কেমন চলছে অস্ট্রেলিয়ায় বয়স্কসেবা কেন্দ্রগুলো?

Aged care

Over half of aged care residents in Australian government-funded facilities live with dementia. Source: Press Association

এজড কেয়ার রয়্যাল কমিশনে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। গতানুগতিক বয়স্ক-সেবা-কেন্দ্রগুলোতে অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরকে মানসম্মত সেবা প্রদান করা হয় না।


ব্রিসবেন-নিবাসী গ্লোরিয়া গফ বলেন, তার ৯৬ বছর বয়সী মা Suzanne Paruit-Chauvin চারটি নার্সিং হোমে ছিলেন। তার সঠিক যত্ন নেওয়া হতো না।

সিডনি ইউনিভার্সিটি এজড কেয়ার অ্যান্ড ডিমেনশিয়া বিশেষজ্ঞ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর Lee-Fay Low বলেন, গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত পর্যায়ের বয়স্ক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এজড কেয়ার রয়্যাল কমিশনে হাজার হাজার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেশিরভাগ অভিযোগকারীই এক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নের অভাবের কথা বলেন। ঘণ্টায় গড়ে ২০ থেকে ২৫ ডলার মধ্যে মজুরি পান এজড কেয়ার কর্মীরা। নার্সিং হোমে বাস করা বয়স্ক ব্যক্তিদের নানা রকম জটিল প্রয়োজন পুরণে তারা হিমশিম খান।

গ্লোরিয়া গফের মা Paruit-Chauvin মরিসাসে একসময় গায়িকা হতে চেয়েছিলেন। আরেকটি রেসপাইট কেয়ার ফ্যাসিলিটিতে তিনি কিছুদিন ছিলেন। সেখানে তিনি হাঁটা-চলার ক্ষমতা হারান।

অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এজড কেয়ার সেন্টারগুলোর অর্ধেকেরও বেশি বয়স্ক ব্যক্তি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। এদিকে, শতকরা ৭০ ভাগ বয়স্ক-সেবা-কর্মীর ডিমেনশিয়া বিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

বেশিরভাগ বয়স্ক-সেবা-কেন্দ্র কর্মী-সঙ্কটে ভুগছে। কর্মীরা মানসম্মত সেবা করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।

অভিজ্ঞ বয়স্ক-সেবা-কর্মী Natasha Chadwick তার নিজের মায়ের জন্য খুব ভাল একটি বয়স্ক-সেবা-কেন্দ্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি একটি কমিউনিটি-ফোকাসড মাইক্রোটাউন নির্মাণ করেন যেখানে অধিবাসীরা এবং তাদের প্রতিবেশিরা একসাথে বাস করেন।
কুইন্সল্যান্ডের Caboolture এর Bellmere সাবার্বে এই মাইক্রোটাউনটি অবস্থিত। New Direction Care এর CEO Natasha Chadwick। সেখানে ছয়টি রাস্তা জুড়ে ১৭টি বাড়ি রয়েছে। সেখানে চুল কাটার সেুলন আছে, ওয়েলনেস সেন্টার আছে, ক্যাফে, গ্রসারি শপ এবং সিনেমা হলও আছে, যেগুলোতে স্থানীয় অধিবাসীরাও যেতে পারেন।

চার বছর Paruit-Chauvin কে পূর্ণকালীন দেখাশোনা করার পর গত ফেব্রুয়ারিতে একটু বিরতির জন্য Gough সিদ্ধান্ত নেন তার প্রিয় মাকে এই মাইক্রোটাউনে পাঠানোর।

প্রায় দেড় ঘণ্টা ড্রাইভ করে দুপুরে খাওয়ার সময়ে গ্লোরিয়া ব্রিসবেনে আসেন Paruit-Chauvin কে দেখার জন্য। সেখানে ঘরের লোকেরা স্যামন ও কোকোনাট সস এবং ভাত রান্না করেন।

অন্যান্য নার্সিং হোমগুলোতে প্রতিদিন মাথাপিছু গড়ে প্রায় ৬ ডলার বরাদ্দ থাকে খাবার খরচের জন্য। এখানে ঘরের সাত জন মিলে বাজেট করেন এবং কী খাবেন তা ঠিক করেন এবং তাদের সামনেই রান্না করা হয়।

ডিমেনশিয়ার কারণে Paruit-Chauvin ইংরেজিতে কথা বলা ভুলে গেছেন।

তার মায়ের সাথে ফরাসী ভাষায় কথা বলতে পারে এমন কাউকে না পেয়ে চিন্তিত ছিলেন গফ ।
মাইক্রোটাউনের অধিবাসী ৭২ বছর বয়সী  Jan Segger পিয়ানো বাজানো পছন্দ করেন।

চুল কাটার সেলুনে স্থানীয় এক মহিলা তার চুল কাটাচ্ছিলেন এবং তার মেয়ে ছোট্ট একটি বাচ্চাকে দেখছিল।

অন্যান্য বয়স্ক-সেবা-কেন্দ্রগুলো, যেগুলোতে গফ আগে কাজ করতো, সেগুলোর চেয়ে এখানকার পরিবেশ পুরোপুরিই ভিন্ন রকম।


সম্ভবত এর কারণ হলো মাইক্রোটাউনের বেশিরভাগ অধিবাসীই তুলনামূলকভাবে কম-বয়সী এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তাদের বয়স ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে এবং বেশি দিন হয় নি তারা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

মাইক্রোটাউনের এই মনোরম পরিবেশের কারণ হিসেবে Natasha Chadwick মনে করেন, একটি সামাজিক পরিবেশে এখানকার অধিবাসীরা বাস করেন সেজন্য আর লোক বাছাইয়ের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .


Share