২০২১ সালের মহাকাশ অনুসন্ধান ফিরে দেখা এবং ২০২২ সালের ভবিষ্যত মিশনে যা থাকছে

Spectators are seen at the unveiling of the Orion Space Craft.

Spectators are seen at the unveiling of the Orion Space Craft. Source: Getty

মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ২০২১ ছিল একটি বড় বছর, যার মধ্যে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ এবং বিলিয়নেয়ার জেফ বেজোস এবং রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ যাত্রার মত ঘটনাগুলোও ছিল। এই ধারা ২০২২ সালেও অব্যাহত থাকবে, কারণ এ বছর মঙ্গল গ্রহে আরেকটি মিশন এবং সেইসাথে মহাকাশ পর্যটন আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

  • ২০২১ সালে দুটি রোভার মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছে - একটি নাসার গাড়ির আকারের পারসেভেয়ারেন্স এবং অপরটি চীনের ঝুরং
  • চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্পটি আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা
  • ২০২২ সালে একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছে - এর মাধ্যমে মহাকাশচারী নন এমন লোকদের অর্থের বিনিময়ে মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা ও প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ২০২১ ছিল একটি বড় বছর, তবে এই ধারা ২০২২ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও স্পেস এজেন্সি নাসা নভেম্বরে মহাকাশচারীদের চন্দ্রাভিযানে নিতে বিলম্ব করেছে এবং যা হতে পারে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে, তথাপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাকাশ সংস্থা এখনও তাদের মুন রকেটে প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের জন্য ২০২২ সালের প্রথমার্ধকেই লক্ষ্য করে চলেছে, যা পরিচালিত হবে একটি ওরায়ন ক্যাপসুল দিয়ে এবং এটিকে বলা হচ্ছে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম বা এসএলএস।

এসময়ে ভেতরে কেউ থাকবে না।

তবে এটিই ২০২২ সালে একমাত্র চন্দ্র-মুখী মহাকাশযান হবে না, জাপান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ চাঁদে রোভার এবং ল্যান্ডার পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ।

মার্সিয়া ডান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের কেপ ক্যানাভেরাল সংবাদদাতা।

তিনি বলছেন "এখন চাঁদে অভিযান নিয়ে আজকাল অনেকের আগ্রহ কারণ নাসা, অবশ্যই তার অংশীদারদের সাথে, সম্ভবত ২০২৫ বা ২০২৬-এর প্রথম দিকে মহাকাশচারীদের চাঁদে ফেরত পাঠানোর আশা করছে। কিন্তু তার আগে বিভিন্ন রোবট পাঠানো হবে স্থানটি যাচাই করার জন্য, সেখানে ভবিষ্যতে একদিন বসবাসে প্রত্যাশী মহাকাশচারীদের জন্য কী আছে সে সম্পর্কে আরও জানতে।"

এছাড়াও ২০২১ সালে দুটি রোভার মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছে - একটি নাসার গাড়ির আকারের পারসেভেয়ারেন্স এবং চীনের ঝুরং।

Scientists are preparing to bring back the first rock samples from Mars, after they were obtained by the Perseverance Rover last month
Scientists are preparing to bring back the first rock samples from Mars, after they were obtained by the Perseverance Rover last month Source: NASA/ESA/JPL-Caltech/Cover-Image


কিন্তু সেখানে তৃতীয় আরো একটি হওয়ার কথা ছিল - ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এবং রাশিয়ার রোসকসমস বলেছে যে তারা ২০২২ সাল পর্যন্ত মঙ্গলে একটি পরিকল্পিত যৌথ অভিযান স্থগিত করছে।

মিশনের লক্ষ্য হল লাল গ্রহ মঙ্গলে কখনও প্রাণ ছিলো কিনা তা নির্ধারণ করতে একটি রোভার স্থাপন করা।

রোভারটি উচ্চ-প্রযুক্তি যন্ত্রে পরিপূর্ণ এবং ব্রিটিশ রসায়নবিদ রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে রোভারটি মঙ্গল পৃষ্ঠের নীচে জীবনের জৈবিক অস্তিত্ব খুঁড়ে বের করতে সক্ষম হবে এবং গ্রহটিতে জলের অস্তিত্ব ছিল কিনা, সে সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে সক্ষম হবে।

মিজ ডান বলছেন যে ২০২০ সালে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোভারগুলির সফল উৎক্ষেপণের ধারাবাহিকতায় এটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হতে চলেছে।

তিনি বলেন, "২০২০ সালে নাসা এবং চীন মঙ্গল গ্রহে রোভার চালু করেছিল। উভয়ই সফল হয়েছিল। এখন, সেই বছরই এক্সোমার্স মিশন নামে একটি তৃতীয় মিশন হওয়ার কথা ছিল, যা ইউরোপ এবং রাশিয়ার একটি যৌথ উদ্যোগ। কিন্তু তারা ২০২০ সালে ওড়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ২০২২ সালের জন্য ইউরোপীয় মঙ্গল গ্রহে মিশনের জন্য রাশিয়ান উৎক্ষেপণের জন্য সবকিছুই ভালো অবস্থায় আছে, এবং তারা সফলভাবে মঙ্গলে একটি মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা করেছে। তারা চেষ্টা করছে মঙ্গল গ্রহে একটি রোভার স্থাপন করতে।"

SpaceX Falcon-9 Rocket And Crew Dragon Capsule Launches From Cape Canaveral Sending Astronauts To The International Space Station
SpaceX Falcon-9 Rocket And Crew Dragon Capsule Launches From Cape Canaveral Sending Astronauts To The International Space Station Source: Getty Images North America


চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে যে চীন ২০২০ সালের তিয়ানওয়েন-১ মহাকাশ অনুসন্ধান মিশনের সফল উৎক্ষেপণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে একটি গ্রহাণুর পাশাপাশি অন্যান্য গ্রহগুলি অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা করছে।

চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপ-পরিচালক উ ইয়ানহুয়া বলছেন গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্পটি আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

এছাড়াও মিঃ উ বলছেন যে চীন এখনও তার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কৌশল যেমন সৌরজগতের প্রান্তে অনুসন্ধানের মূল্যায়ন করছে।

তিয়ানওয়েন-১ হল মঙ্গলে একটি রোবোটিক মহাকাশযান পাঠানোর জন্য চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি আন্তঃগ্রহের মিশন, যার মধ্যে ৫টি অংশ রয়েছে: একটি অরবিটার, স্থাপনযোগ্য ক্যামেরা, ল্যান্ডার, ড্রপ ক্যামেরা এবং ঝুরং রোভার।

এই মহাকাশযানটির মোট ভর প্রায় পাঁচ টন, যা মঙ্গল গ্রহে পাঠানো সবচেয়ে ভারী প্রোবগুলির মধ্যে একটি এবং এটি ১৩টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করে৷

এটি চীনের প্ল্যানেটারি এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গৃহীত পরিকল্পিত মিশনের সিরিজের মধ্যে প্রথম।

১৪ মে, ২০২১-এ, ওই মিশনের ল্যান্ডার/রোভার অংশটি সফলভাবে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করে, যা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে যোগাযোগ স্থাপনকারী তৃতীয় দেশ হিসেবে চীনকে পরিচয় করিয়ে দেয়।

মিঃ উ বলেন, চীন আশা করছে মঙ্গল গ্রহের বাইরেও তার অনুসন্ধান প্রসারিত করবে।

তিনি বলেন,"উদাহরণস্বরূপ, আমাদের কি সৌরজগতের প্রান্ত অন্বেষণ করতে হবে কিনা? সৌরজগতে আটটি গ্রহ রয়েছে, তাই আমরা কেবল আমাদের মিশনগুলির পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। চীনের প্রতিটি মিশনের নতুন লক্ষ্য থাকে এবং তা নতুন অর্থ বহন করে এবং নতুন বড় কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের গভীর-মহাকাশ মিশনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানীদের সাথে সহযোগিতাকে স্বাগত জানাই যার মধ্যে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ অনুসন্ধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।"

সত্যিকার অর্থে ২০২১ সালকে মহাকাশ পর্যটন শুরু করার বছর হিসাবেও স্মরণ করা যেতে পারে।

The Blue Origin flight (20 July 2021) into space. Amazon founder Jeff Bezos was accompanied on the Blue Origin journey by his brother, Mark Bezos, as well as the oldest and youngest people ever to go to space, Wally Funk, 82 years old, and Oliver Daemon,
The Blue Origin flight (20 July 2021) into space. Amazon founder Jeff Bezos was accompanied on the Blue Origin journey by his brother, Mark Bezos, as well as th Source: AAP Image/Blue Origin/Cover-Images.com


সেখানে জেফ বেজোস এবং রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো ধনীদের অংশগ্রহণও ছিল এবং স্পেসএক্স চারজন সৌখিন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি ব্যক্তিগত পৃথিবীব্যাপী চক্রাকার ট্রিপ চালু করেছিল৷

জাপানি ফ্যাশন টাইকুন ইউসাকু মায়েজাওয়া এবং তার প্রযোজক সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পরিদর্শন করেছেন, এটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে নিজ খরচে মহাকাশ পর্যটকদের প্রথম ভ্রমণ।

২০২২ সালের প্রথম দিকে একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছে - এর মাধ্যমে মহাকাশচারী নন এমন ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা ও প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু আরেক ধনকুবের - স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মিঃ বেজোস এবং মিঃ ব্র্যানসনকে অনুসরণ করে মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা কম।

এই বছরের শুরুর দিকে কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন যে তিনি বরং কোম্পানির ভবিষ্যত বুলেট-আকৃতির স্টারশিপের দিকে মনোনিবেশ করছেন।

স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক সম্প্রতি চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন।

চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মহাকাশচারীদের বিপদে ফেলার অভিযোগ করেছে, এই অভিযোগ তারা করে যখন ইলন মাস্কের স্পেসএক্স দ্বারা উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইটের সাথে কক্ষপথের কাছাকাছি প্রায়-সংঘর্ষ হতে চলেছিল, এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরে তারা জাতিসংঘের কাছে ওই অভিযোগ করেছিল।

Follow SBS Bangla on .


পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

আরও দেখুন:



Share