ভয়েস আসলে কী এবং এর পক্ষে ও বিপক্ষে কে কী বলছেন

YES 23 VOICE CAMPAIGN SYDNEY

Supporters hold merchandise in support of the vote during a Yes 23 community event in support of an Indigenous Voice to Parliament, in Sydney, Sunday, July 2, 2023. (AAP Image/Bianca De Marchi) Source: AAP / BIANCA DE MARCHI/AAPIMAGE

চলতি বছরের শেষ নাগাদ অস্ট্রেলিয়ার মানুষ একটি গণভোটে অংশ নেবে, যেখানে হ্যাঁ বা না ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে ভয়েস বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তবে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমাদের জানা দরকার ভয়েস আসলে কী এবং এর পক্ষে বা বিপক্ষের যুক্তিগুলি কী কী?


২০১৭ সালে সারা দেশ থেকে ২৫০ জন আদিবাসী নেতা উলুরুতে জড়ো হয়েছিলেন।

সেখানে তাঁরা উলুরু স্টেটমেন্ট ফ্রম দ্য হার্ট বিবৃতি প্রণয়ন ও সমর্থন করেছিলেন।

এই সহজ ও কাব্যিক শব্দাবলীর মাধ্যমে তিনটি জিনিসের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে: ভয়েস, ট্রিটি এবং ট্রুথ।

রেফারেন্ডাম কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক মেগান ডেভিস সেই কনভেনশনে প্রথমবারের মতো বিবৃতিটি পাঠ করেন।
এটি বাস্তবায়নে ছয় বছর সময় লেগেছে, কিন্তু অবশেষে সংবিধান পরিবর্তনের এই অনুরোধে ভোট দিতে বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ানদের।

অস্ট্রেলিয়ার মানুষদের নিচের এই প্রশ্নটির উত্তরে হ্যাঁ বা না ভোট দিতে হবে:

আপনি কি অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ভয়েস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট পিপলদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধানের পরিবর্তনকে সমর্থন করেন?

তাহলে জানা যাক, ভয়েস আসলে কী?
সরকারের ফার্স্ট নেশনস রেফারেন্ডাম ওয়ার্কিং গ্রুপ বলছে, ভয়েস হবে একটি স্থায়ী সংস্থা যা আদিবাসী ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ আইন ও নীতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট ও নির্বাহী সরকারের কাছে প্রতিনিধিত্ব করবে।

রেফারেন্ডাম ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য প্যাট অ্যান্ডারসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট পিপলদের স্বীকৃতি ও উন্নয়নের জন্যেই ভয়েস প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন।

তবে ভয়েসের এ ধারণাটি একেবারে নতুন কিছু নয়।

রিকনসিলিয়েশন অস্ট্রেলিয়া বলছে, অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ প্রায় এক শতাব্দী ধরে কোনো না কোনো ভাবে রাজনৈতিক ‘ভয়েস’ আহ্বান করে আসছে।

মিনিস্টার ফর ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ানস লিন্ডা বার্নি বলেছেন, এই আহ্বানকে সম্মান জানানো উচিত, কারণ আদিবাসী নেতারা সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া একটি বিস্তৃত ও পরিপূর্ণ প্রক্রিয়ার পরই এই আহ্বান জানিয়েছেন।

তাহলে ভয়েসকে কেন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার?

এর বিরোধী পক্ষ যুক্তি দেখান যে এটি কেবল আইন প্রণয়ন করেও তৈরি করা যেতে পারে, যেমনটি পূর্ববর্তী অনেক সংস্থাকে করা হয়েছিল।

তবে ভয়েসের সাথে জড়িত আদিবাসী নেতারা বলছেন যে সংবিধানে অন্তর্ভূক্তিই কেবল নিশ্চিত করতে পারে যে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকার এটি পরিবর্তন বা বিলুপ্ত করতে পারবে না। যেরকমটা হয়েছে অ্যাটসিক (ATSIC) অর্থাৎ অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার কমিশন-এর ক্ষেত্রে।

রেফারেন্ডাম ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মার্সিয়া ল্যাংটন ভয়েস প্রতিষ্ঠার একজন প্রধান সমর্থক। তিনি বলেন, আদিবাসী মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করতে, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রয়োজন নিজেদের কথা বলার অধিকার। এ কারণেই ভয়েস গুরুত্বপূর্ণ।

উলুরু স্টেটমেন্টের আহ্বানে ট্রিটি বা চুক্তি ও ট্রুথ বা সত্যের প্রতিষ্ঠার আগে কেন ভয়েস প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি?

এ সম্পর্কে সমর্থনকারীরা বলছেন, একটি চুক্তি অর্জনের স্বার্থে সরকারের সাথে আলোচনা করার জন্য একটি প্রতিনিধি সংস্থা প্রয়োজন - এমন কিছু বর্তমানে বিদ্যমান নেই। সে কারণেই ভয়েস প্রতিষ্ঠা জরুরি।

বিভিন্ন জরিপে বারবার দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার জনগণ দেশটির মূল অধিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিকে জোরালোভাবে সমর্থন করে।

কিন্তু বিতর্ক যতই ঘনিয়ে আসছে, ভয়েসের বর্তমান এই বিশেষ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
LIDIA THORPE BLAK SOVEREIGN MOVEMENT PRESSER
A member of the Blak Sovereign Movement wears sunglasses in the shape of the word ’NO’ during a press conference at Parliament House, in Canberra, Tuesday, June 20, 2023. (AAP Image/Lukas Coch) Source: AAP / LUKAS COCH/AAPIMAGE
সরকার এই প্রস্তাবে দুই পার্টিরই সমর্থন আশা করেছিল, কারণ ইতিহাস বলে এই সমর্থন ছাড়া গণভোট সফল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

কিন্তু কোয়ালিশন পার্টি এই প্রস্তাব সমর্থনের বদলে নো ক্যাম্পেইনকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিরোধী দলীয় নেতা পিটার ডাটন এই প্রস্তাবকে 'দ্য ক্যানবেরা ভয়েস' বলে অভিহিত করেছেন।

এই ইস্যুতে বিরোধী দলের প্রধান বক্তা হলেন আদিবাসী বিষয়ক মুখপাত্র জ্যাসিন্টা নামবাহজিমপা প্রাইস, যিনি একই সাথে নর্দার্ন টেরিটরির একজন সিনেটর।

তিনি ভয়েসের বাস্তবিক কোনো কার্যকারিতা থাকার দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন যে ভয়েস বিতর্ক আদিবাসী সম্প্রদায় যে প্রকৃত সমস্যার মুখোমুখি হয় সেগুলি থেকে আলোচনা দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

এ নিয়ে অন্যান্য সমালোচনার মধ্যে রয়েছে যে ভয়েস প্রস্তাবে বিশদ বিবরণের অভাব রয়েছে, এটি জাতিগতভাবে বিভাজনমূলক এবং আইনী চ্যালেঞ্জের জন্যে যথেষ্ঠ জোরালো নয়।

ওয়ারেন মুন্ডিন নো ক্যাম্পেইনের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, এর পেছনে তিনশত মিলিয়ন ডলার খরচ হবে, এটি অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের বরঞ্চ অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন, চাকরি, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
কিন্তু ভয়েসের বিরোধিতা করছেন যারা, তারা সবাই একই দলে নেই।

কোয়ালিশন পার্টি যেমনটা বলছে, স্বতন্ত্র ভিক্টোরিয়ান সিনেটর লিডিয়া থর্প বলেছেন যে ভয়েসের কার্যকারিতা সুদূরপ্রসারী নয়।

এই বছরের শুরুতে, লিডিয়া থর্প ভয়েসকে সমর্থন করার অভিযোগে গ্রিনস দল ত্যাগ করেছিলেন এবং বর্তমানে তিনি বলছেন যে তিনি এখন ব্ল্যাক সভেরিন মুভমেন্টের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

ভয়েস এর পরিবর্তে তিনি একটি চুক্তি এবং আইনি হেফাজতে আদিবাসী মৃত্যুর বিষয়ে ১৯৯১ সালের রয়্যাল কমিশনের সুপারিশগুলির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

আগামী অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে যে কোনও দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে – যদিও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

গণভোট সফল হবার জন্যে প্রয়োজন সংখ্যাগরিষ্ঠ স্টেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের হ্যাঁ ভোট। লক্ষ্য হিসেবে যা বেশ কঠিনই বলা যায়।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share