অস্ট্রেলিয়া এওয়ার্ডসের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই দলে আছেন পল্লব চাকমা, লেলুং খুমি, সোহেল চন্দ্র হাজাং এবং জ্যানেট ভানপার নাকো। বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য তারা সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন ও পদক্ষেপ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অস্ট্রেলিয়া এওয়ার্ডসের সহায়তায় বাস্তবায়ন করেছেন।
অস্ট্রেলিয়া এওয়ার্ডসের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পল্লব চাকমা Source: Pallab Chakma/Facebook
এই প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে বাংলাদেশের বান্দরবানের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির জন্য পরিবেশগত হুমকি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির সমাধানের সন্ধান করা।
এই প্রকল্পের অন্যতম সদস্য পল্লব চাকমা এসবিএস বাংলাকে জানান, "অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ডস তাদের এলামনাই মেম্বারদের সুযোগ দেয়ার জন্য কিছু কিছু প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই প্রকল্পের আওতায় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে 'অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধের' একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়া এওয়ার্ডস সেই প্রকল্পে আমাদের সহায়তা করে।""আমরা কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে এবং স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি কিছু লোভী মানুষ কিছু টাকার লোভে পার্বত্য অঞ্চলের ঝিরি, ঝর্ণাসহ পানির উৎসগুলো হতে ব্যাপকভাবে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছিলো এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করছিলো।"
বাংলাদেশের বান্দরবানে অবৈধ পাথর উত্তোলন Source: Supplied
এতে স্থানীয় মানুষরা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এর উত্তরে মিঃ পল্লব জানান, "এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো, এতে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে যা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সুপেয় পানির একমাত্র উৎস। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এই প্রাকৃতিক উৎসগুলো যাতে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে তার জন্য কাজ করা।"
তিনি জানান, বিগত প্রায় সাত-আট বছর ধরে স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে তারা এই অবৈধ পাথর উত্তোলনের কথা জানতে পারেন। তবে গত দু-তিন বছর ধরে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা , আলীকদম।
"মূলতঃ কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা অর্থ লোভী ব্যক্তিরা স্থানীয় কিছু নেতৃবৃন্দের সহায়তায় এই কাজগুলো করছে। তারা দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশগত হুমকির বিষয়টি বিবেচনা করছে না।"তারা কিভাবে এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিলেন এর উত্তরে তিনি বলেন, "এই প্রকল্পের অধীনে আমরা স্থানীয় জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করেছি, ভুক্তভোগী মানুষদের কথাগুলো আমরা তাদের অবহিত করেছি। তাছাড়া পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মানব বন্ধন করেছি, স্থানীয় সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি।"
পার্বত্য অঞ্চলের ঝিরি, ঝর্ণাসহ পানির উৎসগুলো হতে ব্যাপকভাবে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলছে Source: Supplied
"কিন্তু এরপরেও কাজ হচ্ছিল না, এরপর আমরা স্থানীয় ভুক্তভোগীদের নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশবাদী গ্রুপগুলোর শরণাপন্ন হই। তারপর আমরা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি এবং হাইকোর্ট সাঙ্গু-মাতামুহুরী রিজার্ভ এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নর্দেশনা দেন।"
তিনি জানান, "কিন্তু আমরা দেখেছি এর পরেও পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়নি, তাই আমাদের লড়াই এখনো চলছে।"
একাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি পেয়েছেন উল্লেখ করে মিঃ পল্লব বলেন, তারা শুধু আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা বিবেচনা করেই এটা করছেন না, পরিবেশের ভারসাম্য এবং জীব-বৈচিত্র রক্ষায় বাংলাদেশের বৃহত্তর কমিউনিটির স্বার্থেই তাদের সংগ্রাম।
পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটি ক্লিক করুন