তরুণদের মধ্যে অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের আসক্তি বাড়ছে, জড়িয়ে পড়ছেন নারীরাও

Online gambling

Gambling chips on computer keyboard Source: Digital Vision

অস্ট্রেলিয়ায় গ্যাম্বলিং বা জুয়ায় আসক্তি বেশ বড় একটি সামাজিক সমস্যা। ইন্টারনেটের প্রসারের সুবাদে এর বিস্তৃতি দিন দিন বাড়ছে। কারণ এর পেছনে আছে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। জুয়ায় আসক্তিকে গণস্বাস্থ্যের একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডঃ রুখসানা তাজিন অস্ট্রেলিয়ান গ্যাম্বলিং রিসার্চ সেন্টারে কাজ করছেন জুয়া আসক্তি এবং এর সামাজিক বিপর্যয় নিয়ে। তিনি এসবিএস বাংলাকে জানিয়েছেন তার গবেষণা সম্পর্কে।


গ্যাম্বলিং অস্ট্রেলিয়ান সমাজের অংশ হয়ে গেছে, এর পেছনে আছে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য; গ্যাম্বলিংয়ের এই ব্যাপকতা বিষয়ে গবেষক ডঃ রুখসানা তাজিন বলেন, "এটা ঠিক যে গ্যাম্বলিং অস্ট্রেলিয়ান সমাজের একটি অংশ হয়ে গেছে। আপনি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকে যদি তাকান তাহলে দেখা যাবে যে, টিভিতে, রাস্তাঘাটে বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে মোড়ে মোড়ে চোখে পড়বে বিভিন্ন বেটিং বিজ্ঞাপন, বিষয়টা এমন মানুষ খেলা দেখবে এবং বেটিং করবে। এছাড়া পোকিজ, ইজিএম বা ট্যাব - এগুলোর বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য, এর মানে তাদের প্রচুর ক্রেতা আছে।  আর এভাবেই এগুলো অস্ট্রেলিয়ান সমাজের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।"

তিনি বলেন, এটি দশ-বিশ বছরে হয়নি, এটা অনেক আগে থেকেই ছিল যে মানুষ ক্লাব, ক্যাসিনো বা ট্যাবে যাবে, গল্পগুজব করবে, এলকোহল সেবন করবে এবং সেই সাথে বেটিং করবে।
Bangladeshi migrant
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডঃ রুখসানা তাজিন Source: Supplied
"কিন্তু যেটা হয়েছে যে এটা অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে, এর অনেক কারণ আছে, প্রথমতঃ বেটিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি সক্রিয় আগের চাইতে, এখানে অনেক অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে।"

বেটিং করা এখন আগে চাইতে অনেক সহজ, ঘরে বসেই যে কোন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিক ইন্টারনেটে বেটিং করতে পারেন। সামাজিক মাধ্যম এখন অনেক জনপ্রিয়, আর তরুণরাই এর প্রধান ব্যবহারকারী। বেটিংয়ের বিজ্ঞাপন তাই এই সব মাধ্যমেও অনেক বেশি। 

ডঃ রুখসানা তাজিন বলেন, "প্রযুক্তির উদ্ভাবন আরেকটি বড় কারণ। ইন্টারনেটের কারণে কাউকে আর ভেনুতে যেতে হচ্ছে না।  বাসায় বসে ল্যাপটপ, বা ফোন থেকেই সে গ্যাম্বলিং করতে পারছে।"

পুরো সমাজে জুয়ার আসক্তি খুব সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, "গবেষকরা দেখেছেন, গ্যাম্বলিংয়ের স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বেশি উদ্বিগ্ন। এর ব্যাপকতা এতো যে, এটা শুধু রেইসিং বা স্পোর্টসেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ছড়িয়েছে টিভির রিয়েলিটি শোগুলোতেও। 

গ্যাম্বলিং বা জুয়া আসক্তি অস্ট্রেলিয়ান সমাজে বেশ বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।  এর প্রভাবে সমাজে দারিদ্র্য, গৃহ বিবাদ, কর্মহীনতাসহ নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে তরুণ বয়সী এবং নারীদের অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে আসক্তি বৃদ্ধি।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার  ডঃ রুখসানা তাজিন বলেন, "তরুণরা ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে গ্যাম্বলিং বেশি পছন্দ করেন। সেদিক থেকে যারা বয়স্ক তারা ভেনুতে গিয়ে বেটিং করতে বেশি পছন্দ করছেন। মজার বিষয় মেয়েরা গ্যাম্বলিংয়ে বেশি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।"

এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষেরা গ্যাম্বলিংয়ের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন সহজেই।

ডঃ রুখসানা তাজিন বলেন, "মেলবোর্নের নিম্ন আয়ের লোকেরা বাস করেন এমন এলাকাগুলোতে পোকিজ বা ট্যাবগুলো বেশি দেখা যায়। এর পেছনে যে বিষয়টি কাজ করে তা হচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকেরা এমনিতেই নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে আকর্ষণ করার জন্য নানা রকম অফার দেয়া হচ্ছে, আর এভাবেই তারা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।"

তিনি বলেন, অনেক স্বল্প আয়ের নারীরা বিশেষ করে যারা সিঙ্গেল প্যারেন্ট তারা পরিবারে আয় বাড়াতে গ্যাম্বলিংয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু এতে আয় তো বাড়েই না, উল্টো সব হারিয়ে চুরি বা এ ধরণের সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন।

জুয়ার আসক্তির আরেকটি প্রভাব হচ্ছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা গৃহ বিবাদ।

ডঃ রুখসানা তাজিন বলেন, "এর কারণ হচ্ছে যে লোকটি জুয়ায় আসক্ত তিনি যদি পরিবারের প্রধান আয়কারী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি পরিবারে অর্থ দেন না, যার পরিণতিতে গৃহ বিবাদ অবশ্যম্ভাবী। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে ড্রাগ এবং এলকোহল আসক্তি। অনেকে হতাশা কাটাতেও এতে আসক্ত হয়ে পড়েন।"

সাম্প্রতিককালে মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি গ্যাম্বলিংয়ে জড়িয়ে পড়ছে।

ডঃ তাজিন মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি-সমাজে একীভূত হতে গিয়ে  এবং সহজে আয়ের উৎস হিসেবে ধরে নিয়ে নতুন আসা অভিবাসীরা গ্যাম্বলিংয়ে যুক্ত হয়ে থাকে। 

তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় গ্যাম্বলিংয়ের মাত্রা কমাতে নানা উদ্যোগ অব্যাহত আছে, যুক্তরাজ্যের মত অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্যাম্বলিং নিষিদ্ধ করতে চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নানা বিধিনিষেধ, কোন ভেন্যুতে কতগুলো মেশিন থাকবে এই বিষয়ে নীতিমালা, নজরদারি, বিধি অমান্য করলে লাইসেন্স বাতিলের মত বিষয়ও আছে। 

গ্যাম্বলিংসহ যে কোন আসক্তির জন্য সাহায্য পেতে ফোন করুন 1800 858 858 অথবা ভিজিট করুন বা

পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন। 

আরো পড়ুন:



Share