পলিন নিচোলস পোষা প্রাণীর ইন্সুরেন্স খুঁজছিলেন, এমন সময় তার স্ক্রিনে একটি বার্তা এলো যে একটা সমস্যা হয়েছে। এজন্য ওই ওয়েবসাইট থেকে যে নাম্বারটি তার স্ক্রিনে ভেসে এলো তাতে তিনি ফোন করলেন।
সেখানে তাকে বলা হলো তার কম্পিউটারে একটা বাজে ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে। তখন পলিন বেশ চিন্তিত হয়ে গেলেন কারণ তাকে বলা হলো তার কম্পিউটার সুরক্ষিত নয়।
"আর এভাবেই আমি ওদের খপ্পরে পড়ে গেলাম। "
উপরের ঘটনাটি হচ্ছে অনলাইন প্রতারণা, এটি করা হচ্ছে ভারতের কোন অফিস থেকে।
মিজ নিচোলস এই ঘটনায় সরল মনে চারশ' পাউন্ড ওই প্রতারকদের দিলেন, অথচ তার কম্পিউটারে কোন সমস্যাই ছিল না।
এইসব ঘটনার শিকারদের বলা হয় 'মাইক্রোসফটে' ফোন করতে, কিন্তু যে নাম্বারগুলো দেয়া হয় সেগুলো আসলে ভারতের কোন কল সেন্টারের। অপারেটররা তখন ওদের কাছে অর্থ দাবি করে 'রিপেয়ার' খরচের জন্য, যে সমস্যা আদৌ নেই।
বিবিসি'র কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স অনুষ্ঠান 'পানোরামা' এই সব অবৈধ কল সেন্টারগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করেছে; একটি অনলাইন নজরদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্য বিবিসিকে কিছু গোপন রেকর্ডিং সরবরাহ করেছিল। ওই ব্যক্তি ভারতের প্রায় কয়েক ডজন অবৈধ কল সেন্টার হ্যাক করেছিল।
সে তার ছদ্মনাম 'জিম ব্রাউনিং' ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, "আমার ইউ টিউবের নামটি আমার প্রকৃত নাম নয়। তাই আমি সবসময় ওভাবেই নিরাপদে থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমি প্রতারকদের বাধা দিতে থাকি এবং ওরা আক্ষরিক অর্থেই প্রতি মাসে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। "
মিঃ ব্রাউনিংয়ের কাছে ভারতের একটি ম্যাপ আছে যার প্রায় সব জায়গাতেই ডট চিহ্ন আছে - প্রতিটি ডট চিহ্ন একেকটি ভূয়া কল সেন্টার যেগুলো সে খুঁজে পেয়েছে।
সে প্রতারকদের ধরতে তাদের কলগুলো রেকর্ড করে ফেলে। এর মধ্যে একজন তাকে বলে সে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে থাকে।
কিন্তু কল সেন্টার অপারেটর বুঝতে পারেনি মিঃ ব্রাউনিং তাদের কল সেন্টারের সিসিটিভি সিস্টেম হ্যাক করে ফেলেছে। সে ভারতের ওই লোকগুলো কি করছে সবই দেখতে পাচ্ছিলো - এমনকি তারা যে গুগলে রেস্তোরাঁ খুঁজছিলো এটিও সে দেখছিলো।
ব্রাউনিং তাদের জিজ্ঞাসা করলো: আমাকে তুমি গুগল না করে সান জোসের একটি রেস্তোরাঁর নাম বলো।
কল সেন্টার: কেন বলবো স্যার ?
ব্রাউনিং: আমি বাজি ধরে বলতে পারি তুমি এখন গুগল করছো।
কল সেন্টার: আমি করছি না তো স্যার।
ওই কল সেন্টারটি আসলে দিল্লির কোন শহরতলীর। এটি প্রতি মাসে অর্ধ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার আয় করে।
এ ট্রিপল সি বা ACCC-এর হিসেবে অস্ট্রেলিয়ানরা এই সব অনলাইন প্রতারণায় পড়ে প্রতি বছর অর্ধ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খুইয়েছেন।
দিল্লির ওই কল সেন্টারটির মালিক অস্বীকার করেছে যে তারা প্রতারণা করছে, কিন্তু বিবিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তারা প্রায় ৭০,০০০-এরও বেশি কল করেছে যাতে দেখা যায় কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
(একটি কল রেকর্ডিং)
কল সেন্টার: আপনার কার্ডে কত আছে?
উত্তরদাতাঃ ৯০ কুইডের (পাউন্ড) মত আছে।
কল সেন্টার: আপনার মাত্র ৯০ পাউন্ড আছে?
উত্তরদাতাঃহ্যা।
কল সেন্টার: কিন্তু পেমেন্ট তো ১৫০ পাউন্ড।
উত্তরদাতাঃ এই ১৫০ পাউন্ড আমি শপিংয়ের জন্য রেখেছিলাম।
মিঃ ব্রাউনিংয়ের ফুটেজ থেকে দেখা যায় প্রতারকরা তাদের ভিক্টিমদের নিয়ে হাসাহাসি করছে।
২০১৮ সালে এসবিএসের একটি রিপোর্টে দেখা যায় ভারত থেকে একই প্রকারের প্রতারণার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে ; প্রকৃত মাইক্রোসফট কোম্পানি দিল্লি পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করলে সাইবার অপরাধ বিভাগ প্রায় ৫০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে।
কিন্তু মিঃ ব্রাউনিং বলেন, যখন এ ধরণের ঘটনা ঘটে, প্রতারকরা তখন তাদের বিল্ডিং পরিবর্তন করে এবং আগের মতই তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যায়।
ভারতের কল সেন্টারগুলোর ওপর অনেকেই নির্ভর করেন।
কিন্তু এর যে অন্ধকার দিকটি আছে - সেটা শোনা যায়, কিন্তু খুব কমই দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিশন এন্ড কনসিউমার কমিশন (ACCC ) প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পেতে একটি ওয়েবসাইট খুলেছে - এতে পরামর্শ পেতে ভিজিট করুন scamwatch.gov.au
আরো পড়ুন: