গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:
- ক্রিপ্টোকারেন্সি বাইনারি কোড- শূন্য আর এক দিয়ে তৈরি এক ধরনের ডিজিটাল টোকেন
- ক্রিপ্টোকারেন্সি কারোর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। কোন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বা সরকার অর্থাৎ কোন কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না।
- কোন কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়।
- স্ক্যামার বা প্রতারকরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার প্রলোভন দেখিয়ে লোক ঠকাতে পারে।
চলতি শতকের শূণ্য দশকের গোড়ার দিকে বিটকয়েন প্রচলনের মধ্য দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির যাত্রা শুরু হয়েছিলো। বিটকয়েনের আবিস্কর্তা কে তা আজও অজানা। ধারণা করা হয়, সাতোশি নাকামোতো নামের ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বারা বিটকয়েন আবিস্কৃত হয়েছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বলা হয় ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল অর্থ যার লেনদেন ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই ডিজিটাল টোকেন (স্মারকমুদ্রা) নিজের কাছে রাখতে পারেন বা ইচ্ছামত খরচ করতে পারেন কোন ব্যাংক বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই।
ক্রিপ্টোকারেন্সির মত ডিজিটাল মুদ্রা মূলত ক্রিপ্টোগ্রাফি বা তথ্যগুপ্তিবিদ্যা ধারণার উপর কাজ করে। এই প্রযুক্তিকে ব্লকচেইন প্রযুক্তি বলা হয়। পরস্পরের সাথে যুক্ত ব্লকে সংরক্ষিত ডাটার সাহায্যে যে কোড তৈরি হয় তা দিয়ে একেকটি ডিজিটাল মুদ্রার টোকেন তৈরি করা হয়।ফাউন্ডার ডট কম (www.finder.com.au)
The blockchain technology was invented in the 1980s and has been proven to be a very reliable method of maintaining data. Source: Getty Images
এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেড শাবেস্তা এ বিষয়ে বলেন,
ব্লকচেইন একটি উন্মুক্ত খতিয়ান যা টোকেন লেনদেনের হিসাব রাখে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি ১৯৮০’র দশকে আবিস্কৃত হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে অর্থ বিনিয়োগকারীদের কাছে এই প্রযুক্তি বেশ নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করেছিল।
যে কেউই ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করতে পারেন, তাই সাইবার দুনিয়ায় হাজারো এমন ডিজিটাল মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়; তার মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন এবং ডোগকয়েন।
ডিজিটাল মুদ্রায় বাণিজ্য আর পণ্যের বিকিকিনি করা যায়। অনলাইনে জিনিসপত্রের কেনাবেচা ছাড়াও ডিজিটাল মুদ্রাব্যবস্থায় অনেকে বিনিয়োগ করে থাকেন।
বিটকয়েন বহুল প্রচলিত ক্রিপ্টোকারেন্সি হওয়ায় তার বিনিময়ে স্বল্পখরচে এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়।
আপনি চাইলে প্রচলিত মুদ্রার বিনিময়ে ক্রিপ্টকারেন্সির টোকেন কিনতে পারেন। বাজারদর অনুযায়ী আপনার কেনা টোকেনের মূল্য বাড়তে পারে বা কমতে পারে।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন, এমনকি মিলিয়নেয়ার হয়েছেন বলে কেউ কেউ দাবী করে থাকেন।
কিন্তু আসলেই কি আপনি এই অদৃশ্য কারবারে সামান্য বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করতে পারেন?
মিস্টার শাবেস্তার মতে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন,
আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি এমন অনেককে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে মিলিয়েনেয়ার দেখেছি।
সামান্য ঝুঁকি নিয়ে সহজে মুনাফা করতে চান এমন নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। অবশ্য ক্রিপ্টোকারেন্সির সহজ বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা বেশি হতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাব্যবস্থা, অর্থাৎ বিশ্বের কেউ ক্রিপ্টকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করেনা — ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কেউই না।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে এর মুদ্রা বিনিময় এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবলমাত্র বিনিয়োগকারীরাই দায়বদ্ধ থাকেন। ঠিক এই কারণেই ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নির্ভর করা যায় না।ডেকিন ইউনিভার্সিটির হিসাববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর এডাম স্টিন বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে মানুষ যতটা মূল্যবান বলে মনে করে, তার প্রকৃত মূল্য ততটা নয়।
Source: Olya Kobruseva from Pexels
এটা কোন কাগুজে টাকা নয়, এটা কম্পিউটারের বাইনারী কোড(শুণ্য আর এক)ছাড়া আর কিছু নয়।
ডক্টর স্টিনের মতে ক্রিপ্টোকারেন্সির যাত্রা শুরু হয়েছিল এক অনন্য ও উদ্ভাবনি বিনিয়োগের উপায় হিসাবে। সেই সময়ে একটা ট্রেন্ডএর মত তা মানুষের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
