NAIDOC সপ্তাহ ২০২২: ভয়েস টু পার্লামেন্ট কী ও কেন?

Participants at a NAIDOC Week rally in Melbourne in 2018

The Uluru Statement from the Heart proposes three key reforms: Voice, Treaty and Truth. Source: AAP Image/Daniel Pockett

সম্প্রতি ইন্ডিজেনাস ভয়েস টু পার্লামেন্ট বা সংসদে আদিবাসী কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে অস্ট্রেলীয় সংবিধান সংশোধনের জন্যে একটি গণভোটের প্রস্তাব নতুন করে গতি পাচ্ছে।


ভয়েস টু পার্লামেন্ট কী?

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট নেশানস পিপলের একটি প্রতিনিধি দল উলুরুতে সমবেত হয় এবং অস্ট্রেলিয়ার জনগণের উদ্দেশ্যে  নামের বিবৃতি উপস্থাপন করে।

এই উলুরু বিবৃতিতে সংস্কার বিষয়ক তিনটি মৌলিক উপাদান প্রস্তাব করা হয়েছে: ভয়েস বা কণ্ঠস্বর, মাকারাটা (এটি  -র জন্য একটি ইয়লঙ্গু শব্দ) এবং  বা 


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:

  • ভয়েস টু পার্লামেন্ট হল সংসদে একটি আদিবাসী উপদেষ্টা পরিষদ প্রতিষ্ঠার দাবি যেটি ফার্স্ট নেশানস পিপলদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে ফেডারেল পার্লামেন্টকে দিকনির্দেশনা দিবে।
  • উলুরু বিবৃতিতে মূলত তিনটি সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে, যার প্রথমটি হচ্ছে ভয়েস টু পার্লামেন্ট।
  • উলুরু বিবৃতির রচয়িতারা গণভোটের সম্ভাব্য তারিখ হিসাবে ২০২৩ সালের মে মাস বা ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের কথা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রথম সংস্কারটি হল ভয়েস টু পার্লামেন্ট, তবে এই সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

এর মানে হল, সংস্কারটির জন্য একটি গণভোটের প্রয়োজন হবে, যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রস্তাবটি অস্ট্রেলিয়ার জনগণের সামনে উপস্থাপন করা যায়।

এই সংস্কার অস্ট্রেলিয়ার আইনী ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং ফার্স্ট নেশানস পিপলদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করা অস্ট্রেলিয়ান জনগণের কয়েক দশক ব্যাপী কার্যক্রমের সংমিশ্রণ।

অস্ট্রেলীয়দের কাছে এর অর্থ কী?

এই গণভোটের মাধ্যমে অস্ট্রেলীয় জনগণ একটি নতুন বিধান অনুমোদন করতে পারবে যা ফেডারেল পার্লামেন্টকে একটি উপদেষ্টা পরিষদ তৈরি করার ক্ষমতা দিবে। এই উপদেষ্টা পরিষদ ভয়েস টু পার্লামেন্ট নামে পরিচিত হবে।

১৯০১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে কার্যকর হওয়া অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান অ্যাবঅরিজিনাল বা টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার পিপলদের তাদের ভূমির মালিক ও রক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

সহজভাবে বলতে গেলে, ভয়েস টু পার্লামেন্ট ৬০ হাজার বছর ধরে এই মহাদেশে বসবাসকারী এই অতি প্রাচীন জনপদের স্বীকৃতি, এবং অস্ট্রেলীয় সংবিধানের মাধ্যমে এই গণতন্ত্রে তাদের কণ্ঠস্বর এবং ভূমিকার নিশ্চয়তা বিধান করবে।

নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী এবং উলুরু ডায়ালগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মেগান জেন ডেভিস বলেন, একই সাথে এটি অস্ট্রেলিয়ান জনগণ এবং মহাদেশকে "জাতির পরিপূর্ণ অভিব্যক্তি" হিসাবে স্বীকৃতি দিতে সমর্থ হবে, যা দেশটিকে তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো "সামনে এগিয়ে যেতে" সক্ষম করবে।

তিনি বলেন, "এটি বেশ কয়েকটি সংস্কার-প্রস্তাবের একটি অংশ, উলুরু বিবৃতিতে আমাদের জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে যার মধ্যে আরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি মাকারাটা কমিশন, যেটি হচ্ছে মূলত একটি চুক্তি প্রণয়ন বা সমঝোতা কমিশন।“

তিনি বলেন, “ফার্স্ট নেশানস ভয়েসকে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ হচ্ছে যখন আমাদের জীবনধারা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হবে, তখন সেই আলোচনার টেবিলে আমাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।“

এখন যে পর্যায়ে রয়েছে

প্রধানমন্ত্রী  নির্বাচনী রাতে তাঁর বিজয় ভাষণ শুরু করেন এই বলে যে, "অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির পক্ষ থেকে, আমি সম্পূর্ণরূপে উলুরু বিবৃতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।“

অধ্যাপক ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি একটি স্বস্তিকর ও অর্জনের অনুভূতি, তবে এখনও আমাদের অনেক কাজ বাকি।“

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা আনন্দিত, অস্ট্রেলিয়া খুব কমই তার সংবিধান পরিবর্তন করে। এবং আমাদের জনগণের ক্ষেত্রে বলা যায়, আমরা কখনও কোনো ধরণের সাংবিধানিক ক্ষমতার সুযোগ পাইনি। সুতরাং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৬৭ সালের গণভোটের চেয়ে এটি আলাদা, কারণ এই সংস্কার আমাদের জনগণকে আরও শক্তিশালী করবে।"

উলুরু ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এখন একটি গণভোটের প্রতিশ্রুতি সামনে রয়েছে, যা উলুরু বিবৃতির প্রথম শর্ত। নতুন ফেডারেল সরকার এখন এর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।

পরবর্তী ধাপ

সংবিধানে আদিবাসী কণ্ঠস্বর সন্নিবেশিত করার আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে।

সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত হওয়ায়, ভয়েস বা কণ্ঠস্বরটি রাজনৈতিক সময়সীমার উপর নির্ভরশীল হবে না।

এর মানে হল যে, আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন এবং জাতির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ক্ষমতায় কোন রাজনৈতিক দল রয়েছে তার উপর নির্ভরশীল হবে না।

পূর্ববর্তী কোয়ালিশন সরকার ভয়েসকে আইনী বৈধতা দিতে চেয়েছিল, তবে এটিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কোনও পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু শুধু আইন প্রণয়ন করার মানে হল চাইলে ভবিষ্যতে এটিকে বাতিলও করা যেতে পারে।

কিন্তু একবার এটিকে সংবিধানে স্থান দেয়া হলে কেবল আরেকটি গণভোটের মাধ্যমেই একে সরানো সম্ভবপর হবে।

এবং তার জন্য যে কোনও ভোটগ্রহণের আগে প্রচুর রাজনৈতিক সমর্থন এবং আরও আলোচনা ও পরামর্শের প্রয়োজন হবে।

ফেডারেল পার্লামেন্ট যদি বিলটি পাস করে, তবে সংসদের জন্য একটি স্থায়ী আদিবাসী উপদেষ্টা পরিষদ তৈরি করতে ছয় মাসের মধ্যে একটি গণভোট আয়োজনের প্রয়োজন হবে।

উলুরু স্টেটমেন্টের রচয়িতারা গণভোট আয়োজনের  হিসাবে ২০২৩ সালের মে মাস বা ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের কথা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন। 


প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন । 

Share