ওমিক্রন সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.২ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

Omicron variant

Omicron varyantı ortaya çıktıktan bir ay sonra 78 ülkede tespit edilmişti. Source: Omicron variant - Getty Images

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মত অস্ট্রেলিয়ায় ওমিক্রন ঢেউয়ের পাশাপাশি একটি নতুন সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.২-এর উত্থান সম্পর্কে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

  • ওমিক্রন ভেরিয়েন্টটি বিএ.১ নামেও পরিচিত, এবং বিএ.২ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত
  • ডেনমার্ক, ভারত এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে বিএ.২ একটি আরও প্রভাবশালী রূপ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে
  • তবে বিএ.২ ভেরিয়েন্ট বিএ.১-এর মতো দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে না

বিএ.২ (BA.2) হলো ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের একটি উপ-বংশ এবং বিজ্ঞানীরা এটির ঝুঁকির মাত্রা কী তা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় নতুন ওমিক্রন সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.২-এর প্রথম কেসটি সনাক্ত করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে কুইন্সল্যান্ডে। এটিকে মূল ওমিক্রনের কোন পৃথক রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।

ওমিক্রন ভেরিয়েন্টটি বিএ.১ নামেও পরিচিত, এবং বিএ.২ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞানীরা বিএ.২-কে একটি সাব -ভেরিয়েন্ট বা উপ-বংশ বলছেন। এর অন্যান্য নামও দেয়া হয়েছে, যেমন সিস্টার-ভেরিয়েন্ট বা সন অফ ভেরিয়েন্ট।

বিএ.১(BA.1) এর প্রাথমিক কেসগুলোর প্রায় এক সপ্তাহ পরে বিএ.২-এর প্রথম নথিভুক্ত কেসটি ১৭ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সনাক্ত করা হয়েছিল। 

দশ হাজার বিজ্ঞানী গ্লোবাল ডাটাবেস গিসএইড (GISAID)-এ আপলোড করা জিনোম সিকোয়েন্স করা ডাটা পর্যালোচনা করছেন।

প্রায় রিয়েল-টাইম ডেটার বিশাল পরিমাণ বোঝার চেষ্টা করেছেন ওই বিজ্ঞানীদের একজন, যিনি নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির কির্বি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক স্টুয়ার্ট টারভিল।

তিনি বলছিলেন, আমরা জানতাম যে ওমিক্রনের একটি রূপ কমিউনিটিতে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। আমরা তখন ওই সাব-ভেরিয়েন্টটি কত দ্রুত ছড়াচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করি। তবে, এই মুহূর্তে সংখ্যাটি সত্যিই কম।

জানুয়ারির শেষের দিকে বিএ.১ বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী স্ট্রেইন হিসেবে আবির্ভুত হয় যা মোট সনাক্তের ৯৮.৮ শতাংশ।

কিন্তু ডেনমার্ক, ভারত এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে বিএ.২ আরও প্রভাবশালী রূপ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ায় বিএ.২-এর সংক্রমিত কেস ২০ থেকে ৩০টি যা সামগ্রিকভাবে দেশের মোট কোভিড কেসের মাত্র ০.৩ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা দ্য কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)-এর অধ্যাপক শেশাদ্রি ভাসান বলেছেন, মামলার প্রকৃত সংখ্যা জিআইএসএআইডি ডাটাবেসে যা আছে তার চেয়ে বেশি হতে পারে, কারণ কোভিড কেসগুলোর প্রায় ৫০টির মধ্যে ১টি কেসের একটি ভগ্নাংশ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়।

তিনি বলছেন, কেস সংখ্যাগুলি স্পষ্টতই উর্দ্ধমুখী এবং বিশ্বের ৫৫টি দেশে প্রায় ১৮,৭৫০টি বিএ.২ পাওয়া যায়, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ২২টি সিকোয়েন্স ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং ভারতে।

প্রতিটি নতুন কোভিড ভেরিয়েন্টই বেশ দ্রুত গতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে সনাক্ত আসল কোভিড ভেরিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে তিন মাস সময় লেগেছিল।

তবে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বেলায় ৭৮টি দেশে সনাক্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র এক মাস।

মহামারী গবেষক আন্তন এরকোরেকা'র মতে এটি ইতিহাসের "সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস"।

