reconciliation takes action.
শুধু কথায় নয়, কাজের মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করাকে মূল মন্ত্র ধরা হয়েছে এ বছর।
Reconciliation Australia জাতীয় পর্যায়ে রিকনসিলিয়েশনের জন্য কাজ করে আসছে গত ২০ বছর ধরে।
নর্দার্ন এনএসডব্লিউর কারেন মান্ডিন একজন বানজুলান আদিবাসী নারী। তিনি রিকনসিলিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
তিনি সকল জাতির মৈত্রী রচনাকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে দেখেন; যাতে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিপুত্র আদিবাসীর সাথে সকল অস্ট্রেলিয়ান, যারা সদ্য এদেশে এসেছেনা বা যারা বহুকাল ধরে এদেশে আছেন, তাদের সবাইকে এক সম্পর্কের সুতোয় গাঁথা যায়।
একজন অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে আমরা অনেকভাবেই রিকনসিলিয়েশন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারি। আদিবাসীদের ইতিহাস অস্ট্রেলিয়ার অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। ইতিহাসের সেই দিকে আমরা আলোকপাত করতে পারি— সেসব বিষয়ে আমাদের কমিউনিটিতে আলাপ করতে পারি।
Federation of Ethnic Communities’ Councils of Australia-এর প্রধান মোহাম্মদ আল খাফাজী রিকনসিলিয়েশন উদ্যোগের সাথে যুক্ত হতে সকল অভিবাসীকে আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা আমাদেরকে এদেশে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের বিষয়ে জানা, তাঁদের ইতিহাসকে বোঝা এবং তাঁদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাকে অনুধাবন করা আমাদের দায়িত্ব। তাঁদের মত আমরাও বর্ণ-বৈষম্য ও নিগ্রহের শিকার হয়, তাঁদের মত আমরাও এর অবসান চাই এবং ন্যায়বিচার ও সমতার সমাজ চাই।
অভিবাসীদের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন উদ্যোগে অনাগ্রহের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে বলে কারেন মান্ডিন অবশ্য মনে করেন। কিন্তু তিনি অভিবাসীদের সবাইকে এবারের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন সপ্তাহের আয়োজনে যুক্ত হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনেকের হয়তো এইসব আলাপে কীভাবে অংশ নেওয়া যায় তার ধারণা নেই, বা হয়তো এইসব আলাপকে অপ্রাসঙ্গিকও ভাবতে পারেন অনেকে। যাদের অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার ধারণা কম, তাদের ক্ষেত্রে এই রিকনসিলিয়েশনের বিষয়টি বোঝা আরো কষ্টকর বলে মত প্রকাশ করেন FECCA-এর CEO মোহাম্মদ আল খাফাজী।
অভিবাসীদের সুবিধার্থে FECCA বা Federation of Ethnic Communities’ Councils of Australia একটি গাইড বই প্রকাশ করেছিল যার নাম Encouraging Engagement as part of NRW 2020.
ভিক্টোরিয়ার জিলং এ অবস্থিত ডাইভার্সিটাট বয়স্ক সেবা কেন্দ্রের কথা FECCA’র এনগেজমেন্ট গাইড বইতে পাওয়া যায়।
সেখানকার কারেন ও কারেনি কমিউনিটির সাথে জিলং অঞ্চলের আদিবাসী ওয়া থ রং জনগোষ্ঠী মেলবন্ধন ঘটান ডাইভার্সিটাট এর জেনারেল ম্যানেজার রবিন মার্টিনেজ।
ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সমন্বয়ে একটি জলাধার স্থাপনা নির্মাণের কথা জানা যায় সেই বইয়ে।
এছাড়াও ডাইভার্সিটাটের আরো বিভিন্ন থিয়েটার ও ফিল্ম প্রজেক্ট রয়েছে যেখানে সাংস্কৃতিক ও লৈঙ্গিক বৈচিত্রের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা একসাথে কাজ করছেন।
রবিন মার্টিনেজ বলেন, যে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা একই রকমের সমস্যার মুখোমুখি হন।
এ ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় পারস্পরিক বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব ও স্বাস্থ্য উন্নত হয় বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ান মূল্যবোধকে ভিন্ন আঙ্গিকে বুঝতে ও জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে FECCA-এর গাইডটি কাজে আসতে পারে।
জাতীয় রিকনসিলিয়েশন সপ্তাহের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়াটাও কঠিন কিছু নয়, বলেছেন কারেন মেন্ডিন। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে বা ইমেইল যোগাযোগের এ সম্পর্কিত গ্রাফিক্স, যেমন, ছবি ইত্যাদি যোগ করেও রিকনসিলিয়েশনে অংশ নেওয়া যায়।
‘More than a word. Reconciliation takes action’- এই থিমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সব অস্ট্রেলিয়ান একাত্ম হতে পারি, নতুন এক আলাপের সূচনা করতে পারি। আমরা সবাই কোন কোন ভূমিকা পালন করতে পারি। কারেন মান্ডিন এই আহ্বানই জানালেন আমাদের সবাইকে — সবার সাহসী ভূমিকা ও কার্যকর অংশগ্রহণে এ বছরের রিকনসিলিয়েশন সপ্তাহ সফল হোক।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।