এ মাসের নেইডক উইক উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের একটি প্রজেক্ট পুনর্গঠিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিভিন্ন ইনডিজেনাস ভাষার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই উদ্যোগ।
নিয়াঙ্গামারটা, ইয়রটা ইয়রটা এবং টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডের নারী অ্যালিরা মারি তার সংস্কৃতির সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন না। তবে, ফিফটি ওয়ার্ডস প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের এই প্রজেক্ট অফিসার তার সংস্কৃতির সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে অনুভব করেন।
এসবিএস নিউজকে মিজ মারি বলেন,
“শুধুমাত্র অনলাইনে ক্লিক করে ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া এবং (এটি) অনলাইনে ও বিনামূল্যে হওয়ার বিষয়টি অনেক বড় বিষয়।”
“যার পরিবার অনেক বেশি স্থানান্তর করেছে, সে রকম একজন হিসেবে আমি আমার ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব সামান্যই জ্ঞান রাখি।”
“নিজের ঘরে বসে থেকে, বাড়িতে গিয়ে ভাষাগুলো শোনা আসলেই স্বস্তিদায়ক।”স্থানীয় আদিবাসীদের জন্য ফিফটি ওয়ার্ডস প্রজেক্ট চালাচ্ছে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের রিসার্চ ইউনিট। এর মাধ্যমে ইনডিজেনাস কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি করা হচ্ছে।
Allyra Murray works at the University of Melbourne Source: Supplied
এই প্রজেক্টের ওয়েবসাইটটি এর ব্যবহারকারীকে ৬০ টিরও বেশি ভাষায় ৫০ টি নিত্য-ব্যবহার্য শব্দের খাঁটি উচ্চারণ শোনানোর জন্য কার্যত ভূখণ্ডে নিয়ে যায়। এসব শব্দের মধ্যে রয়েছে, ‘স্বাগতম’, ‘হ্যালো’ এবং ‘বিদায়’ এর মতো শব্দগুলো। আর, বাক্যাংশের মধ্যে রয়েছে, ‘আপনার নাম কী?’ এ ছাড়াও রয়েছে, পরিবারের সদস্য, জীব-জন্তু এবং স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক নানা শব্দ।এ সব ভাষায় কথা বলা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন কাডো মুইর। তিনি গেলিয়া (Ngalia) ভাষায় কথা বলেন। NITV-কে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ইতোপূর্বে প্রায় ২০০ টি ফার্স্ট নেশন্স ভাষা প্রচলিত ছিল। এখন এগুলো মাত্র ২০ টিতে নেমে এসেছে।
The 50 Words Project features more than 60 different Indigenous languages. Source: 50words.online
তিনি বলেন,
“ফার্স্ট নেশন্স জনগোষ্ঠী এখানে ভোগান্তির শিকার হয়েছে উপনিবেশ স্থাপনের কারণে এবং জন-সংখ্যার ৯০ শতাংশ মারা গেছে ও হারিয়ে গেছে।”
“আর, এর ফলে ৯০ শতাংশ ভাষাও হারিয়ে গেছে।”
মিস্টার মুইর বলেন, কোনো কোনো ভাষার সম্ভাব্য ক্ষতির অর্থ হলো সেই সম্প্রদায়ের তাদের ভূমির প্রতি উপলব্ধি কমে যাবে।”
মিজ মারি বলেন, এই প্রজেক্টে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সমাজের সদস্যদের ভূমিকা শুধু তাদের কণ্ঠস্বর সংরক্ষণ করাই নয়, এর পাশাপাশি এটিও প্রদর্শন করা যে, এসব শব্দ কীভাবে বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়।
তিনি বলেন,
“এই প্রজেক্টের যে দিকটি আমি আসলেই ভালবাসি তা হলো আপনি আমাদের সবগুলো ভাষার বৈচিত্র দেখতে পারেন এবং কোনো কোনো সাদৃশ্যও আপনি উপলব্ধি করতে পারেন না।”
“বিশেষভাবে সে-সব শব্দ, যেমন, ‘হাত’, যা কোনো কোনো ভাষায় ‘মারা’ এবং ‘পা’ হলো ‘জিনা’; আপনি দেখতে পাবেন যে, নর্দার্ন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায়, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় কিংবা এমনকি ভিক্টোরিয়াতেও তারা হাত ও পায়ের জন্য একই শব্দ ব্যবহার করে।”
এই প্রজেক্টটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নিক থিবার্গার ও তার সঙ্গে রয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর রাচেল নর্ডলিঙ্গার। নিক থিবার্গার বলেন, তারা এই প্রজেক্টটি চালাতে চান “এমনভাবে যে, এটি অ্যাবোরিজিনাল জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কোনো কিছু নিয়ে যাবে না।”
“আমরা ইনডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে অংশিদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। তাই আমরা একটা কাঠামো তৈরি করি এবং এতে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ভাষায় কথা-বলা ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানাই। এই প্রক্রিয়ায় এটি সংগঠিতভাবে বৃদ্ধি পায়।”
গত বছরের জুলাই মাসে এই প্রজেক্টটি প্রথম শুরু করা হয়। তবে এটি আপডেট করা হয়েছে; নেইডক উইক-এর সময়টিতে যেন এটি আরও বেশি সহজে ব্যবহারযোগ্য হয়।
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর থিবার্গার বলেন, এই ওয়েবসাইটটিতে আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শিক্ষা-উপকরণ; তারা যেন এগুলো স্কুলগুলোতে ব্যবহার করতে পারেন। আর, এটি কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
তিনি বলেন,
“আমরা অ্যাবোরিজিনাল জনগোষ্ঠীর কাছে থেকেও শুনেছি, যারা এখন তাদের নিজেদের ভাষায় আর কথা বলেন না। তাদের কোনো আত্মীয় এই ভাষায় কথা বলেছেন, এটা শুনে তারা আসলেই আলোড়িত হয়েছেন।”
“তাই, যদিও এটি অনেক সাদামাটা, আপনি জানেন, মাত্র ৫০ টি বা তার কিছু বেশি শব্দ; তারপরও এর অনেক বড় অভিঘাত ও প্রভাব রয়েছে।”
মিজ মারি বলেন, শিশুরা যদি খেলার মাঠে এসব শব্দ বলা শুরু করে, তাহলে এর পরে তারা এই দেশের ট্রাডিশনাল ওউনারদেরকেও সনাক্ত করতে পারবে।
এই প্রজেক্টটির পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে ১০০ টি পর্যন্ত ভাষায় এটি পরিচালনা করার। সেজন্য তারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবে।
অ্যাবোরিজিনাল অ্যান্ড টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডারদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন অর্জন উদযাপন করেন্যাশনাল নেইডক উইক (৮-১৫ নভেম্বর, ২০২০)।
এসবিএস এবং এনআইটিভি-র সঙ্গে যোগ দিন এবং দেখুন। নেইডক উইক কিংবা এ বছরের থিম সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য দেখুন ।
#NAIDOC2020 #AlwaysWasAlwaysWillBe