তিনি বলছেন চতুর্দশ শতাব্দীর ব্ল্যাক ডেথ এবং বিংশ শতাব্দীর কলেরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে কয়েক বছর লেগেছিল।

১৮৮৯ সালের বহুল কথিত রাশিয়ান ফ্লুও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে তিন মাস সময় লেগেছিল।

তবে বিএ.২ ভেরিয়েন্ট বিএ.১-এর মতো দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে না। ডেনমার্কের শীর্ষ সংক্রামক রোগ কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তথ্য দিয়ে বলছে বিএ.২ খুব বেশি হলে ১.৫ গুণ বেশি সংক্রমণশীল হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করছেন, বিশেষ করে এর স্পাইক প্রোটিন, সংক্রমণযোগ্যতা এবং ভ্যাকসিনগুলির সম্ভাব্য প্রতিরোধ সম্পর্কে আরও বোঝার জন্য ডাটা পর্যালোচনা করছেন।

তবে বিএ.১-এর জন্য যেখানে প্রায় ৬০টি মিউটেশন ছিল, সেখানে বিএ.২-এর বেলায় প্রায় ৮৫টি মিউটেশন হয়েছে। এটি আলফা ভেরিয়েন্টের ৩০টি এবং ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ৩৫টির তুলনায় বেশি।

বিএ.১ এবং বিএ.২-এর মধ্যে পার্থক্যগুলির একটি হল স্পাইক জিনের জেনেটিক পরিবর্তন, যার মানে এটি বিএ.১-এর মতো পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় না এবং নিশ্চিত করতে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য একটি ল্যাবে পাঠাতে হয়।

অধ্যাপক ভাসান বলছেন যে বিএ.২ রোগের তীব্রতা এবং এটি কতটা সংক্রামক এ বিষয়ে ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু প্রমাণ রয়েছে।

তিনি বলছেন, "এই বিশেষ বিএ.২ ভেরিয়েন্ট আরও সমস্যা করবে কিনা তা এখনই বলা যায় না। এই মুহুর্তে, আমরা ডেনমার্কের সহকর্মীদের কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি যে, হাসপাতালে ভর্তি বা রোগের তীব্রতার ক্ষেত্রে এটি ততটা সমস্যা করছে না। তবে এটি বিএ.১-এর তুলনায় কিছুটা বেশি সংক্রামক বলে মনে হচ্ছে।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই পর্যায়ে বিএ.২ নিজেই একটি স্বতন্ত্র ভেরিয়েন্ট না হয়ে বরং একটি সাব-ভেরিয়েন্ট হিসেবে থাকবে।

তবে এটি বিএ.১-এর মতোই উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট বলে গণ্য হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেছেন যে সংস্থাটি ক্রমাগত নতুন ভেরিয়েন্টের উত্থানের উপর নজর রাখছে।

সিএসআইআরও-এর অধ্যাপক ভাসান এবং তার দল বর্তমানে টিকাগুলো বিএ.২ কতটা প্রতিরোধ করবে তা পর্যালোচলা করছেন।

ভ্যাকসিন নির্মাতারা মিউটেশনের সাথে তাল মিলিয়ে ভ্যাকসিনগুলো আপডেট করার বিষয়টি ভালোভাবেই সাড়া দিচ্ছে।

সারা বিশ্বে ১০ বিলিয়ন কোভিড ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, সেইসাথে ফাইজার এবং মডার্না নিশ্চিত করেছে যে তারা একটি ওমিক্রন-নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করছে।

উহানে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি এবং এর রূপগুলি সম্পর্কে অনেক কিছু এখনো অজানা রয়ে গেছে।

সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডমিনিক ডোয়ার বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক দলের হয়ে কাজ করেছিলেন, তারা আরও বিস্তারিত জানতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উহান ভ্রমণ করেছিলেন।

ভ্রমণের সময় কিছু নির্দিষ্ট তথ্য তারা পাননি, যেমন প্রথম দিকের কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ।

অধ্যাপক ডোয়ার বলছেন যে ভবিষ্যতের মহামারীর জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য ভাইরাসের গল্পের সেই তথ্যগুলো উন্মোচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ভাষায় কোভিড-১৯ সম্পর্কে তথ্যের জন্য দেখুন 

Follow SBS Bangla on .


পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

আরও দেখুন:



Share