অতিরিক্ত ওজন কিংবা শারীরিক স্থূলতার কারণে মানুষের বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘ-মেয়াদী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে শারীরিক স্থূলতা বা ওবিসিটির যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
পরিসংখ্যান বিভাগের () সূত্রে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ বছরে অস্ট্রেলিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগ পূর্ণ-বয়স্ক ব্যক্তি ওভারওয়েট এবং ওবিজ ছিলেন। এদের মধ্যে ৩১.৩ শতাংশ ওবিজ বা স্থূলকায়।
ওবিসিটি সম্পর্কে নিউ সাউথ ওয়েলসে কর্মরত জিপি ডাক্তার মাহবুবুল ইসলাম বলেন,
“ওবিসিটি বলতে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা বুঝি যে, মোটা মানুষ, অথবা চর্বি বেশি শরীরে।”
“সহজ এবং সঠিকভাবে (ওবিসিটি) নির্ণয় করার জন্য আমরা একটা ফর্মুলা ব্যবহার করি। তাকে বলি আমরা BMI (Body Mass Index). এখানে বডি ওয়েট নেওয়া হয় কিলোগ্রামে আর উচ্চতা বা হাইট নেওয়া হয় মিটারে। উদাহরণ স্বরূপ, মনে করেন একজন লোকের ওজন ৬৪ কিলোগ্রাম। তার উচ্চতা ১৬০ সে.মি. অর্থাৎ, ১.৬ মিটার। এখন ৬৪ কে ভাগ করতে হবে আমাদেরকে ১.৬ এর স্কোয়ার (বর্গ) ২.৫৬ দিয়ে। করলে ফল হবে ২৫। অর্থাৎ, তার বিএমআই হলো ২৫।”
শরীরের ওজনকে কতগুলো গ্রেডে ভাগ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেমন, নর্মাল বডি ওয়েট, ওভার ওয়েট এবং ওবিসিটি।
যাদের বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ পর্যন্ত তারা নরমাল বডি ওয়েট শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
যাদের বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯ পর্যন্ত তারা ওভার ওয়েট পর্যায়ভুক্ত।
আর যাদের বিএমআই ৩০ এর বেশি তারা ওবিসিটি পর্যায়ভুক্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওবিসিটির তিনটি শ্রেণী নির্দেশ করেছে।
গ্রেড-১: বিএমআই ৩০ থেকে ৩৫
গ্রেড-২: বিএমআই ৩৫-৪০ এবং
গ্রেড-৩: বিএমআই ৪০ এর উপরে।ডাক্তার মাহবুব বলেন, অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা একই বিষয় নয়। তবে, যাদের ওভার ওয়েট আছে তাদেরই একসময় ওবিসিটির দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
Overweight woman pinching a roll of fat on her side. Source: Getty Images
তিনি বলেন, সাধারণ লোকের সাথে তুলনা করলে, “যাদের ওবিসিটি হয়, তাদের কতগুলি রোগ বেশি হয়। ... যেমন, ব্লাড প্রেসার বেশি হয়, হৃদরোগ বেশি হয়, ব্রেনে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক বেশি হয়, ডায়াবেটিস. গলব্লাডারে রোগ ও ক্যান্সার বেশি হয়।”
দৈনন্দিন খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ক্যালোরি উৎপন্ন হয় এবং কথা-বার্তা, হাঁটা-চলা ইত্যাদি কাজে সে ক্যালোরি ব্যয় হয়। বেঁচে যাওয়া ক্যালোরি চর্বি হিসেবে শরীরে সঞ্চিত হয়। ওবিসিটির কারণ হিসেবে ডাক্তার মাহবুব বলেন,
“যান্ত্রিক যুগে আমাদের সময় কম, আমরা এক্সারসাইজ (শারীরিক ব্যায়াম) কম করি। কিন্তু, আমরা ফাস্টফুড ও সফট ড্রিংক খাই।”
তিনি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
“আমাদেরকে লেস ফ্যাটি ফুড খেতে হবে, কম চিনিযুক্ত খাবার খেতে হবে। অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। কমপক্ষে আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে, পাঁচ দিন, সপ্তাহে।”
শিশুদের স্থূলতা সমস্যা নিয়ে ডাক্তার মাহবুব বলেন,
“বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ওবিসিটি বেড়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা ঘরে বসে থাকে, ইন্টারনেটে বসে থাকে অথবা টেলিফোন নিয়ে বসে থাকে, (কম্পিউটার ও মোবাইলে) গেমস খেলে। তারা কোনো কাজ-কর্ম করে না, দৌঁড়াদৌড়ি খেলাধুলা কিছু করে না। তাই তাদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন,
“যে-সব বাচ্চার ওজন বেড়ে যায়, বড় হলে তাদের স্থূলতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।”
ওজন কীভাবে কমানো যায়?
ওজন কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ক চিকিৎসকের ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। খাবার গ্রহণ কমানো প্রসঙ্গে ডাক্তার মাহবুব বলেন,
“আমাদেরকে জানতে হবে যে, কী খাবার কমাতে হবে।”
খাদ্য গ্রহণ কমানোর ক্ষেত্রে হঠাৎ করে না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমানোর উপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন,
“আমাদেরকে জানতে হবে যে, ওবিসিটি আসলে কী? খাদ্য সম্পর্কে আমাদেরকে কেয়ারফুল হতে হবে আর এক্সারসাইজ করতে হবে।”
ডাক্তার মাহবুবুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।