ভয়েস রেফারেন্ডাম কী এবং অস্ট্রেলিয়ায় কেন এর প্রয়োজন হচ্ছে?

CANBERRA RECONCILIATION WEEK STOCK

The moon is seen behind the Australian flag, the Indigenous flag and the flag of the Torres Strait Islands flying outside Parliament House to mark Reconciliation week in Canberra, Tuesday, May 30, 2023. (AAP Image/Lukas Coch) NO ARCHIVING Source: AAP / LUKAS COCH/AAPIMAGE

আপনি জানেন কি যে আদিবাসী ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার মানুষেরা অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে স্বীকৃত নয়? ফেডারেল সরকার অস্ট্রেলিয়ার মানুষদের জন্য একটি গণভোট আহ্বান করেছে, যার মাধ্যমে যেন তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে ইন্ডিজেনাস 'ভয়েস টু পার্লামেন্ট' অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে তারা ইচ্ছুক কিনা। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক গণভোট কী, অস্ট্রেলিয়ায় কারা ভোটার হওয়ার যোগ্য, এবং ভয়েস টু পার্লামেন্ট-এর কাজ কী হবে?


ফেডারেল সরকার 'ভয়েস টু পার্লামেন্ট' নামের একটি প্রতিনিধি সংস্থার মাধ্যমে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে পরিবর্তন আনা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যোগ্য ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছে।

'দ্য ভয়েস' হবে একটি নির্বাচিত সংস্থা, যারা ফার্স্ট নেশনস জনগণকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয় ও আইন সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দিবে।

ইভান একিন-স্মিথ অস্ট্রেলিয়ান ইলেক্টোরাল কমিশনের (এইসি) একজন মুখপাত্র, যেটি নির্বাচন পরিচালনাকারী স্বাধীন সংস্থা।

তিনি বলেন, "গণভোট অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান পরিবর্তন করা বা না করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে জাতীয় ভোট। সংবিধান পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো জনগণের ভোট দেয়া, সংসদের এটা করার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই।“
ফেডারেল সরকার কীভাবে কাজ করবে, সেটি নির্ধারণ করে দেয় সংবিধান। এটি কমনওয়েলথ, রাষ্ট্র এবং জনগণ কেমন আচরণ করবে তার ভিত্তি নির্ধারণ করে; সেই সাথে স্টেট এবং ফেডারেল সংসদে কী আইন তৈরি করা যেতে পারে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়।

এই গণভোটে জনগণকে নিচের প্রশ্নের উত্তরে 'হ্যাঁ' বা 'না' ভোট দিতে বলা হবে:

"একটি প্রস্তাবিত আইন: যার মাধ্যমে আদিবাসী এবং টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ভয়েস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট পিপলদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধান পরিবর্তন করা হবে।

আপনি কি এই পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করেন?”
YES 23 VOICE CAMPAIGN SYDNEY
A supporter is seen with the Aboriginal flag painted on her face in support of the vote hold placards during a Yes 23 community event in support of an Indigenous Voice to Parliament, in Sydney, Sunday, July 2, 2023. (AAP Image/Bianca De Marchi) NO ARCHIVING Source: AAP / BIANCA DE MARCHI/AAPIMAGE
এইসির মুখপাত্র একিন-স্মিথ ব্যাখ্যা করে বলেন যে, একটি গণভোট সফল হতে হলে সেটিকে অবশ্যই দ্বৈত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে।

প্রস্তাবিত ভয়েস টু পার্লামেন্ট সংস্থাটি একটি লিঙ্গ-ভারসাম্যপূর্ণ আদিবাসী প্রতিনিধিদের সংস্থা হবে, যা ফার্স্ট নেশনস সম্প্রদায়গুলির দ্বারা নির্বাচিত হবে। এই সংস্থার কাজ হবে তাদেরকে প্রভাবিত করে এমন আইনের খসড়া তৈরির সময় সংসদকে পরামর্শ দেওয়ার জন্যে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা।

আইন পাস, ভেটো সিদ্ধান্ত বা তহবিল বরাদ্দের ক্ষমতা এই সংস্থার থাকবে না। সংসদ স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
প্রফেসর মেগান ডেভিস একজন কোবল কোবল নারী এবং নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইন বিভাগের সভাপতি। তিনি সংবিধানে আদিবাসী এবং টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার মানুষদের স্বীকৃতি সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অংশ ছিলেন যা ভয়েসের জন্য প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশেও একই ধরনের মডেল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

ডিন পার্কিন একজন কুয়ান্ডামুকা পুরুষ এবং সংবিধানে ভয়েস টু পার্লামেন্ট স্থাপনের প্রচারাভিযান 'ফ্রম দ্য হার্ট'-এর পরিচালক।

তিনি মনে করেন যে ভয়েস ফার্স্ট অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য কিছুটা আত্মনিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা দিতে সহায়তা করবে, কারণ তখন সরকার এমন মানুষদের কথা শুনতে পাবে যারা এই সম্প্রদায়ের মানুষদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন।

অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট নেশনস মানুষেদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন রকম। অনেকেই ভয়েসের প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। এর মধ্যে বিশিষ্ট আদিবাসী রাজনীতিবিদরাও রয়েছেন।

নর্দার্ন টেরিটরি কান্ট্রি লিবারেল সিনেটর জ্যাসিন্টা প্রাইস এবং সাবেক শীর্ষস্থানীয় লেবার দলীয় নেতা ওয়ারেন মন্ডিন 'না' ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে কাজ করছেন। তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে ভয়েস টু পার্লামেন্ট আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানে খুব কার্যকর কিছু হবে না।

গণভোট যত ঘনিয়ে আসছে, 'হ্যাঁ' এবং 'না' প্রচারাভিযান ভয়েসের পক্ষে এবং বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকবে।
JACINTA PRICE VOICE PRESSER
Country Liberal Party Senator Jacinta Nampijinpa Price walks with a young Indigenous woman wearing an Australian flag ahead of a press conference at Parliament House in Canberra, Wednesday, March 22, 2023. (AAP Image/Lukas Coch) NO ARCHIVING Source: AAP / LUKAS COCH/AAPIMAGE
মুখপাত্র ইভান একিন-স্মিথ বলেছেন, এইসি এক কোটি ৭০ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত অস্ট্রেলিয়ান ভোটারকে অবহিত করার জন্য একটি তথ্য প্রচারণা তৈরি করছে।

ঐতিহাসিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ানদের সংবিধান সংশোধনের জন্য রাজি করানো সহজ কাজ নয়। ১৯০১ সালে ফেডারেশন স্থাপনের পর থেকে, সংবিধান পরিবর্তনের জন্য ৪৪ টি প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র আটটি এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে।

আদিবাসী ইস্যুতে সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এর সাফল্য ফার্স্ট অস্ট্রেলিয়ানদের কমনওয়েলথ আইনের অধীনে অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদেরকে জনশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আসন্ন গণভোটে ভোট দেয়ার জন্যে আপনাকে ব্যালট পেপারে কেবল ইংরেজি হরফে ‘ইয়েস’ বা ‘নো’ শব্দগুলি লিখতে হবে।

প্যাট ক্যালানান এইসির একজন প্রতিনিধি। তিনি জানান, ভোটারদের সঠিক তথ্য পেতে অনেকগুলি উপায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

"আমরা ৩০ টিরও বেশি ভাষায় এই সংক্রান্ত তথ্য অনুবাদ করতে যাচ্ছি, আমাদের ওয়েবসাইটে এবং টেলিফোনের মাধ্যমেও দোভাষী পরিষেবার সাহায্যে তথ্য নেয়া যাবে”, বলেন তিনি।
আপনি যদি সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়ে থাকেন, তবে আপনি গণভোটেও ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন। 

এর অর্থ হল তালিকাভুক্ত নাগরিকদের জন্য গণভোটে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক।

মি. একিন স্মিথ বিশ্বাস করেন যে এই বিতর্কে অংশ নেওয়া এবং নিজের উত্তর জানতে খোঁজখবর করা জরুরী।

মি. ক্যালানান বলেন, মনে রাখা দরকার যে এই ভোটের ফলাফল অস্ট্রেলিয়ানদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফার্স্ট নেশনস মানুষদের মতামতসহ এসবিএস নেটওয়ার্ক জুড়ে ২০২৩ সালের ইন্ডিজেনাস ভয়েস টু পার্লামেন্ট গণভোট সম্পর্কে অবহিত থাকতে চোখ রাখুন এনআইটিভিতে। এসবিএস অন ডিমান্ডের পাতায় ৬০ টিরও বেশি ভাষায় নিবন্ধ, ভিডিও এবং পডকাস্ট শুনতে বা বিনামূল্যে সর্বশেষ সংবাদ এবং বিশ্লেষণ, ডকুমেন্টারি এবং বিনোদন পেতে ভিজিট করুন।

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share