As an employee in a business you shouldn't be using company computing time to earn cryptocurrency and that may lead to dismissal. Source: Getty Images
কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির কোন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ না থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী স্ক্যাম বা প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে ফেলেন।
তাছাড়া, এই মুদ্রা অদৃশ্য ও জনসাধারণের নাগালের বাইরে হওয়ায় প্রতারকরা তার সুযোগ নিয়ে থাকে। অনেকের কাছেই এই অদৃশ্য অর্থবিনিময় দুর্বোধ্য বলে প্রতারক চক্র এই দুর্বোধ্যতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে লোক ঠকিয়ে আসছে।
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় প্লাস গোল্ড ইউনিয়ন কয়েন নামের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলিত হয়েছিল। একটি চক্র তার মাধ্যমে এখানকার অভিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
প্লাস গোল্ড ইউনিয়ন কয়েন (জিপিইউ) এর হোতারা ৭ হাজার ৫০০ ডলারের একটি টোকেন কিনে প্রাথমিক বিনিয়োগের আহবান জানায়। এই পরিমান বিনিয়োগের বিনিময়ে মাত্র কয়েক বছরে ২ লক্ষ ডলার মুনাফা পাওয়ার প্রলোভন দেখায় তারা। অল্প বিনিয়োগে এই পরিমান লাভের প্রলোভনে অনেকে পা দিয়েছিল।অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে এই মুদ্রার প্রচলনকারী ও তাতে উৎসাহীদের নিয়ে বড় বড় সম্মেলন হতে দেখা যায়। উক্ত মুদ্রার প্রবর্তকেরা অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন করতে থাকে।
Even the biggest companies in Australia lose heavily to scams and schemes that look extremely legitimate but it's not. Source: Getty Images/Bill Hinton
তাদের বিপণন কৌশল সফল হয়। অচিরেই তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা মাইগ্রান্ট কমিউনিটির (প্রবাসীর) মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
তারা জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতো। অনুষ্ঠানের জৌলুশ দেখিয়ে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের কর্মকান্ডে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হতো। সেখানে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো যে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কার্যক্রমে যুক্ত না হয়ে যেন বের হতে পারতো না।জন ডো ছদ্মনামের একজন অংশগ্রহণকারীর প্লাস গোল্ড ইউনিয়ন কয়েন বিষয়ে বলেন, নিশ্চিত মুনাফা ফেরত পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিচিত একজন তাকে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার পরামর্শ দেন।
Source: Getty Images
মিস্টার ডো জানান, খুব আকর্ষণীয় বিপণন কৌশলের মাধ্যমে তাদের কাছে এই ক্রিপ্টোকারেন্সিকে তুলে ধরা হয়েছিল। এমনভাবে এই বিনিয়োগকে তুলে ধরা হয়েছিল যেন এটা একটা নিশ্চিত লাভজনক বিনিয়োগ, যা কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না।
তাদের কৌশল কাজে লেগেছিল বলে স্বীকার করে তিনি জানান, কমিউনিটির অনেকে তাদের কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিল।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই পিজিইউসি ক্রিপ্টোকারেন্সির দরপতন ঘটে এবং বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার বিষয়ে অবগত হন।
প্রায় সময়েই অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে প্রবাসে প্রতারণার শিকার হতে দেখা যায়। সারা বিশ্বে কেন অভিবাসীরাই ঠগবাজের খপ্পরে পড়েন — তা বোঝা কঠিন নয়।
ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে অভিবাসীরা সহজেই প্রতারকের শিকারে পরিণত হন।
সাধারণ মানুষ ছাড়াও বৃহৎ কোম্পানীরা ঠগবাজের পাল্লায় পড়তে পারেন যা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কিভাবে ঠগবাজদের চিহ্নিত করা যায়?
এ বিষয়ে ডক্টর স্টিন এর উপদেশ হচ্ছে — অযাচিত কারোর ইমেইল এবং তাদের বা পরিচিত কারোর বিনিয়োগ পরামর্শের জবাব না দেওয়া বা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ হয়তো আপনাদের কাজে আসতে পারে:
বিনিয়োগের জন্য আপনাদের এদেশের যোগ্যতার মাপকাঠিতে উপযুক্ত কারোর পরামর্শ নিতে পারেন — তিনি বা আপনি যে জনগোষ্ঠিরই হোন না কেন। সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায় আর্থিক পরামর্শক, আইনজীবী, এবং একাউন্ট্যান্টরা আপনাকে পেশাদারী পরামর্শ দিতে পারবেন।অল্প বিনিয়োগে বিপুল মুনাফা লাভের প্রলোভনে পা দেবেন না, হতে পারে প্রলোভনকারী একজন প্রতারক ছাড়া আর কিছু নয়।
Source: AAP
পরিশেষে এটা বলতে হয়, প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়তে না চাইলে গুজবে কান দেবেন না।
প্রতারকদের আকর্ষনীয় বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়বেন না, এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্যের জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকারের মানিস্মার্ট ওয়েবসাইট www.moneysmart.gov.au ভিজিট করুন।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপর অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।