প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে (বর্তমানে পাকিস্তানে) ১৯২৩ সালের ১৪ আগস্ট। তার মাতৃভাষা উর্দু হলেও তিনি মূলত ইংরেজি ভাষাতেই লিখতেন।
আইন শাস্ত্রে লেখাপড়া করলেও তিনি কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিক হিসেবে, একটি উর্দু পত্রিকা দৈনিক আনজামের প্রতিবেদক হিসেবে।
সাংবাদিকতা ছেড়ে কুলদীপ নায়ার একসময় ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোতে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন; তিনি প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লব পন্থ এবং পরে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন। শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই কুলদীপ নায়ার সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় ফিরে যান। প্রথমে বার্তা সংস্থা ইউএনআই ও এর পরে ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইনডিয়ান এক্সপ্রেস এবং স্টেটসম্যান সম্পাদনা করেছেন তিনি।
উনিশ শ’ সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে জারি করা জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং এর বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত তাকে কারাবরণ করতে হয়।
কুলদীপ নায়ার ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে যুক্তরাজ্যে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
ধর্মীয় উগ্রবাদের পাশাপাশি উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরোধিতায় সরব ছিলেন তিনি। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য।
তাঁর কলাম ‘বিটুইন দ্য লাইন’ দেশ-বিদেশের ১৭টি ভাষার ৮০টি পত্রিকায় ছাপা হতো।
তিনি মনে করতেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও ভারতের দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার।
তিনি ১৫টি বই লিখেছেন।এর মধ্যে রয়েছে ‘ইন্ডিয়া আফটার নেহরু’, ‘ইমার্জেন্সি রিটোল্ড’, ‘ডিসট্যান্ট নেবারস: এ টেল অব দ্য সাবকন্টিনেন্ট’ প্রভৃতি।
তার আত্মজীবনী বিয়ন্ড দ্য লাইনসে ব্যক্তি কুলদীপ নায়ারের বেড়ে ওঠার গল্পের সঙ্গে ধরা পড়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক নানা বাঁক বদলের কথা। দেশ বিভাগের কারণে জন্মভূমি শিয়ালকোট থেকে নয়াদিল্লিতে এসে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন তিনি। সেই সময়ের ভয়াল পরিস্থিতির বিবরণ পাওয়া যায় তার আত্মজীবনীতে।
কুলদীপ নায়ারের পরিবারে হিন্দু ও শিখ উভয় ধর্মের অনুষ্ঠানাদি পালন করা হতো। তিনি নিজেও তার নামের সিং বাদ নিয়ে নামের শেষে নায়ার যোগ করেছেন।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ৯৫ বছর বয়সে ২৩ আগস্ট, বৃহস্পতিবার দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রসন্তান রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বহু মানুষ শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
এক টুইটে মোদী বলেছেন, “কুলদীপ নায়ার আমাদের সময়ের এক মহান বুদ্ধিজীবী ছিলেন। মতামত প্রকাশে স্পষ্টভাষী ও নির্ভীক ছিলেন তিনি। জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে তার অবস্থান, উন্নত ভারতের জন্য তার নিবেদন সবসময় মনে থাকবে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইট বার্তায় বলেন,