করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভিক্টোরিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ঈদের আমেজ ম্লান হয়ে গেছে
প্রশ্ন করেছিলাম মেলবোর্নের বাসিন্দা এবিসি ইনস্টিটিউটের সিইও মিঃ আবু সাদিককে এবারের ঈদ কিভাবে পালন করছেন তিনি?
মিঃ সাদিক বলেন, "সবার জন্য ঈদ সমান, এটা মেনেই ঈদ করতে হবে আমাদের, যদিও করোনার এই সময়ে আমাদের ঘরে বসেই ঈদ করতে হচ্ছে।"ভিক্টোরিয়া রাজ্যের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, "সরকারি নিয়ম বা বিধি-নিষেধ মেনেই ঈদ পালন করতে হবে আমাদের, সামাজিক দূরত্ব মেনে, স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে গাইডলাইন মেনে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। তাই আমরাও ঘরের মধ্যে থেকেই সীমিত পরিসরে ঈদ উদযাপন করবো।"
Abe Sadek Source: Supplied
মেলবোর্নের সংস্কৃতি কর্মী এবং শিল্পী মিসেস মিতা চৌধুরী বলেন, "সময়টা খুব অস্থির, সত্যিকার অর্থে এবার ঈদের কোন আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ ভেতর থেকে কোন আগ্রহ বা উৎসাহ কাজ করছে না এবার।"তিনি বলেন, "এবার মনে হয় অন্য দশদিন যেমন যাবে, ঈদের দিনটাও তেমনি যাবে, যেহেতু কেউ নামাজও পড়তে যাচ্ছে না, বা কেউ কারো বাসায় যেতে পারছে না।"
Mita Chowdhury Source: Subir Photography
সাম্প্রতিক সময়ের করোনা পরিস্থিতির বিবেচনায় মিসেস মিতা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা এবং মেলবোর্নের অবস্থার সার্বিকভাবে মনের ভেতর থেকে কোন আনন্দ কাজ করছে না।
তিনি বলেন, "এরপরেও মেলবোর্নের অনেককেই খুদে বার্তা পাঠিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি, আজ শুক্রবার সীমিত পরিসরে ঈদ পালন করছি।"
একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেলো মেলবোর্নের বাসিন্দা প্রকৌশলী শামসুল আরেফিনের নিকট থেকে।
মিঃ আরেফিন বলেন, "মেলবোর্নের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ, গত ঈদের মৌসুমে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল, কিন্তু এবার দ্বিতীয় ধাপের ভাইরাসের ঢেউয়ে অনেকেই বেশ সতর্ক, যে কারণে আমরা কমুনিটির পক্ষ থেকে ঈদ উদযাপনের তেমন কোন উদ্যোগ বা কার্যক্রম নেইনি।"তিনি বলেন, ঘরে বসে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করাটাই শ্রেয় মনে করেন তিনি।
Shamsul Arefin Source: Subir Photography
"আমরা কিছু রান্না করবো, ঈদ হবে নিজেদের মধ্যে, পরিবারের বাইরে কারো সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। যদিও অনেকে জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছে, তবে সবাই বেশ সতর্ক, সবাই মাস্ক ব্যবহার করছে, কারণ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যদি বেড়ে যায় তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে, এটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি।"
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে আছেন পার্থের বাসিন্দারা
পার্থের গণমাধ্যম কর্মী নির্জন মোশাররফ জানান, পার্থসহ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা ভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতিতে যথেষ্ট নির্ভার আছেন।
"এখানকার বাসিন্দারা খুবই সন্তোষজনক অবস্থায় আছেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন একেবারেই নেই, কারো মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে না। এখানে সক্রিয় কেস মাত্র ছয় এবং তারা ঘরেই অবস্থান করছেন।"
মিঃ নির্জন জানান, করোনার এই সময়ে অনেকে শুক্রবার এবং যারা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল তারা কেউ কেউ শনিবার পৃথকভাবে ঈদ পালন করছেন এখানে।ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটি ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শনিবারের জন্য। তাই অনেকেই ছুটির দিন হিসেবে এদিনটিকে বেছে নিয়েছেন।
Nirjon Mosarrof Source: Supplied
তিনি বলেন, "এই জামাতের জন্য ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যারা টিকেট কিনছেন তারাই শুধু জামাতে অংশ নেবেন। তবে এই জামাতে দু'মিটার দূরত্বের বিষয়টি সতর্কতার সাথে পালন করা হবে।"
মি: নির্জন জানান, বাংলাদেশী নারীরা অনেকেই শুক্রবার রাতে মেহেদী নাইট পালন করবেন বলে জানা গেছে।
"যেহেতু গত রোজার ঈদে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে সবাই কিছুটা ভীত ছিল, তাই এবার এখানে পরিবেশ যথেষ্ট ভালো বলে সবাই ঈদ পালন করতে মুখিয়ে আছে।"
ব্রিসবেনের বাসিন্দারা ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই হলো ছন্দপতন
কুইন্সল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতি বেশ উন্নতি করছিলো বেশ কিছুদিন ধরে, কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু ঘটনায় কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়ে উঠে এবং নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্রিসবেনের প্রেসিডেন্ট এবং চিকিৎসক-গবেষক ডঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, "কুইন্সল্যান্ডে করোনা কেস শুরুর দিকে কিছুদিন বাড়লেও একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, গত ৪৬-৪৭ দিন ধরে কোন নতুন শনাক্ত রোগী ছিল না। আমরা প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসছিলাম। দুদিন আগে দুটি নতুন শনাক্তের ঘটনা জানা যায় যারা অন্য স্টেট থেকে ভ্রমণ করে এসেছে। তারা গত আট দিন আগে ভ্রমণ করে এসেছে এবং অসত্য ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। আর এতেই কর্তৃপক্ষ আবারো বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।"হঠাৎ এই ছন্দপতন সম্পর্কে ডঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, "আমরা গত ৪৬-৪৭ দিন বেশ স্বস্তিতে ছিলাম, ভেবেছিলাম সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আর তাই আমরা পরিকল্পনা করছিলাম ঈদের প্রস্তুতি বিষয়ে, কোন মসজিদে কয়টায় জামাত হবে এব্যাপারে সবাই খোঁজ করছিলেন, সবাই ঈদ উদযাপনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু গত পরশু থেকে এই খবরে সবাই কিছুটা হতাশ হয়েছেন।''
Dr Zahirul Islam Source: Supplied
তিনি বলেন, এর ফলে সব প্রার্থনা বাতিল করা হয়েছে, সরকার সম্ভাব্য হটস্পটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং সবাইকে মাস্ক পড়তে অনুরোধ করেছে।
"সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা সবাই যার যার ঘরে ঈদ পালন করছি এবং সামাজিক সমাবেশ এড়িয়ে চলছি।"
ডঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, কমুউনিটির একটি বড়ো অংশই শনিবার ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকলেও ঈদের জামাতে অল্পসংখ্যক মুসল্লি শরিক হয়েছেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়
এডেলেইড থেকে হেলথ অফিসার মিঃ জিয়াউল খান জুয়েল জানান, এডেলেইডে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও 'নট আউট অফ ডেঞ্জার', কারণ গতকালও একজনকে ভাইরাসে শনাক্ত করা হয়েছে, তিনি আরেকটি স্টেট থেকে এসেছেন।
মিঃ জুয়েল জানান, "করোনাভাইরাসের ভীতি এবং সামাজিক দূরত্বের বিধি থাকার কারণে এডেলেইডে অল্পসংখ্যক মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া এবারের ঈদের নামাজে প্রি-বুকিং সিস্টেমের কারণেও সুযোগ সীমিত হয়ে যাওয়ায় বেশি সংখ্যক লোক নামাজ পড়তে পারেননি।"হেলথ অফিসার হিসেবে ফ্রন্ট-লাইনে কাজ করছেন মিঃ জিয়াউল খান জুয়েল, তাই কাজের দায়বদ্ধতার কারণে তারও ঈদ পালনের সুযোগ কিছুটা সীমিত হয়ে পড়েছে এবার।
Ziaul Khan Jewel Source: Supplied
তবে ব্যক্তিগতভাবে এডেলেইডে আত্মীয় পরিবেষ্টিত মিঃ জুয়েল বলেন, এতো ব্যস্ততার পরেও তাকে সামাজিক প্রয়োজনে ঈদ পালন করতে হয়।
"এখানে আমার ভাইবোনেরা আছে, সকালে একটু রেস্ট নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাবো, দুপুরে এবং রাতে অনেকের বাসায় দাওয়াত আছে।"
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে একজনের বাসা থেকে আরেকজনের বাসায় যেতে কোন বাধা নেই বলে জানান মিঃ জুয়েল।
"ইনডোরে সর্বোচ্চ ৫০ জনের সমাবেশের অনুমোদন আছে, তাই এখনো আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করতে যাওয়া সম্ভব। "
তিনি বলেন, "যদিও আমরা প্রবাসে ভালো আছি, তারপরেও সবার কাছে অনুরোধ আমরা যাতে বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কথা মনে রাখি, অসুস্থরোগীসহ সকলের জন্য যেন আমরা দোয়া করি।"
আরো পড়ুন:
READ MORE
করোনাকালে ঈদুল আজহা