কার্বন নিঃসরণ কমাতে অচিরেই দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে না অস্ট্রেলিয়া।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুটেরেস জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন,
“এটা এমনই একটি দৌঁড় প্রতিযোগিতা যেখানে আমরা হারছি।” কার্বন নিঃসরণ কমাতে তিনি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে গত সোমবার তিনি বলেন,
“এটি জলবায়ু নিয়ে কোনো শীর্ষ বৈঠক নয়। আমরা যথেষ্ট কথা বলেছি।”
“জলবায়ু নিয়ে দর কষাকষির কোনো শীর্ষ বৈঠক নয় এটি। আপনি প্রকৃতির সঙ্গে দর কষতে পারেন না। এটি একটি জলবায়ু বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণের শীর্ষ বৈঠক।”প্রায় ৭০টি দেশ, প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর পাঁচ ভাগের দু’ভাগ দেশ, ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ।
UN Secretary-General Antonio Guterres addresses the Climate Action Summit. Source: AAP
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বণ নিঃসরণ ২০০৫ সালের লেভেল থেকে ২৬-২৮ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে অনড় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
নিউ ইয়র্কে জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে শিকাগোতে তিনি বৈদেশিক নীতি নিয়ে একটি বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি রিপোর্টারদেরকে বলেন,
“অস্ট্রেলিয়ার জনগণের প্রতি আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদেরকে এর আগে যা বলেছি, ২০৩০ সাল নাগাদ ২৬ শতাংশ কমানোর কথা, সেটাই আমরা অর্জন করবো।”
জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন ফরেন মিনিস্টার ম্যারিস পেইন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুটেরেসের আহ্বানের জবাবে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিস্টার মরিসন বলেন, “এই অবস্থায় নয়।”
কোয়ালিশন সরকারের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি একটি বিতর্কিত বিষয়। বছর খানেক আগে লিবারাল দলে ম্যালকম টার্নবুলের নেতৃত্ব হারানোর পেছনে এই বিষয়টিও নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
শক্তিশালী ‘’র স্থলে মিস্টার মরিসন নজর দিচ্ছেন পরিবেশ বিষয়ক বাস্তবসম্মত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি। যেমন, প্লাস্টিক বর্জ্য এবং সমুদ্র পরিষ্কার করার প্রতি।
তিনি বলেন,
“বুধবার যখন আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ন্যাশনাল স্টেটমেন্ট প্রদান করবো তখন আমি বৈশ্বিক পরিবেশ-বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়ার উপর বেশি মনোযোগ দিব।”
“প্লাস্টিক নিয়ে, সাগর-মহাসাগর নিয়ে এবং রি-সাইক্লিং নিয়ে।”
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক পরিবেশ বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার ক্ষেত্রে চীনকে এখন থেকে ‘উন্নয়নশীল’ অর্থনীতির পরিবর্তে ‘উন্নত’ অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
রিপোর্টারদেরকে তিনি বলেন,
“২০৩০ সাল নাগাদ সম্ভাব্য নিঃসরণের প্রতি যদি তাকান, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে অস্ট্রেলিয়া তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে। আপনি দেখবেন যুক্তরাষ্ট্র … তাদের নিঃসরণও একই রকম হচ্ছে।”
“কিন্তু, নিঃসরণ সত্যিকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সমস্ত দেশগুলোতে যার মধ্যে চীনও রয়েছে।”
“আর লক্ষ্য যদি হয় নিঃসরণ কমানো তাহলে আপনাকে অবধারিতভাবেই নজর দিতে হবে সে সব স্থানে যেখানে সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ ঘটছে।”
গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ার নিঃসরণ বেড়েছে। এর বিপরীতে, আমেরিকার নিঃসরণ গত এক দশকে কমছে।এদিকে, গ্রেটা থানবার্গ বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে একহাত নিয়েছেন।
Environmental activist Greta Thunberg, of Sweden, addresses the Climate Action Summit in the United Nations General Assembly Source: AAP
তিনি বলেন,
“আপনারা আমার স্বপ্নগুলো চুরি করেছেন, শূন্যগর্ভ কথা দিয়ে আমার শৈশব চুরি করেছেন। আপনারা যদি আমাদেরকে ব্যর্থ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আমি বলি, আমরা আপনাদেরকে কখনই ক্ষমা করবো না।”
“জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। পুরো ইকো-সিস্টেম ভেঙে পড়ছে। একটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের দোর-গোড়ায় আমরা। আর আপনারা সবাই যা নিয়ে কথা বলতে পারেন তা হলো অর্থ এবং চিরন্তন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নানা রূপকথা।”