ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেছেন, হিংসার সময় দিল্লি পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ছিল না। এমনকী, দিল্লির পুলিশ কমিশনারের ভাবমূর্তিও খুব ভাল ছিল না, যে কোনও কারণেই হোক। কিন্তু শিগগিরি দিল্লি পেতে চলেছে নতুন পুলিশ কমিশনার। সিআরপিএফ এসএন শ্রীবাস্তবকে নতুন পদে যোগ দেওয়ার জন্য অব্যাহতি দিয়েছে।
এ দিকে রবিবার থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে শুরু হওয়া হিংসাকে থামাতে দিল্লি পুলিশের সক্রিয়তার অভাবের অভিযোগ তুলেছেন দিল্লির বাসিন্দারা এবং রাজনৈতিক নেতারা। এই পরিস্থিতিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পট্টনায়েককে। সিএএ-র সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি, সেই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষ অভিযোগ জানিয়েছিলেন কোথাওই পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না।
এদিকে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে খবর দিলেই মিলবে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার। এমনই পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদের রাস্তা। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার এই পোস্টার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার এই পোস্টারে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে খবর দিতে পারলেই ৫ হাজার টাকা পুরস্কার পাওয়া যাবে। সম্প্রতি মারাঠি মানুষ-এর লাইন থেকে হিন্দুত্বে ফিরেছেন নবনির্মাণ সেনা নেতা রাজ ঠাকরে। কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইনেরও জোরদার সমর্থক রাজ ঠাকরে। অওরঙ্গাবাদে নিজেদের জমি শক্ত করার চেষ্টা করছে এমএনএস। এই মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বের করার দাবি নিয়ে মুম্বইতে একটি মিছিল করেন রাজ। পুনেতেও অনুপ্রবেশকারীদের সরানোর দাবি তুলেছে এমএনএস। ২০১৪ থেকেই খারাপ সময় যাচ্ছে এমএনএস-এর। এই অবস্থায় হিন্দুত্ব ইস্যুকে আঁকড়ে পায়ের তলার মাটি পেতে চাইছে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা।
অন্যদিকে দিল্লি হিংসার ঘটনা নিয়ে নতুন করে দায়ের হওয়া আরও তিনটি পিটিশনের শুনানি হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টে। ওই মামলায় দিল্লি পুলিশ, দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠিয়েছে আদালত। নয়া পিটিশনের একটিতে বিরোধী নেতা রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীদের পরিচয় জানার জন্য তদন্তের আর্জিতে যে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে, সেই মামলাতেও নোটিশ পাঠিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্টের আওতায় তদন্তের দাবি জানিয়ে পিটিশনটি দাখিল করেছেন অজয় গৌতম। তাঁর পিটিশনের ভিত্তিতে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে নোটিশ পাঠিয়েছে মুখ্য বিচারপতি ডিএন প্যাটেল ও বিচারপতি সি হরিশংকরের বেঞ্চ। সঞ্জীব কুমার আরও একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দেওয়ার জন্য সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার, আরজে শায়েমা, অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে সেই পিটিশনে। তৃতীয় পিটিশনটি করেছে বিজেপির লিগাল সেলের আইনজীবীদের সংগঠন লইয়ার্স ভয়েস। সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্য সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, ওয়াইসি ভাইয়েরা, ওয়ারিস পাঠান, মণীশ সিসোদিয়া, আমানাতুল্লা খান ও মেহমুদ প্রচার বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করার আর্জি জানানো হয়েছে সেই পিটিশনে। আদালত তিনটি পিটিশনেই নোটিশ পাঠিয়ে মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ এপ্রিল হবে বলে জানিয়েছে।
আর, আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মাকে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কৃত আপ কাউন্সিলর তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফ আই আর। দিল্লির দয়ালপুর থানায় তাহির হুসেন বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে এফ আই আর-এর দায়েরের পর থেকেই বেপাত্তা তাহির হুসেন। বহিষ্কৃত আম আদমি পার্টি কাউন্সিলরকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিস। তাহির হুসেনের খোঁজে ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছে দিল্লি পুলিসের একটি দল। বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে তাহির হুসেনের কারখানা। দু’দিন আগে, চাঁদবাগের নালায় উদ্ধার হয় আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার দেহ।অভিযোগ, বাড়ি ফেরার সময় অঙ্কিতের উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতিকারীরা। ময়নাতদন্তে তাঁর শরীরে একাধিক জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।অঙ্কিতের বাবা রবীন্দ্র শর্মা অভিযোগ করেন, তাহির হুসেনের সমর্থকরাই তাঁর ছেলেকে খুন করেছে। মারধরের পর গুলি করা হয়েছে অঙ্কিতকে।