প্রত্যেক বছর, প্রতি পাঁচজনে একজন অস্ট্রেলিয়ান মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। ধারণা করা হয়, ৪৫ ভাগ অস্ট্রেলিয়ান তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার মানসিক অসুখে পড়েন।
গুরুত্বপূর্ন দিকগুলি:
- মনের অসুখের পূর্বলক্ষন সহসা বুঝা যায় না।
- সঠিক চিকিৎসায় মনের অসুখ সারিয়ে তোলা যায়।
- নিকটজনের সাথে মানসিক সমস্যার অন্তরঙ্গ ও খোলামেলা আলোচনার সূত্রপাত জরুরি।
ম্যাককোয়্যার ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মারিয়া কাংগাস বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের মত অস্ট্রেলিয়ানরা যে দুইটি মনের অসুখে বেশি ভুগেন তা হচ্ছে— ডিপ্রেশন আর এংজাইটি বা বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা।
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা রোগের লক্ষণ:
- সখের কাজ সহ আগে যা কিছু করতে উপভোগ করতেন,
তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। - মানুষের সঙ্গ ভাল না লাগা।
- ঘুমের অনিয়ম আর কোন কাজে মন না বসা।
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
- আপসেট লাগা বা বিপর্যস্ত বোধ হওয়া।
- নিজেকে আক্রান্ত মনে হওয়া আর নিজেকে রক্ষা করার তাগিদ অনুভব করা।
- অন্যের কথায় সহজে মন খারাপ করা, অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে
যাওয়া বা সেনসিটিভ হওয়া। - অল্পতেই কান্না চলে আসা।
প্রফেসর কাংগাসের মতে, উপরোক্ত লক্ষণগুলো ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। সবার মধ্যে সব উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। তবে বিষন্নতার উপসর্গ বলতে উপরের বৈশিষ্ট্যগুলোই বোঝায় যার কোন কোনটি বা সবকটিই ব্যক্তির মধ্যে দেখা যেতে পারে।
Source: Getty Images
উদাহরণস্বরূপ তিনি কোভিডের কথা উল্লেখ করে বলেন, মানুষের মধ্যে কোভিড নিয়ে নানান ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। তার মানে সব আতংকগ্রস্থ মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হবেন তা কিন্তু নয়। মানুষ ভয়ের পরিবেশের সাথে কিভাবে খাপ খাইয়ে নেয় তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে।
বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে ডঃ কাংগাস বলেন, মানসিক চাপ বা উদ্বেগজনিত কারণে এবং বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষের মনমেজাজ ঠিক থাকে না। সহজেই তাদের মেজাজ বিগড়ে যায় বা তাদের কাছে এংগার ম্যানেজমেন্ট খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
অস্থিতিশীল মন-মেজাজের ধারাবাহিকতায় মানসিক সমস্যা আরও জটিল রুপ ধারণ করতে থাকে।
উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা বা এংজাইটির লক্ষণ:
- সহজেই নার্ভাস বোধ করা, বা অকারণে অস্থির এবং উত্তেজিত হয়ে যাওয়া ।
- আশু বিপদাপন্ন অনুভব করা, আতংকিত আর বিপদগ্রস্ত এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মনে হওয়া।
- হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া ।
- ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া (হাইপার ভেন্টিলেশন)
- ঘাম অথবা শরীরের কম্পন।
- দুর্বল অথবা ক্লান্ত অনুভব করা।
- উপস্থিত কোন কিছুতে চিন্তিত না হয়ে অন্য কিছু ভাবার প্রবণতা বা কোথাও মনঃস্থির করতে না পারা।
- ঘুমের অনিয়ম ।
ডক্টর কাংগাস বলেন, বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগজনিত মনোবৈকল্য থেকে আরও বড় সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থায় মানুষের মন-মেজাজ ঠিক থাকেনা। এই মানসিক সমস্যা ইমপালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডারের দিকে ধাবিত হতে পারে যখন
কেউ আর নিজের রাগ, আবেগ, আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
ঠিক সময়ে তার চিকিৎসা জরুরি বলে মনে করেন ডক্টর কাংগাস। অন্যথা —
এটা আইনী সমস্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে। কেউ যদি কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণ করেন বা আক্রমণাত্মক আচরণ করেন, তাহলে তার চাকুরীও চলে যেতে পারে।
