প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার প্রস্তুতি নিয়ে অনন্য ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। আল্লাহর নির্দেশেই তিনি ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন মক্কার মরু প্রান্তরে। মহান আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সংকল্পের দৃঢ়তা দেখে তাঁর কোরবানি কবুল করেন এবং হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে একটি দুম্বা কোরবানি মঞ্জুর করেন। এরই সূত্র ধরে গোটা মুসলিম জাহানে আজও চলে আসছে কোরবানির এই ধারা। এর ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলিম জাতি।
কোরবানি মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাঁদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাঁদের ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। পশু কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও সম্পদত্যাগই হলো কোরবানি। কোরবানি শুধু একটি আনন্দ-উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও দর্শন।
ঈদুল আজহা আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত এক অনন্য আনন্দ উৎসব। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে মানুষের ভেতরে থাকা পশুশক্তি, কাম-ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই ত্যাগ করতে হয়। তাই শুধু পশু নয়, প্রয়োজন পশুত্বের কোরবানি। কোরবানিদাতা শুধু পশুর গলায় ছুরি চালান না, তিনি তাঁর সব কুপ্রবৃত্তির ওপরও ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করেন। এটাই হলো কোরবানির মূল শিক্ষা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে এ অনুভূতি অবশ্যই প্রয়োজন।
আজ এমন একসময়ে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে, যখন সারা বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা ওষুধ বাজারে আসেনি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। অনেকের আত্মীয়-স্বজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তাদের বাড়িত ঈদর আনন্দ নেই। অন্য দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ বন্যাপীড়িত। অনেক ঈদগাহ হয়তো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ওই সব এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির অঙ্গীকার করতে হবে। বিত্তবৈভবের প্রতিযোগিতা ও মহড়া না দেখিয়ে দুস্থ ও দুর্গত মানবতার পাশে দাঁড়ানো এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদন :ঢাকা প্রতিনিধি।