অস্ট্রেলিয়ার বাইরে হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও স্থায়ী অভিবাসী আটকা পড়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল ক্যাপ আরোপ করেছে তার জন্য দেশে ফিরতে পারছেন না তারা।
আজ শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল কেবিনেটে লেবার দল বিষয়টি উত্থাপন করবে এবং আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ানদেরকে সহায়তা করার জন্য ফেডারাল সরকারকে চাপ দিবে।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় ৪,০০০ ব্যক্তি আগমন করতে পারেন। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে চাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রায় ১৯,০০০ অস্ট্রেলিয়ান দেশে ফিরতে পারছেন না।
গত জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল কেবিনেট বিদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আগমনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে এবং ক্যাপ প্রয়োগ করে। কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টিন প্রোগ্রামের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য এ ব্যবস্থা।বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কথা ছিল মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন ও তার পরিবারের। কিন্তু, নির্ধারিত ফ্লাইটের মাত্র তিন দিন আগে তাদের ফ্লাইট বাতিল করে দেওয়া হয়। এসবিএস বাংলাকে তিনি বলেন,
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কথা ছিল মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন ও তার পরিবারের। কিন্তু, নির্ধারিত ফ্লাইটের মাত্র তিন দিন আগে তাদের ফ্লাইট বাতিল করে দেওয়া হয়। Source: Nahid Hossain
“আমরা, বাংলাদেশের বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক, মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন ও নিশাত আফরিন, আমি এবং আমার পরিবার ২০২০ সালের জুলাই থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার চেষ্টা করছি, তবে একের পর এক অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের সীমাবদ্ধতা জন্য অপরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক বিমান ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছেI”
“এর আগে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের দেশে ফিরতে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে পুরোপুরি প্রশংসা করছি। তবে, আমাদের মতো যারা গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন, তাদের পক্ষে ২০/২৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে প্যাকআপ করা সহজ ছিল না। এজন্য আমরা চার্টার্ড ফ্লাইটগুলি ফ্লাই করতে পারি নি।”
“এখন আমরা যখন ফিরতে প্রস্তুত এবং ২০২০ সালের জুনে আমরা ৫ ই সেপ্টেম্বর আমরা টিকেট কিনেছিলাম তার পুরো অর্থ প্রদান করা হয়েছে এবং এখন তিন দিন আগে হঠাৎ আমাদের জানানো হয়েছিল, যে অস্ট্রেলিয়ান অভিবাসনের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে আমরা ফ্লাই করতে পারছি নাI”
নাহিদ হোসেন বলেন, অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ফ্লাইটে ৫০ থেকে ২৫ জন যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস করছে বুকিং সিরিয়াল অনুযায়ীI
তিনি বলেন,
“আমরা নিশ্চিত যে কর্তৃপক্ষ প্রতিটি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এবং স্থায়ী আবাসের (অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম প্রবেশ) প্রয়োজনীয়তার কথা না জেনে যাত্রীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন ঢাকা অফিস মূলত আমাদের জানায়, তারা কোনও বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সে হস্তক্ষেপ করে না।”
এ রকম পরিস্থিতিতে নাহিদ হোসেন বিভ্রান্ত বোধ করছেন। তিনি বলেন,
“সুতরাং, এই ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত। দ্বৈত নাগরিক হিসেবে আমরা সঠিক সমাধান এবং অসহায় বোধ জন্য কার কাছে যেতে হবে তা আমরা জানি না।”
হঠাৎ করে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় নাহিদ হোসেন ও তার পরিবার নানা রকম সমস্যায় নিপতিত হয়েছেন। তিনি বলেন,
“আমাদের একটি শিশু রয়েছে, যার বয়স ৭ বছর এবং তার স্থায়ী আবাসিক ভিসা পেয়েছি এই বছর এবং নির্ধারিত সময়ের আগে তার অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করা প্রয়োজন।”
বাচ্চাটির স্কুলের পড়াশোনার সমস্যার কথাও বলেন তিনি।
“আমাদের সাত বছরের বাচ্চাটি ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে স্কুল ছাড়াই রয়েছে, যা তার শিক্ষার উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছেI”
এদিকে, বিমান-যাত্রার আগে কোভিড-১৯ টেস্টের বুকিং দিয়েছিলেন তারা। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে তাদের আবাস্থল খালি করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি।
“আমরা ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে বর্তমান আবাসস্থল খালি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিI”
নাহিদ হোসেনের মতো , করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে তারা যেন অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারেন সেজন্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল ক্যাপ বৃদ্ধি করার জন্য।