Source: Pexels/Jack Krzysik
ইম্পালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার হলে কোন ব্যক্তি আবেগ আর আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তার প্রকাশ নানান ভাবে দেখা যায়্। ব্যক্তিটি কোন কাজের প্রতি বা নেশার প্রতি অদম্য তাড়না বোধ করেন যা তিনি কিছুতেই নিবৃত্ত পারেন না।
যেহেতু ওই ব্যক্তিটি নিজেকে দমাতে পারেন না, এবং তিনি সেই তাড়নায় সবকিছুই করতে পারেন; ফলে ব্য্যক্তিটি আইনবিরোধী বা অনৈতিক কাজ করতেও পিছপা হন না।
এই মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন আসক্তিজনিত কর্মকান্ডে দেখা যায় যেমন জুয়া, নেশা, এলকোহল ইত্যাদি। ডক্টর কাংগাস বলেন, অনেক সময় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির নিকটজনেরা অসুখের পূর্বলক্ষন ধরতে পারেন না।
Warning signs of mental illness Source: Pexels/Pixabay
ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের গ্লোবাল এন্ড কালচারাল্ মেন্টাল হেলথ ইউনিট এর প্রধান হ্যারি মিনাস দীর্ঘকাল যাবত ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে কাজ করছেন। কারোর আচরণে পরিবর্তন দেখা দিলে তা অবহেলা করা উচিৎ নয় বলে তিনি মনে করেন।
প্রফেসর মিনাস অনেক বছর ধরে কমনওয়েলথ সরকারের শরনার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীর বিষয়ে উপদেষ্টা ছিলেন।
তার মতে, মাল্টিকালচারাল কমিউনিটির অনেকের মধ্যেই মানসিক সমস্যা গোপন করার প্রবণতা দেখা যায়। এর জন্য তিনি সচেতনতার অভাব ও এই বিষয়ে সামাজিক অপধারণাকে দায়ী করেন।
Source: Getty ImagesPeopleImages
যদি কোন কারণে আপনি এসব কথা ডাক্তার বা আপনার জিপিকে বলতে না চান, তবে আপনি অন্যত্র অনেকভাবে সাহায্য পেতে পারেন। আপনার জন্য আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে সেবার আয়োজন রয়েছে, যেমন “বিয়ন্ড ব্লু”।
বিয়ন্ড ব্লু এর ক্লিনিকাল এডভাইজর ডক্টর গ্রান্ট ব্লাশকি বলেন, যে কেউ চাইলে বিয়ন্ড ব্লু এর ওয়েবসাইটে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কুইজে অংশ নিতে পারেন। এই কুইজ আপনাদের আত্মমূল্যায়নের জন্য, যাতে আপনি নিজের সমস্যা নিজে বুঝতে পারেন—আপনার কি মানসিক স্বাস্থ্য সেবার দরকার আছে কি না।এই বিষয়ে “কে ১০” কুইজে অংশ নেয়া যায়। এখানে অংশগ্রহণকারীকে সাকুল্যে ১০টা প্রশ্ন করা হয় আর প্রদত্ত উত্তরের উপর ভিত্তি করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তাৎক্ষনিক ফলাফল দেয়া হয়।
Close up of Caucasian couple holding hands in coffee shop Source: Getty Images/Jacobs Stock Photography Ltd
এই পরীক্ষার ফলাফল যদি সহনীয় বা মাঝামাঝি রকমের হয়, তবে আপনি বিয়ন্ড ব্ললু এর হেল্পলাইনে ফোন করতে পারেন। যদি ফলাফল মারাত্মক হয় তবে আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
এমব্রেস মাল্টিকালচারাল মেন্টাল হেলথ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির কমিউনিটির মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা ও আত্মহত্যা রোধ করতে কাজ করে।এই প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার রুথ দাস বলেন, তাদের পরিচালিত প্রকল্প অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্য সবা দেওয়া হয়। তাদের বিভিন্ন জ্ঞানসম্ভার ও অবকাঠামো তথা রিসোর্সে সেবার ব্যবস্থা আছে।
Source: Getty Images/ljubaphoto
এছাড়াও তারা কালচারালি এপ্রপ্রিয়েট বা সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত উপায়ে এদেশের মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সাহায্যের জন্য লাইফলাইনে কল করুন ১৩ ১১ ১৪ অথবা কল করুন বিয়ন্ড ব্লুতে ১৩০০ ২২৪ ৬৩৬
ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষাভাষীদের মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছে এম্ব্রেস মাল্টিকালচারাল মেন্টাল হেলথ-
জরুরী সাহায্যের জন্য কল করুন- ০০০ (শূণ্য শূণ্য শূণ্য)
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on