সুবাস পৌদেল করোনাভাইরাস অতিমারী শুরুর ঠিক আগে নেপাল থেকে সিডনী পৌঁছান। এদেশে আসার পর ঠিকমত সবকিছু বোঝার আগেই লক ডাউন শুরু হয়, যার জন্য তিনি কিছুতেই প্রস্তুত ছিলেন না। হঠাৎ করেই সব বদলে যায়। রোগ, মহামারী, আর্থিক সংকট থেকে মানসিক সংকটের জন্ম হয়। এসব কিছুই মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সুবাস জানান, মানসিক সমস্যার ভুক্তভোগী তার মত অনেকে স্টিগমা বা লোকলজ্জার ভয়ে সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করেন। সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে মানসিক সমস্যাকে ঘিরে আমাদের মধ্যে স্টিগমা কাজ করে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সহ অভিবাসীরা সরকারী সাহায্য ও ভিসাজনিত জটিলতার ভয়েও মানসিক সাহায্য চাইতে সংকোচ বোধ করেন।
উপরোক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য নিউ সাউথ ওয়েলস হেলথ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে সেটলমেন্ট সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল সহ অন্যান্য পরিষেবা দানকারীদের সাথে একযোগে কাজ করছে।
নিউ সাউথ ওয়েলস হেলথ মাল্টিকালচারাল হেলথ কমিউনিকেশন সার্ভিস এর পরিচালক লিসা উডল্যান্ড বলেন, তারা বিভিন্ন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে মানসিক সমস্যা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক জটিলতাগুলো তুলে ধরছেন। ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকজন (মাল্টিকালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড) যাতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরিবার, বন্ধু আর কমিউনিটির সাথে নি:সংকোচে আলাপ করতে পারেন এবং সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন — সেই উদ্দেশ্য থেকেই এসব ভিডিও বানানো হয়েছে।
লিসা উডল্যান্ড আরও জানান, অতিমারীর সময়ে বহুসংস্কৃতির তরুণ জনগোষ্ঠী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছিল, বিশেষ করে যারা নতুন এদেশে এসেছে।
বৈচিত্রময় সংস্কৃতি (culturally diverse backgrounds) থেকে উঠে আসা মিস্টার সুবাস সহ আরও অনেক অংশগ্রহণকারী ভিডিওবার্তার মাধ্যমে নিজের ভাষায় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এইসব ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ এসবিএস এবং কমিউনিটি রেডিওতে পাওয়া যাচ্ছে।
নিজ ভাষায় মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্য প্রচারের গুরুত্ব বিষয়ে ডক্টর ম্যুরে রাইট বলেন, কমিউনিটির অনেকে ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সচেতনতার বার্তা নাও পেতে পারেন। তাদের নিজ নিজ ভাষায় স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছে দিতে এই প্রচারাভিযান ও তথ্যভাণ্ডার কাজে লাগবে। মিস্টার রাইট নিউ সাউথ ওয়েলস হেলথ এর চিফ সাইকিয়াট্রিস্ট বা প্রধান মনঃচিকিৎসক।
ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস এর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা হেড টু হেলথ এর শাখাগুলোতেও নিজ ভাষায় সেবা দেওয়া হয়। এই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার তহবিল ফেডারেল সরকার থেকে আসে যাতে সাহায্যপ্রার্থীরা বিনামূল্যে সাহায্য পেতে পারেন।
করোনাভাইরাস অতিমারীর সময়ে ২৪ ঘন্টা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা লাইফলাইনে সেবার চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
গত দুই বছরে তাদের কাছে সাহায্যের জন্য কল আসার পরিমাণ ৪০ ভাগ বেড়ে যায়। আগে দিনে প্রায় ২৫০০টি কল আসতো, আর অতিমারীর সময়ে আসে প্রায় ৩৫০০টি। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর নাগাদ সংস্থাটিতে চার সপ্তাহে ৯৬ হাজারটি কল আসে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় কলের পরিমাণ ১৪ শতাংশ বেড়েছে।
ডক্টর রাইট কলের পরিমাণ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সাহায্য চাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে,
তার মানে হচ্ছে মানুষ আওয়াজ তুলছে; যখনই মানুষ মানসিক উৎকণ্ঠা এবং অসুখী বোধ করছে তখনই মানুষ এই বিষয়ে কথা বলছে, সাহায্য চাইছে আর সাহায্য নিচ্ছে।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
সুবাস পৌদেল এখন সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তিনি আশা করেন, তার প্রদত্ত বার্তাটি বহুসাংস্কৃতিক কমিউনিটির কাছে পৌঁছাবে এবং কমিউনিটির মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে উৎসাহিত করবে।
মিস্টার পৌদেল বলেন, শরীর চর্চা, নতুন কোন সৌখিন কাজে যুক্ত হওয়া বা পছন্দের কাছে ব্যস্ত থাকলে মন উৎফুল্ল হয়। তিনি সখ করে রান্না শিখেছিলেন। তার রান্নার প্রশংসা করেছেন তার বন্ধু আর সহকর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের স্বান্নিধ্য জরুরী। যেকোন মানসিক জটিলতায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে সংকোচ বা দেরি করা উচিত নয়।
মানসিক সহায়তা এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য কল করুন বিয়ন্ড ব্লু- ১৩০০ ২২ ৪৬৩৬, অথবা লাইফলাইন নাম্বারে- ১৩ ১১ ১৪
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: