প্রায় তিন দশক পর অস্ট্রেলিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিল। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যবসা-মালিকরা বলেন, তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না।
কাজে আসাটা অঞ্জু গয়ালের কাছে সবসময়েই উপভোগ্য ছিল। কিন্তু, তিনি বলেন, এখন তার মন খারাপ হয়ে যায়।
মিজ গয়াল এবং তার স্বামী সিডনিতে সিল্ক অ্যান্ড স্পার্কল নামে একটি বুটিক শপ চালান। ভারতীয় বিয়ের পোশাকের ডিজাইন ও পোশাক তৈরি করেন তারা।
কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর প্রাদূর্ভাবের আগে একই সময়ে তারা ১৫ টিরও বেশি পোশাকের ট্রায়াল করাতেন। এখন মাসে একটি কিংবা দু’টির বেশি কাজ পান না।
এসবিএস নিউজকে মিজ গয়াল বলেন,
“কাজে আসাটা অনেক উপভোগ্য ছিল। তবে এখন এটি অনেক মন খারাপ করে দেয়। আমি ডিজাইন করা বন্ধ করতে চাই। এতে শুধু শুধু খরচ বাড়ে।”
“এ সবই অর্থনীতির উপরে নির্ভর করে। শুধু আমিই নই, সবাই এতে প্রভাবিত হয়েছে।”বুধবার অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অফ স্টাটিস্টিক্স (এবিএস) এর প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, । করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এবং লকডাউনের কারণে এই অবস্থা।
خانم گویال بیش از ۱٥ سال در این صنعت تجربه دارد. اکنون او میگوید رفتن بر سر کار «خیلی افسرده کننده» است. Source: Supplied
সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট (জিডিপি) গত জুন কোয়ার্টারে রেকর্ড পরিমাণ, ৭ শতাংশ কমে গেছে। এর আগে কখনই এ রকম হ্রাস পায় নি।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, মার্চ কোয়ার্টারে জিডিপি ০.৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এর মানে হলো, দেশটির পর পর দু’টি কোয়ার্টারে নেগেটিভ গ্রোথ দেখা গেল। রিসেশন বা অর্থনৈতিক মন্দার এটি সাধারণ সংজ্ঞা।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর, ট্রেজারার জশ ফ্রাইডেনবার্গ ক্যানবেরায় রিপোর্টারদেরকে বলেন,
“এই সংখ্যাগুলো অত্যন্ত গুরুতর ও খারাপ।”
তিনি বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারীর ফলে অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
প্রাইভেট সেক্টর ব্যাপকভাবে মার খেয়েছে। এই কোয়ার্টারে প্রাইভেট ডিমান্ড ৭.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ঘরোয়া খরচ কমে গেছে ১২.১ শতাংশ এবং ১৭.৬ শতাংশ কমেছে পরিষেবা খরচ। নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে বহু ব্যবসা বাধ্য হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
মিজ গয়াল বলেন, তাদের সমস্যা শুরু হয় যখন মে মাসে বুক হওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এ বছরের সেপ্টেম্বর কিংবা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
তিনি বলেন,
“আমরা সেই ড্রেসগুলো তৈরি করেছি। কিন্তু, খদ্দেররা এসে বলে, তাদের আর বিয়ে করার মতো উচ্ছ্বাস নেই। আমরা জানি না, কোন ধরনের অনুষ্ঠান আমরা করতে পারবো।”
অন্যান্য বহু ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলোর মতো, মিজ গয়াল বলেন, ভিক্টোরিয়ায় ভাইরাসটির দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কা নিয়ে তিনি ভীত ছিলেন।
তিনি বলেন, যেসব খদ্দেরের এপ্রিলে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল “তারা এখনও কিছু করতে কিংবা কোনো কিছু বুক করতে ভয় পাচ্ছে”।
এদিকে, তাদের ব্যবসা চালু রাখার খরচ কিন্তু একই রকম রয়েছে।
তিনি বলেন,
“প্রথম তরঙ্গের পর সবকিছু ঠিক ছিল। তবে, দ্বিতীয় তরঙ্গের পর আক্ষরিক অর্থে সবার অবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে যায়।”
“পাওয়ার বিল, সিকিউরিটি বিল, স্ট্রাটা পেমেন্ট ... এসবের জন্য কোনো স্বস্তি নেই। এদিকে ব্যাংকও পেমেন্ট স্থগিত করেছে কিন্তু দিনের শেষে আপনাকে অবশ্যই পে করতে হয়।”
বুধবারে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তে আরও দেখা যায় বেতনের ক্ষেত্রে রেকর্ড পরিমাণ, ২.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এবিএস বলছে, সরকারের জবকিপার ওয়েজ সাবসিডি না থাকলে এটি আরও বড় অঙ্ক হতে পারতো।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইতোমধ্যে বহু সংখ্যক ব্যক্তি বেকার হয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো এক মিলিয়নেরও বেশি লোক বেকার হয়েছেন।তবে মিস্টার ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তা না থাকলে আরও ৭০০,০০০ লোক কর্মহীন হতে পারতো এবং বেকারত্বের হার পাঁচ শতাংশ বেশি হতে পারতো।
Australian Treasurer Josh Frydenberg speaks to the media during a press conference at Parliament House. Source: SBS News
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বেশিরভাগ উন্নত দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া উৎকৃষ্টতর স্থান।
“অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এড়াতে সম্ভাব্য সবকিছুই আমরা করেছি”, বলেন তিনি।
“পুনর্গঠনের পথ দীর্ঘ হবে, এই পথ কঠিন হবে এবং অনেক প্রতিকূল হবে।”
আর কিছুদিন পর গ্রীষ্মকালে বিয়েশাদীর মৌসুম আসছে। মিজ গয়াল বলেন, তখন তারা “দিনে দিনে” তাদের ব্যবসা পরিচালনা করবেন।
তিনি এখনও আশাহত নন।
“সুনিশ্চিতভাবে, আমরা আবারও ফিরে আসবো। প্রতিটি মন্দেরই একটি ভাল সমাপ্তি থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জন-সমাগমের সীমা সম্পর্কে জানতে আপনার রাজ্যের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখুন।
আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ঘরে অবস্থান করুন এবং আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: