কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলো উপেক্ষা করেই অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শহরগুলোতে বর্ণবাদ বিরোধী সমাবেশে যোগ দেন অসংখ্য মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় তিন জন পুলিশ কর্মকর্তা আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে চেপে ধরেন। এতে তার মৃত্যু হলে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন সিডনিসহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানের প্রতিবাদকারীরা।
তেমনি একজন প্রতিবাদকারী ল্যাটোনা ডুঙ্গয়ে। তার ছেলে ডেভিড ডুঙ্গয়ে জুনিয়র সিডনির লং বে জেলখানায় মারা যান ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। ডায়াবেটিসের কারণে এক প্যাকেট বিস্কুট খাচ্ছিলেন তিনি। তাকে খাওয়া বন্ধ করতে বলা হয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে পাঁচ জন প্রিজন অফিসার তার কারা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে ও তাকে চেপে ধরে। এর ফলে তার মৃত্যু ঘটে।
এখন সিডনিতে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীকে দেখে তার মা ল্যাটানো ডুঙ্গয়ে খুশি হয়েছেন।
বিক্ষোভের মাত্র ১৫ মিনিট আগে এর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় আদালত। কোর্ট অফ অ্যাপিল রায় দেয় যে, এই র্যালি আইনত বৈধ।
এর মানে হলো, প্রতিবাদকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে পারবেন। বড় সমাবেশে অংশ নেওয়ার ফলে কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের জন্য তারা ফৌজদারি অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
পরিবারের সদস্য কিয়া এবং অলিভিয়া প্যাটেন বলেন, এতে অংশ নেওয়াটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এদিকে, মেলবোর্নে সঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
১৯৯১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে ৪৩৪ জন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে কয়েক মুহূর্ত নীরবতা পালন করা হয়।
পুলিশি হেফাজতে আদিবাসীদের মৃত্যু নিয়ে ‘অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল কমিশন ইনটু অ্যাবোরিজিনাল ডেথস ইন কাস্টোডি’ ১৯৯১ সালে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। এতে বিগত ১০ বছরের রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়েছিল।
তাদের সুপারিশগুলো থেকে মাত্র তিন ভাগের দুই ভাগ সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়।
সেই ১৯৯১ সাল থেকে আদিবাসীদের কারাবরোধের হার ১৪ শতাংশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২৭ শতাংশে পৌঁছায়।
Wurundjeri [[Wer-run-ger-ee]]-Yorta Yorta গোত্রের জেইমি জনসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদেরকে বহুল-সংখ্যায় জেলে থাকতে দেখার বিষয়টি অত্যন্ত পীড়াদায়ক।
ভিক্টোরিয়া পুলিশ বলেছে, শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। আর, গণ-জমায়েত করে কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলো লঙ্ঘন করার দায়ে প্রত্যেক আয়োজককে ১,৬৫২ ডলার করে জরিমানা করা হবে।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়, পুলিশ কমিশনার গ্রান্ট স্টিভেন্স “শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে” প্রতিবাদ-কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিতে সম্মত হন।
সাউথ অস্ট্রেলিয়া পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পিটার হার্ভে বলেন, প্রতিবাদকারীদের আচরণে তিনি সন্তুষ্ট।
ব্রিসবেনে কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা অনুসারে পাবলিক স্পেসে ২০ জন পর্যন্ত জমায়েত করার অনুমতি থাকলেও, হাজার হাজার প্রতিবাদকারী কিং জর্জ স্কোয়ারে সমবেত হন।
২০০৪ সালে কুইন্সল্যান্ডে পুলিশি হেফাজতে একজন আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানের মৃত্যু হয়। এর পর সেখানে দাঙ্গা বেধে যায়। প্রতিবাদকারীরা এখন তার নাম উল্লেখ করে স্লোগান দেন।
ডারউইন এবং হোবার্টেও প্রতিবাদ-মিছিল হয়েছে। মিছিল হয়েছে অন্যান্য রিজিওনাল টাউনগুলোতেও। যেমন, নিউ সাউথ ওয়েলসের Wyong এবং Vyron Bay তে এবং ভিক্টোরিয়ার Mildura তে।
আপনার ভাষায় করোনাভাইরাসের আপডেট পেতে sbs.com.au/coronavirus ভিজিট করুন।