ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস শেল্টারের খাঁচা দরজার পিছনে, একজন পুরুষ ও নারীকে এই প্রতিবেদক দেখতে পান এবং তারা তাদের নিজের পরিবার থেকে পালিয়ে যেতে উদ্যত।
তাদের একজন মুসলমান, অন্যজন হিন্দু।
যখন তারা তাদের বাবা-মাকে জানায় যে তারা বিয়ের পরিকল্পনা করেছে, তারা প্রত্যেকে প্রায় এক মাস ধরে তাদের ঘরে বন্দী ছিল।
তাদের একজন আবদুল বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা পালিয়ে আসে।
তিনি বলছেন, তারা আমাদের খুঁজছে এবং এখনও আমাদের আলাদা করার চিন্তা করছে। তারা আমাদের গৃহবন্দী করবে। তার (স্ত্রী) বাড়িতে, তারা তাকে জোর করে অন্য ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেবে।
অথচ তারা আই-টি পেশায় শিক্ষিত তরুণ, যাদের পাদদেশে বিশ্ব থাকার কথা।
কিন্তু আমরা আপনাকে তাদের মুখ দেখাতে পারছি না বা তাদের আসল নাম দিতে পারছি না। কারণ তাদের ধর্মের বাইরে বিয়ে করার জন্য অপরিচিতদের আক্রমণের শিকার হতে পারেন এই ভয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
স্মৃতি বলেছেন যে তার পরিবার তাদের বিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলছেন,“আমি আমার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারা শুনবে না কারণ দম্পতি হিসেবে আমরা ভিন্ন ধর্মের। আমার বাবা-মা আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে বাধ্য করেছেন যাতে আমি তার সাথে আর কথা না বলি। কারণ বিয়েটা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
খাঁচার দরজা লাগানো হয়েছে তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।
যদিও ভারতে আন্তঃধর্মীয় বিবাহ অত্যন্ত বিরল, তারপরেও দম্পতিরা ক্রমবর্ধমানভাবে উগ্রপন্থীদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ‘লাভ জিহাদ’-এর ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করছে, এই বিশ্বাসে যে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদেরকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যেই বিয়ে করছে।
আসিফ ইকবাল হলেন ধানাক অফ হিউম্যানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এটি একটি এন-জি-ও যা আন্তঃধর্মীয় দম্পতিদের সাহায্য করে।
তিনি বলছেন, “পরিবারগুলো যখনই আন্তঃধর্মীয় বিয়ের বিষয়টি জানতে পারবে, তারা মেয়েটিকে গৃহবন্দী করবে, তার ফোন বাজেয়াপ্ত করবে, লেখাপড়া বন্ধ করে দেবে এবং জোর করে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেবে।”
যদিও এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সমর্থন করার কোনও প্রমাণ নেই, কিন্তু ভারতের অন্তত ১১টি স্টেটে আইন প্রবর্তন করেছে যাতে জনগণ পুলিশকে কথিত 'লাভ জিহাদের' অভিযোগ জানাতে পারে এবং ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়।
আসিফ ইকবাল বলেন, এই 'বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র' তত্ত্ব দ্রুত মূলধারায় পরিণত হচ্ছে।
তিনি বলছেন, “আগে শুধু পরিবার এবং সমাজ এতে বাধা দিত। এখন যখন স্টেট সরকারগুলি নিজেরাই নতুন আইন প্রবর্তন করেছে, কারণ এই পরিবারগুলি বলছে যে তাদের চিন্তাভাবনাই সঠিক। সরকারও তাদের মতামতকে সমর্থন করছে।”
হরিয়ানায়, ধীরাজ শুক্লা ২০২২ সালে স্টেট বি-জে-পি সরকারের নতুন আইন ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন, তিনি একজন মুসলিম পুরুষের সাথে তার মেয়ের বিবাহ বন্ধ করতে চান।
তিনি তার মেয়ে, তার স্বামী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ নথিভুক্ত করেছেন।
তিনি বলছেন,"তারা (মুসলিম) এটাই চায়। তারা হিন্দু মেয়েদের যেভাবে পারে ইসলামে প্রলুব্ধ করে, তাদের লক্ষ্য (হিন্দু) জনসংখ্যা কমানো।"
যদিও স্থানীয় পুলিশ বলছে যে ধীরাজের মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই, তবে মি. শুক্লা বলেছেন যে তার মেয়ে বিয়ের অবসান করে তার নিজ পারিবারিক ধর্মে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি তার সাথে আর কথা বলবেন না।
তিনি বলছেন, “মানুষের উচিত তাদের নিজ ধর্মে বিয়ে করা এবং নিজ বর্ণের মধ্যে থাকা। তাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা সংঘাত সৃষ্টি করে।”
পরিবারগুলি তাদের নিজের সন্তানদের জন্য পুলিশকে ডাকছে এমন কোন দৃশ্য ভীতিকর, কিন্তু ধর্মের বাইরে প্রেমে পড়ার শাস্তি আরও খারাপ হতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে যে সেইফ হাউজগুলোই একমাত্র জায়গা যেখানে তরুণরা থাকতে পারে যখন তারা তাদের পরিবার থেকে বাঁচতে চায় এবং আইনি সাহায্য পেতে ব্যর্থ হয়।
২০১৮ সালে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত স্টেট সরকারকে আন্তঃধর্মীয় এবং ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দম্পতিদের জন্য নিরাপদ ঘর এবং বিশেষ সেল প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি নির্দেশ জারি করেছিল, কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে যে বেশিরভাগ স্টেটে এখনও সে ব্যবস্থা নেই।
নয়াদিল্লির ধানাক ফাউন্ডেশন হল একটি বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও যা প্রতিবেশী স্টেট থেকে পালিয়ে আসা দম্পতিদের সহায়তা করে।
কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইকবাল বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মামলার সংখ্যা এবং সহিংসতার হুমকি মোকাবেলা করার জন্য সরকার পরিচালিত সেফ হাউসের জরুরি প্রয়োজন।
তিনি বলছেন “অন্যান্য স্টেট থেকে আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আমরা ভীত। (আন্তঃধর্মীয় বিয়ে) বাধাদানকারীরা খুব শক্তিশালী, এবং তারা মেয়েটিকে ধরে ফেলতে চেষ্টা করবে। দিল্লিতে আমরা সহায়তা দিচ্ছি, এবং আমরা অন্যান্য স্টেটেও অনুরূপ কাজ করার চেষ্টা করছি। এটি একটি কঠিন কাজ কিন্তু আমরা মনে করি তাদের জন্য নিরাপদ স্থান থাকা অপরিহার্য”।
কিন্তু এরপরেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে এই তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য পরিবারগুলো যাতে তাদের গ্রহণ করে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।