পুর্ণ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন পাওয়া ব্যক্তিরা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন —
নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান এর এই ঘোষণা পর জনমনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
টিকা না নেয়া ব্যক্তিদের জীবন এখন লক ডাউন পরিস্থিতির মতই থাকতে পারে, অর্থাৎ, তারা কেবল অপরিহার্য সেবার অধিকার পাবেন।
তারা টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মত স্বাধীনভাবে সর্বত্র চলাফেরা করতে পারবেন না।
এদিকে বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ তাদের প্রার্থনালয় অর্থাৎ চার্চ, মসজিদ, মন্দির বা সিনাগগে বিশ্বাসীদের প্রবেশাধিকারকে অপরিহার্য বলে দাবী করেছেন।
তাদের অনেকে সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রী ব্র্যাড হ্যাজার্ড এর কাছে তদ্বির করছেন। ধর্মাচরণকারীদের পূর্ন ডোজ টিকার বাধ্যতা বিধান প্রশ্নে কিছু ধর্মগুরু জনসমক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
এংলিকান মিনিস্টার ফিলিপ কোলগান সেইন্ট জর্জ নর্থ এংলিকান চার্চের সিনিয়র মিনিস্টারের দায়িত্বে আছেন। তিনি সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স বা সরকারের বিরুদ্ধাচরণকে কোন উচিৎ পন্থা বলে মনে করেন না এবং তিনি এ ধরণের কর্মকান্ডের স্পষ্ট বিরোধিতাও করেন।
তবে এক্ষেত্রে তার শংকার জায়গাটা হচ্ছে- ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট চালু হলে ভ্যাক্সিন না নেওয়া ব্যক্তিরা ধর্মীয় কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তিনি বলেন,
খ্রিষ্ট ধর্মমতে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। যীশু তো সবার কাছেই ধর্মের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। তার মধ্যে পাপী, অচ্ছুৎ এমনকি কুষ্ঠ রোগীরাও ছিল।
ক্যাথলিক আর্চডায়োসিস অফ সিডনীর মিস মনিকা ড্যুমিট জানান,
পোপ ফ্রান্সিস থেকে শুরু করে অধঃস্তন কেন্দ্র সহ সমগ্র চার্চ কর্তৃপক্ষ সবাইকে টিকাদানে উৎসাহ দিয়ে আসছেন।
তবে সরকারের টিকা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনে প্রার্থনাকে
অন্যান্য অপরিহার্য পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন।
বিশপ রবার্ট রাব্বাত অস্ট্রেলেশিয়ান মিডল ইস্টার্ন চার্চেস কনফারেন্স এর সভাপতি যাতে মেরোনাইট, মেলকাইট, অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান এবং সিরিয়ান ক্যাথলিক অন্তর্ভুক্ত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাধানের জন্য একটা ঐক্যমত্যে পৌঁছা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বাইবেলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নিজেকে যেভাবে আমরা ভালোবাসি এভাবে আমাদের আপন প্রতিবেশীকে ভালোবাসা উচিৎ।
পশ্চিম সিডনীর অবার্নে অবস্থিত গ্যালিপলি মসজিদের ইমাম এনভার ইয়াসার বলেন, ভ্যাক্সিন না নেওয়া মুসলিম মসজিদে আসতে পারবেন না — এই বিধিনিষেধ না হয় আরোপ করা যাবে কেননা আমরা সরকারের বিধিবিধান মানতে বাধ্য।
তবে এ ধরণের উদ্যোগের ফলে মুসলিম সম্প্রদায় সমস্যায় পড়তে পারেন। কেননা আমরা মুসল্লিরা মসজিদে দিনে পাঁচবার আসেন, বাকি ধর্মের মত সপ্তাহে একদিন নয়। যেখানে সারাদিনে এতবার এত মানুষ প্রার্থনায় আসছেন সেখানে কারা ডাবল ডোজ টিকা পেয়েছেন এসব দেখাশোনা করা কঠিন বৈকি!
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিল এবং গ্যালিপিলি মসজিদ টিকাদানে উৎসাহ দিতে যৌথভাবে কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিল এর প্রতিনিধি ইমাম ইব্রাহীম দাদুন জানান, তারা এ বিষয়ে অপরাপর ধর্মীয় সংগঠনের সাথে একযোগে কাজ করছেন।
ওয়েস্ট সিডনীতে চলমান কঠোর লকডাউন এবং কারফিউ এর মধ্যে এ বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। ইমাম দাদুন এই ফতোয়ার বিষয়ে বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ইসলামী বিধিবিধানের পরিপন্থী নয়। মানুষের জীবন রক্ষায় ভ্যাক্সিন আবশ্যক তাই, টিকা নেয়া আমাদের ঈমানি কর্তব্য।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গুজব আর অপপ্রচারে কান না দিয়ে এই বিশেষজ্ঞদের কাছে এই বিষয়ে জানতে পরামর্শ দিয়েছেন।
হিন্দু ও শিখ কমিউনিটির মধ্যেও এই প্রশ্নে একই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট নিয়ে উপাসনালয়ে প্রবেশ করার ধারনা সবার মতই তাদের কাছেও একেবারে আনকোরা।
হিন্দু কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরিন্দার জৈন এই প্রসঙ্গে ভারতের সদ্যবিগত প্রাদুর্ভাবের কথা স্মরণ করে বলেন,
একটা সময়ে দৈনিক তিন লক্ষেরও বেশি ভারতবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দৈনিক মারা গেছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। এই ঘটনাটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনে দাগ কেটেছে যা বেশিরভাগ হিন্দুকে টিকা নিতে উৎসাহিত করেছে।
তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কে যাবে কে যাবে না সরকারকে তা নির্ধারণ করা উচিৎ নয় বলে তিনি করেন। তার মতে ধর্ম আর রাজনীতি বা সরকার দুইটি আলাদা ব্যাপার, তাকে আলাদাই থাকা উচিৎ।
এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়াকেই সব দিকে দিয়ে যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন হারবির ভাটিয়া।
তিনি সিডনীর তুরামুরায় অবস্থিত শিখ উপাসনালয় শিখ নর্থ শোর গুরুদ্বারার সভাপতি। তার মতে কমিউনিটির মঙ্গলের জন্য সবার ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা উচিৎ। আমরা ভাইরাস থেকে মুক্ত না হতে পারি, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।