গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- টোঙ্গার হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের বিস্ফোরণের শক্তি ছিল অপ্রত্যাশিত
- টোঙ্গা বহুল কথিত প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত যেখানে ম্যাগমা উৎপাদনের হার খুব বেশি
- এই ঘটনা আরও ঘটতে পারে, সুনামির আশংকা চলতে থাকতে পারে
প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে ঘটে যাওয়া শনিবার ১৫ জানুয়ারীর দিনটি সহজে ভুলবার নয়।
টোঙ্গার হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ আলাস্কা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও শোনা গেছে।
শক ওয়েভটি বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা রেকর্ড করেছিল - এটি প্রশান্ত মহাসাগর এবং মার্কিন মূল ভূখণ্ড জুড়ে পরিভ্রমণ করার পরে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে সনাক্ত করা হয়েছিল।
এটি একই জায়গায় আবার রেকর্ড করার পরপরই - তরঙ্গটি আবার এশিয়া, আফ্রিকা এবং আটলান্টিক হয়ে বিশ্বজুড়ে অন্য পথে পরিভ্রমণ করেছে।
এবং তারপর আবার সনাক্ত করা হয়েছিল যখন এটি সারা বিশ্বে পরিভ্রমণ করেছিল।
নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্প কমিশনের ভলকানোলজিস্ট এবং চিফ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ অফিসার ডঃ জো হরকস রেডিও নিউজিল্যান্ডকে বলেছেন যে বিস্ফোরণের শক্তি ছিল অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন,"টোঙ্গার অগ্ন্যুৎপাতটি বেশ আশ্চর্যজনক - আমরা টোঙ্গা সম্পর্কে জানি, সেখানে আগ্নেয়গিরি আছে। তবে সুনামির ব্যাপক প্রভাব এবং আমরা যে চাপ তরঙ্গ দেখছি, তাতে আমি অবশ্যই বিশেষভাবে অবাক হয়েছি।"
বিস্ফোরণ থেকে সুনামি মহাসাগর অতিক্রম করে পেরুতে ট্যাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে এবং একই সাথে জাপান এবং নিউজিল্যান্ডের উপকূল এবং এমনকি আমেরিকার পশ্চিম উপকূলও এর প্রভাব অনুভব করে।
টোঙ্গার রাজধানী নুকু'আলোফা থেকে মাত্র ৬৪ কিলোমিটার উত্তরে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ থেকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
প্রশ্ন উঠেছে এত বড় বিস্ফোরণ কেন হলো?
শেন ক্রোনিন, যিনি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকানোলজির অধ্যাপক, তিনি বলছেন টোঙ্গা বহুল কথিত প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত যেখানে ম্যাগমা উৎপাদনের হার খুব বেশি।
তিনি বলেন,"টোঙ্গা আসলে পৃথিবীর এমন একটি স্থান যেখানে সাবডাকশনের হার বেশি, অর্থাৎ সেখানে টেকটোনিক প্লেটগুলোর একটি অন্যটির নীচে স্লাইড করার হারটি অবিশ্বাস্যভাবে বেশি। দুটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ভূত্বক বেশ পাতলা এবং স্লাইডিংয়ের সময় সেখানে এমন পদার্থের খুব বেশি থাকে যা গলতে শুরু করে, প্লেট থেকে শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থগুলো নীচে চলে যায় এবং পাথর গলিয়ে দেয়।"
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক ডেভিড ট্যাপিন বলেছেন যে এ এলাকায় অনেক আগ্নেয়গিরির সংখ্যার অর্থ হল এখানে প্রচুর ভূমিকম্প হয় যা সবসময় শিলা এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নীচের পৃষ্ঠকে স্থানচ্যুত করছে।
অধ্যাপক ক্রোনিন ব্যাখ্যা করেছেন যে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই-এ বিস্ফোরণ গত বিশ বছর ধরে গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন,"দীর্ঘদিন ধরে এর ভিতরে ম্যাগমা বা গরম পদার্থ তৈরি হচ্ছে, এবং এটি ধীরে ধীরে গ্যাস নির্গত করছে। কিন্তু যখন সমুদ্রের পানি নিচে নেমে যাচ্ছে এবং নীচে গরম ম্যাগমার উপরে অবস্থান করে, তাতে গ্যাস এবং প্রেসার আটকে থাকে। কিন্তু ম্যাগমা তখনও তৈরী হতে থাকে এবং প্রেসার বাড়তে থাকে এবং এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখানে পুরো জায়গাটি আর এটিকে ধারণ করতে পারে না। তারপরে সেই রাসায়নিক পদার্থগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং এটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে।"
তিনি বলছেন প্রাথমিক বিস্ফোরণটি আসলে বিস্ময়কর ঘটনার অর্ধেক মাত্র।
তিনি বলেন, হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই-এর অবস্থা ছিল অনন্য ঘটনা, বিস্ফোরণের পর শক্তিশালী শক ওয়েভ তৈরি করেছিল।
প্রফেসর রিচার্ড আর্কুলাস অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ আর্থ সায়েন্সে কর্মরত।
তিনি বলেন, হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা-হাপাই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা অনেক বছর ধরে রিং অফ ফায়ার বরাবর সবচেয়ে বিস্ফোরক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। এবং সম্ভবত বিশ্বের শীর্ষ দশের একটি। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া এবং ১৯৯১ সালে মাউন্ট পিনাতুবোর অগ্ন্যুৎপাতও এমনি বিশাল ছিল।
পরবর্তীতে কী ঘটবে - এ বিষয়ে তিনি এবিসিকে বলছিলেন যে,এর আগের পর্যবেক্ষণগুলি থেকে দেখা যায় যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।
তিনি বলেন, "এই ঘটনা আরও ঘটতে পারে, সুনামির আশংকা চলতে থাকতে পারে।"
টোঙ্গা সরকারের এক বিবৃতিতে এই অগ্নুৎপাতকে "অভূতপূর্ব বিপর্যয়" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:
আরও দেখুন: