গত সপ্তাহে রোয়ান ব্যাক্সটার নামে একজন সাবেক রাগবি খেলোয়াড় তার পৃথকভাবে বাস করা স্ত্রী হানা ক্লার্ক এবং তিন শিশু সন্তানদের হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন। অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন কি হয়েছিল তাদের মধ্যে - এবং ভবিষ্যতে তা কিভাবে রোধ করা সম্ভব।
এখানে মনে রাখা দরকার যে, নারী ও শিশুদের ওপর পারিবারিক সহিংসতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজন করে নারী তাদের বর্তমান বা সাবেক পার্টনারদের হাতে প্রাণ হারায়।
ফ্যামিলিসাইড বা পরিবারহত্যা বলতে আমরা বুঝি খুনি কর্তৃক তার পার্টনার এবং সন্তানদের হত্যা। যদিও এটি তুলনামূলক ভাবে সংখ্যায় কম, তথাপি আমরা কিভাবে ভাবি, এ বিষয়ে কথা বলি, এবং লিখি এ ব্যাপারে কিছু গবেষণা আছে। এতে এ ধরণের ঘটনা রোধে মানুষের মনোভাব এবং প্রভাবক বিষয়গুলো উঠে এসেছে।ফ্যামিলিসাইডের ক্ষেত্রে যে ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে তার একটি হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের সামাজিক এবং কাঠামোগত বিস্তার। ব্যাপারটা শুধু একজন পুরুষ একজন নারীকে মারছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর মানে হচ্ছে লিঙ্গ পরিচয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; কে সহিংসতা ঘটাচ্ছে, কাকে লক্ষ্য করা হচ্ছে, কিভাবে এবং কেন।
Hannah Clarke, Rowan Baxter and their three children Laianah, Aaliyah and Trey. Source: Facebook
গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে পরিবার হন্তারকের ভূমিকায় প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষকেই দেখা যায়।
পারিবারিক সহিংসতার ইতিহাস আরেকটি রিস্ক ফ্যাক্টর। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে পারিবারিক সহিংসতার ইতিহাস আছে তারাই অধিকাং শ ক্ষেত্রে ফ্যামিলিসাইডের শিকার।
আরেকটি রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ - যখন একজন পার্টনার আরেকজন থেকে পৃথক হয়ে গেছে বা হবে বলে ঘোষণা দিতে চায়, তখন তারা হত্যা বা বড় ধরণের সহিংসতার শিকার হয়।
আবার অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনার পরে ফ্যামিলিসাইড ঘটেছে তাও নয়। পার্টনার এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা এবং অধিকার ফলাতে চাওয়া আরেকটি সাধারণ বিষয়। একটি পরিবারে কর্তা হিসেবে বিশেষ করে যখন পুরুষ মানুষটি তার নিয়ন্ত্রণ হারায় তখনও পরিবার হত্যার মত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতার কোন স্পষ্ট ইতিহাস না থাকলেও শুধুমাত্র একজন পুরুষ তার 'মাসকুইলিন' বা পৌরুষিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে এ কারণেও ফ্যামিলিসাইড ঘটতে দেখা যায়।
তবে যেভাবেই হোক ফ্যামিলিসাইড সাধারণত পূর্ব পরিকল্পিত হয়।
গণমাধ্যমে যেভাবে ফ্যামিলিসাইডকে উপস্থাপন করে
গণমাধ্যমে ফ্যামিলিসাইড বা পরিবারহত্যার কারণ হিসেবে খুনির ব্যক্তিগত মানসিক অবস্থা, তার আর্থিক দুরবস্থা, কিংবা হৃদয় ভাঙার ঘটনাকে তুলে আনে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা যখন সন্তানদের হন্তারক হয় তখন তাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে দেখাতে চায়। তার সহিংসতার পুরুষতান্ত্রিক দিকটি কমই উঠে আসে।
তাছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম কখনোই পারিবারিক সহিংসতার জন্য সাহায্য পাওয়া যায় এমন উৎসগুলোর উল্লেখ করে না, বিশেষ করে 1800Respect -এ ফোন করার বিষয়টি।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও ক্লার্ক পরিবারের খুনের ঘটনার বিষয়ে টুইট করে মানসিক অসুস্থতার সাহায্যের জন্য ফোন করার বিষয়ে উল্লেখ করলেও কোন কন্টাক্ট ডিটেলস দেন নি।
তবে যাই হোক গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আরো কিছু সমালোচনা হয়েছে, যেমন ব্যাক্সটারের ঘটনাটিতে তারা এমন ভাষা ব্যবহার করেছে যাতে তাকেও সমানভাবে পরিস্থিতির শিকার মনে হয়।
ফ্যামিলিসাইডের ঘটনা শুধুমাত্র পরিবারে সহিংসতার ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক বিষয় বলে সীমাবদ্ধ করা উচিত হবে না, এর পেছনে যে অন্তর্ণীহিত কারণগুলো আছে তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং এর প্রতিকারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
কেউ যদি পারিবারিক সহিংসতা বা যৌন হেনস্তার ঝুঁকিতে থাকেন তবে ফোন করুন 1800Respect বা 1800737732 এবং ভিজিট করুন: 1800RESPECT.org.au
(সংক্ষেপিত)
মূল প্রবন্ধিটি লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অফ নোটরড্যাম অস্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল জাস্টিস এন্ড সোসিওলজির সিনিয়র লেকচারার ডেনিস বুইটেন
আরো পড়ুন :