অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজিসহ আন্তর্জাতিক নেতারা হামলার জন্য ইরানের নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা ইরানের উপর ইসরায়েলের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণে যোগ দেবে না, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে সাবধানে চিন্তা করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে।
ইরান ইসরায়েলে ৩০০ টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সর্বোচ্চ সংযম ও উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভাষণে মিঃ গুতেরেস বলেছেন, এখনই সময় পরিস্থিতির খাদের কিনারা থেকে সরে আসার।
তিনি বলছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক ফ্রন্টে সামরিক সংঘর্ষের কারণ হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ এড়ানো অত্যাবশ্যক। বেসামরিক নাগরিকরা ইতিমধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তাদের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব রয়েছে।”
এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ায় তার দূতাবাস প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন। এরপর ইরান এই হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ বলেছেন, ইরানের বিমান হামলা যুদ্ধ ঘোষণার সমান।
তিনি যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজকে বলেছেন যে তিনি মিত্রদের মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও না বাড়াতে অনুরোধ করছেন।
একটি বিবৃতিতে, জি সেভেন গ্রুপের দেশগুলি ইসরায়েলের প্রতি সম্পূর্ণ সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছে এবং এর নিরাপত্তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে অংশ নেবে না।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি এনবিসি নিউজকে বলেছেন যে মিঃ বাইডেন কূটনৈতিক দিক নিয়ে কাজ করছেন এবং জি সেভেন-এর সাথে এই বিষয়ে আরও কথা বলবেন।
তিনি বলছেন, ইসরায়েলের উচিত জি সেভেন-এর সংহতিকে সম্মান করা, কিন্তু আমরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, আমরা ইসরায়েলকে রক্ষা করতে চাই।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বে নেভাটিম এয়ারবেসের মাটিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে যে এই সপ্তাহান্তে ইরানের ৯৯ শতাংশ উৎক্ষেপণ বাধা দেওয়া হয়েছে।
জর্ডানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আয়মান আল-সাফাদি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন যে তাদের দেশের আকাশসীমায় হামলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করা বিমানকে বাধা দিতে হবে।
তিনি বলছেন, "আমাদের নীতি হচ্ছে আমরা জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশকারী প্রতিটি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবিলা করা যাতে এটি জর্ডানের ক্ষতি বা জর্ডানবাসীদের জন্য হুমকি না হয়।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন যে ইসরায়েলের উপর তাদের হামলা ছিল ন্যূনতম, এবং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল যে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে না।
তিনি বলছেন, "প্রতিরক্ষার এই বৈধ পদক্ষেপে আমাদের লক্ষ্য কেবল ইসরায়েলি শাসকদের শাস্তি দেওয়া। আমরা এই অঞ্চলে আমেরিকান ব্যক্তি বা ঘাঁটিতে হামলা করছি না।"
ইসরায়েল এবং ইরান রাষ্ট্রের মধ্যে এই হামলার অর্থ কী তা নিয়ে বিশ্লেষকরা কথা বলেছেন।
বারবারা স্লাভিন স্টিমসন সেন্টারের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার একজন বিশিষ্ট ফেলো।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, ইরানের হামলা দুই দেশকে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে ফেলেছে।
তিনি বলছেন, "ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ইরান এটা করছে খুবই পরিকল্পনা করে, এই ধীরগতির ড্রোনগুলি ইরান থেকে ইস্রায়েলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে উড়েছে, ইসরায়েলি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর সময় দেওয়া হয়েছে, এমনকি জর্ডানের আকাশসীমার উপর দিয়ে যাওয়া বেশ কিছু ড্রোন জর্ডানিয়ানরাও গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এটাকে আমি একটা প্যারাডাইম শিফট বলছি কারণ ইরানের উপর ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে এটি হচ্ছে সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলা।"
পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।