গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- ইসলামী ব্যাংকিয়ের মূল বিষয় হচ্ছে সুদবিহীন আর্থিক লেনদেন, আর তাই প্রচলিত ব্যাংকিং থেকেও এটি আলাদা
- যেসব দেশে ইসলামী ব্যাঙ্কিং রয়েছে সেগুলো আইনের আওতায় আছে এবং 'হাইলি রেগুলেটেড ইন্ডাস্ট্রি'
- অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আকার অন্তত ২.৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার
প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ কবির হাসান ইসলামিক ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্সে ২০১৬ সালে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) পুরস্কারের বিজয়ী। ডঃ হাসান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা-লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইসলামী ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্সের একজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক।
আজকের আয়োজনের অপর আলোচক ডঃ তন্ময় চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক বাজার এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাংকিংয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ।
ইসলামী ব্যাংকিয়ের মূল বিষয় হচ্ছে সুদবিহীন আর্থিক লেনদেন, আর তাই প্রচলিত ব্যাংকিং থেকেও এটি আলাদা।
ডঃ কবির হাসান বলেন, প্রচলিত ব্যাংক আপনাকে ঋণ দেবে এবং তার বিপরীতে তারা সুদ ধার্য্য করবে, এভাবেই সাধারণ ব্যাংকিং কাজ করে।
"অন্যদিকে ইসলামে অর্থ লেনদেন করা যায়, কিন্তু সেখানে বাড়তি চার্জ করা যাবে না, এটি পবিত্র কোরানে আল্লাহ তা'লা হারাম ঘোষণা করেছেন।"
"কিন্তু কোরান শরীফে আল্লাহ তা'লা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। সুদ শুধু ইসলামেই নয়, সকল আব্রাহামিক ধর্মে যেমন খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মেও সুদ নিষিদ্ধ," বলেন তিনি।ডঃ হাসান বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং ইসলামী অর্থায়নের অংশ। তবে তিনি স্বীকার করেন অনেকেই সন্দেহ বা সমালোচনা করেন যে ইসলামী ব্যাংকগুলো কি 'হালাল ব্যবসার' নামে প্রকারান্তরে 'ঘুরিয়ে ফিরিয়ে' সুদ নিচ্ছে কিনা।
Professor Dr. Mohammad Kabir Hassan is a Professor of Finance in the Department of Economics and Finance at the University of New Orleans. Source: Dr. Mohammad Kabir Hassan
তিনি বলেন, অর্থায়নের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কিছু নিয়ম আছে যা অন্যান্য ব্যাংকগুলো থেকে আলাদা এবং ইসলাম সম্মত।
অর্থায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলামী ব্যাংকটির একটি চুক্তি হয় এবং ওই ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর লাভ-ক্ষতির হিসাব পর্যবেক্ষণ করা।
"ব্যাংকগুলো তথ্য সংগ্রহ করে,...যদি তারা মনিটরিং, ক্রেডিট এনালাইসিস ইত্যাদি কাজগুলো করে তবে ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি করার প্রবণতা কমে যায়, তাই সেদিক থেকে সমস্যা নেই, যেসব দেশে ইসলামী ব্যাঙ্কিং রয়েছে সেগুলো আইনের আওতায় আছে এবং 'হাইলি রেগুলেটেড ইন্ডাস্ট্রি'।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মূল বিষয় হচ্ছে সুদবিহীন ইসলাম সম্মত অর্থায়ন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একই ব্যাংক সুদ-ভিত্তিক ঋণ দিচ্ছে এবং আবার তাদের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের শাখাও আছে, এ বিষয়টি ডঃ হাসান 'সাংঘর্ষিক' বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, "আমার দৃষ্টিতে একই ব্যাংকে দুই ধারার ব্যাঙ্কিং থাকা উচিত না, আপনি হারাম এবং হালালকে মেশাতে পারবেন না।"
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো তো অবশ্যই, এমনকি পাশ্চাত্যের অনেক উন্নত দেশগুলোতেও ইসলামী ব্যাঙ্কিং-এর ধারণা গুরুত্ব পাচ্ছে, ভবিষ্যতে এর সাফল্য নিয়ে ডঃ হাসান বেশ আশাবাদী।
তিনি বলেন, "আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে বলি যে, রিশেয়ারিং ইজ ক্রিটিক্যাল ফর একুইটেবল ইকোনমিক গ্রোথ ইন আ কান্ট্রি। যেহেতু ইসলামী ফাইন্যান্সের মৌলিক বিষয়টি রিশেয়ারিংয়ের উপর ভিত্তি করে, এজন্য পাশ্চাত্যের স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহ বাড়ছে।"
তবে সেইসাথে কিছু আশংকাও আছে বলে মনে করেন ডঃ হাসান।
তিনি বলেন, "যদিও এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কনসেপ্ট, কিন্তু এটির নিয়ন্ত্রণ পাশ্চাত্যের হাতে। তাদের যে টেকনিক্যাল নো-হাউ (পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনার প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা) তাতে তারা সহজেই এই সিস্টেমে ঢুকে যেতে পারবে।"
অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা ৬ লাখেরও কিছু বেশি, অর্থ্যাৎ মোট জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার চিত্রটি কেমন?
পার্থের এডিথ কাউয়ান ইউনিভার্সিটির লেকচারার ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আকার অন্তত ২.৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
Dr. Tonmoy Choudhury is a lecturer at the School of Business and Law of Edith Cowan University, Australia. Source: Dr. Tonmoy Choudhury
"অস্ট্রেলিয়ার মত ছোট জনসংখ্যার একটি দেশে এই ২.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের একটি ইন্ডাস্ট্রি, ইট'স আ প্রিটি বিগ ইন্ডাস্ট্রি," বলেন ডঃ তন্ময় চৌধুরী।
তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এর সাথে অনানুষ্ঠানিক ব্যাঙ্কিং যোগ করলে এটির আকার প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার হবে।
তিনি বলেন, "অস্ট্রেলিয়ার বড় চারটি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাঙ্ক বা ন্যাব এখনো পর্যন্ত শুধু বিজনেস সেক্টরে ইসলামী ফাইন্যান্স শুরু করেছে, হোম লোন সেক্টরে নয়।"
কিন্তু ড: চৌধুরী বলেন, ইসলামী ফাইন্যান্সের বড় চাহিদা আসলে বাড়ি কেনার ঋণের জন্য। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ির দাম অনেক বেশি।
তিনি বলেন, "আমরা ধারণা করছি ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী অর্থায়নের লাইসেন্স দেবে। তখন প্রকৃতপক্ষে বোঝ যাবে অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ইসলামী ফাইন্যান্সের চাহিদা কতটুকু।"
তবে একই সাথে ইসলামী ফাইন্যান্স যথেষ্ট লাভজনক হবে বলে মনে করেন ড: চৌধুরী। যদিও ইসলামী ব্যাঙ্কিং অস্ট্রেলিয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, তারপরেও তিনি আশা করছেন আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এটি কলেবরে বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে।
পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: