অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অফ স্টাটিস্টিক্স-এর মতে, অস্ট্রেলিয়ানদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে ডিমেনশিয়া।
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে থাকে এবং মস্তিষ্ক কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। এর কারণে বিশ্ব জুড়ে ১.৮ ট্রিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সম পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হয়ে থাকে।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ল্যানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষাতে এই প্রথম বারের মতো ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার দেশ ভিত্তিক পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ১৯৫ টি দেশের জন্য চলিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যে-সব বিষয় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, সে সম্পর্কেও বলা হয়েছে এতে।
এই সমীক্ষাটির লিড অথর, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের এমা নিকোলস বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ বয়স্ক ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৩ মিলিয়নে পৌঁছুবে।
উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে (৩৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি) এবং ইস্টার্ন সাব-সাহারান আফ্রিকায় (৩৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি)।
আর, সবচেয়ে কম বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক (৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি) এবং পশ্চিম ইওরোপে (৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি)।
এসব বৃদ্ধির পেছনের কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বার্ধক্যের কথা বলেন মিজ নিকোলস।
ডিমেনশিয়ার বৃদ্ধি কিছুটা রোধ হয়েছে পাবলিক হেলথ ক্যাম্পেইনের কারণে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিকভাবে ৬.২ মিলিয়ন কেস হ্রাস পাবে।
তবে, এই সাফল্যকে নস্যাৎ করে দিবে স্থূলতা, রক্তে উচ্চ মাত্রায় শর্করা, ধূমপান — এসবের মাধ্যমে ৬.৮ মিলিয়ন ডিমেনশিয়া কেস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও ডিমেনশিয়াতে মূলত বয়স্ক ব্যক্তিরাই আক্রান্ত হয়ে থাকে, তথাপি মানুষের জীবনযাপনের পদ্ধতিও এর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে থাকে।
২০২০ সালে একটি ল্যানসেট কমিশন পরামর্শ দেয় যে, ১২টি বিষয়ে যদি ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তাহলে ৪০ শতাংশ কেস প্রতিরোধ করা বা বিলম্বিত করা সম্ভব হবে। এই বিষয়গুলো হলো: নিম্ন শিক্ষা, উচ্চ রক্ত চাপ, শ্রবণ সমস্যা, ধূমপান, মধ্যবয়সে স্থূলতা, হতাশা, দৈহিক সক্রিয়হীনতা, ডায়াবেটিস, সামাজিক নিঃসঙ্গতা, অতিরিক্ত মদ্যপান, মাথায় আঘাত এবং বায়ূ দূষণ।
ডিমেনশিয়া অস্ট্রেলিয়া-এর অনারারি মেডিকেল অ্যাডভাইজার, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মাইকেল উডওয়ার্ড বলেন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ অস্ট্রেলিয়ায় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এক মিলিয়নে পৌঁছানোর যে পূর্বাভাস রয়েছে, সেটি প্রতিরোধ করার জন্য এক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
এই সমীক্ষাটিতে কোভিড-১৯ এর অভিঘাত আমলে নেওয়া হয় নি। কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ বেড়েছে, ফলে ডিমেনশিয়ার ডায়াগনৌসিস বা রোগ-নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে।
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর উডওয়ার্ড উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে সোশাল আইসোলেশন থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়েছে। ফলে, ডিমেনশিয়া রোগ-নির্ণয় ও এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটছে এবং এভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে ৫০০,০০০ লোকের ডিমেনশিয়া আছে। তবে এর অর্ধেকেরও কম সংখ্যকের আনুষ্ঠানিক ও যথাযথ রোগ-নির্ণয় করা হয়েছে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: