কোভিড-১৯ এর সময়ে জুয়ায় আসক্তি বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ায়

A man stands in front of a screen with a page of a sports betting provider (bet-at-home).

A man stands in front of a screen with a page of a sports betting provider (bet-at-home). Source: Photo by Rehder/picture alliance via Getty Images.

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে জুয়ার আসরগুলোতে সশরীরে অংশ নেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। তবে, লকডাউনের ফলে অস্ট্রেলিয়ায় জুয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্যগুলোর ব্যবহার কমে যায় নি। অনলাইন গ্যাম্বলিং বৃদ্ধি পেয়েছে, গ্যাম্বলিং অ্যাপ ডাউনলোডও বেড়েছে। কমবয়সী অস্ট্রেলিয়ানদের জুয়ায় আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারের লিংকটিতে ক্লিক করুন।


NRL এবং AFL প্রতিযোগিতাগুলো ২০২০ সালে পুনরায় শুরু করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান গ্যাম্বলিং রিসার্চ সেন্টার (AGRC) ২০০০ এরও বেশি লোকের উপরে জরিপ চালিয়েছে, যারা গত জুন এবং জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে জুয়া খেলায় অংশ নিয়েছে।

এই সমীক্ষায় শীর্ষস্থানীয় গবেষক ড. রেবেকা জেনকিনসন বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতি তিন জনে এক জন নতুন বেটিং অ্যাকাউন্ট খুলেছে। আর, সপ্তাহে চার বারেরও বেশি যারা জুয়ায় অংশ নিয়েছে সে রকম লোকের সংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশ হয়েছে। তরুণদের মাঝে জুয়ায় আসক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন জেনকিনসন।

ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির সিনিয়র লেকচারার এবং এশিয়ান জার্নাল অফ গ্যাম্বলিং ইস্যুস অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর প্রতিষ্ঠাতা এডিটর-ইন-চিফ ড. কিসওসুকা বলেন, CALD বা ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ সমাজের তরুণ-তরুণীরা অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে আসক্ত।

CALD কমিউনিটিগুলোর সদস্যদের জুয়ায় আসক্ত হওয়ার বিষয়ে পরিচালিত কয়েকটি সমীক্ষায় সাধারণভাবে দেখা গেছে, অভিবাসীদের মাঝে জুয়ার কারণে অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাদের সেটেলমেন্ট অভিজ্ঞতা এবং এ দেশের সংস্কৃতি বুঝতে না পারা এবং বিকল্প কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারার কারণে এ সমস্যাগুলো হয়।

মাল্টি-কালচারাল সেন্টার ফর উইম্যান’স হেলথ-এর হেলথ প্রমোশন ম্যানেজার ড. জয়েস জিয়াং বলেন, সমাজ থেকে জুয়া-সংশ্লিষ্ট সত্যিকার প্রভাব প্রতিরোধ করার জন্য অভিবাসীদের নিজেদের ভাষায় গ্যাম্বলিং অ্যাওয়ারনেস প্রজেক্ট পরিচালনা করে তারা।

ড. কিসওসুকা মনে করেন, CALD কমিউনিটিগুলোর প্রবণতা রয়েছে যে, তারা কখনও কখনও অবাস্তব প্রত্যাশা করে থাকে এবং জুয়ার মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চায়। তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা ভাগ্য এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পোষণ করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ায় জুয়াখেলা অনেক বেশি দেখা যায়। সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান, 35th edition of Australian Gambling Statistics-এ দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বিশ্বে জুয়ার রাজধানী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া পরিচিত। এ দেশে প্রতিবছর জুয়া খেলে ২৪ বিলিয়ন ডলার হারে মানুষ।

888 Holding হলো বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন গেমিং এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড সলুশন প্রভাইডার। তাদের রিপোর্টে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে দৈনিক গড়ে ১৮ শতাংশ রেভিনিউ বৃদ্ধি পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায়।

মাল্টিকালচারাল প্রবলেম গ্যাম্বলিং সার্ভিস ফর এনএসডব্লিউ এর বাইলিঙ্গুয়াল ক্লিনিকাল কনসালটেন্ট নিপুণিকা গুণাবর্ধন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় সমাজের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে নেওয়ার জন্যও কোনো কোনো অভিবাসী জুয়া খেলে থাকেন।

২০ বছর আগে সাউথ ইন্ডিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন রায়। (এটা তার সত্যিকারের নাম নয়। আর, তার আওয়াজও পরিবর্তন করা হয়েছে)। তখন থেকেই তিনি জুয়া খেলেন। তার পরিবার অবশ্য এটা জানে না।

নিপুণিকা গুণাবর্ধন বলেন, যখনই কেউ এতে আসক্ত হয়, তখন তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করতে দেখা যায়। কারণ, তারা তাদের তৃপ্তিলাভের মাত্রা বাড়াতে চায়।

রায় মনে করেন, মদ ও জুয়া পরস্পর হাত ধরাধরি করে একসঙ্গে চলে।

জুয়াতে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়, যখন মানুষ হেরে গিয়ে জিতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তখন আর এটা বিনোদন থাকে না।ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির গ্যাম্বলিং সাইকোলজির গবেষক, ড. স্যালি গেইনবারি মনে করেন, জুয়ার ক্ষেত্রে সময়ও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
জুয়া-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর সঙ্গে উদ্বেগ ও হতাশার যোগসূত্র দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা।

ড. কিসওসুকা বলেন, জুয়ায় আসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যাগুলো সাধারণত খুব ভালভাবে বুঝতে পারে না CALD কমিউনিটির সদস্যরা। মানুষ মনে করে এগুলো বংশগতভাবে চলে আসে কিংবা এগুলো কারও কারও জন্য অপরিবর্তনীয় ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য। অস্ট্রেলিয়ায় ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষাতেও মানসিক স্বাস্থ্য-সেবা পাওয়া যায়।

নিপুণা গুণাবর্ধন দেখতে পেয়েছেন যে, অভিবাসী ও শরণার্থী কমিউনিটিগুলোতে জুয়া সমস্যা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে মানুষের লোক-লজ্জা ও অস্বস্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কোভিড-১৯ এর সময়ে ভূমি-ভিত্তিক (land-based) জুয়াখেলার সুযোগ সীমিত হওয়ার কারণে, রেবেকা জেনকিন বলেন, AGRC এর গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৪ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষের মাঝে জুয়া খেলার হার (মিডিয়ান বা মধ্যক) কমে গেছে এবং তা ২৩ শতাংশ থেকে আট শতাংশে নেমে এসেছে।

জুয়ারীদের মাঝে নারীরা মূলত তাদের অর্থ লগ্নি করেন লটো এবং লটারি-পণ্যগুলোতে। জুয়া-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর ঝুঁকিতে পুরুষদের তুলনায় তারা কম পড়েন। এক্ষেত্রে তাদের হার ৬৭ শতাংশ এবং পুরুষদের হার ৮৪ শতাংশ।

তবে, জেনকিনসনের মতে, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, কমবয়সী ছেলেরা প্রতি মাসে গড়ে ৬৮৭ ডলার থেকে ১,০৭৫ ডলার পর্যন্ত জুয়ায় লগ্নি করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ান কিশোর-কিশোরীদের অবসরকালীন বিনোদনের মধ্যে প্রিয় হচ্ছে কম্পিউটার গেমিং।

ড. জয়েস জিয়াং এই প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনলাইন গেমিংয়ের পথ ধরেই তারা অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

নিপুণিকা গুণাবর্ধন বলেন, কোনো কোনো অনলাইন গ্যাম্বলিং ওয়েবসাইট তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় কম্পিউটার গেমগুলোর মাধ্যমে। কমবয়সীদের টার্গেট করে তারা গ্যাম্বলিং-প্রডাক্টসের ফ্রি-প্লে ডেমো ভার্সনের অফার দেয়।

এ ছাড়া, ডিজিটাল গেমগুলোতে প্রায়ই জুয়ার উপকরণ থাকে। এত্থেকে জুয়ায় আসক্ত হওয়ার পথে চলে যেতে পারে তারা। যেমন, কোনো কোনো গেমের চরিত্ররা ক্যাসিনোতে যায় এবং তথাকথিত “লুট” বক্স কিনে, যার মাধ্যমে সত্যিকারের জগতের অর্থ পাওয়া যায় এবং খেলোয়াড়রা নানা ধরনের পুরস্কার পায়।

জুয়া-সমস্যা বিষয়ক নানা ধরনের তথ্যের জন্য ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় ফ্যাক্ট শিট এবং ব্রশিয়ারের জন্য, আপনার টিনেজার সন্তানের সঙ্গে কীভাবে ডিজিটাল গেমিং নিয়ে কথা বলবেন তা জানার জন্য, গ্যাম্বলিং অ্যাওয়ারনেস প্রজেক্ট ওয়েবসাইট দেখুন।

দ্য মাল্টিকালচারাল প্রবলেম গ্যাম্বলিং সার্ভিস ফর নিউ সাউথ ওয়েলস-এ পাবেন গোপনীয়তার সঙ্গে, বিনামূল্যে টেলিফোনে কিংবা মুখোমুখি কাউন্সেলিং সেবা, আপনার পছন্দের ভাষায়, 1800 856 800 নম্বরে।

ভিক্টোরিয়ায়, গ্যাম্বলার্স হেল্প-এ বিনামূল্যে, গোপনীয়তার সঙ্গে সহায়তা পাওয়া যায় আরবী, ক্যান্টোনিজ, ম্যান্ডারিন এবং ভিয়েতনামিজ ভাষায়। অন্যান্য ভাষায় কথা বলার জন্য দোভাষী পাওয়া যাবে। আরও তথ্যের জন্য দেখুন gamblershelp.com.au কিংবা কল করুন 1800 858 858 নম্বরে।

আপনি যদি বধির হন কিংবা আপনার যদি কথা বলা ও শোনায় সমস্যা থাকে, তাহলে গ্যাম্বলার্স হেল্প-এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন ন্যাশনাল রিলে সার্ভিসের মাধ্যমে। আরও তথ্যের জন্য দেখুন relayservice.gov.au

চ্যাট কাউন্সেলিং, ইমেইল সাপোর্ট এবং সেল্ফ-হেল্প সার্ভিসগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এগুলোতে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় এবং এগুলো ২৪/৭ বা সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা পাওয়া যাবে। অস্ট্রেলিয়ার যে-কোনো স্থান থেকে দেখুন Gambling Help Online.



Share