টাঙ বিনের মাতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী। ২০২০ সালের জুলাই মাসে যেদিন মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়, সেদিন তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।
আর, যেদিন তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়, সেদিনই তিনি ডাবল ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ভিয়েতনাম থেকে সাত বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন টাঙ বিন। তার স্বামী মিন-এর সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, লকডাউনের সময়টিতে মাত্র ১৪ মাসের ব্যবধানে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তানের জন্মের পরবর্তী কয়েক মাস ঘরে থাকার সময়টি তার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল। কীভাবে নবজাতকের দেখাশোনা করতে হয় সে-সব শিখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না তার পাশে।
মাদার্স গ্রুপ এবং হোম ম্যাটারনাল চাইল্ড হেলথ নার্সদের হোম-ভিজিট বন্ধ থাকায় নতুন মায়েরা কোনো সহায়তা পান নি।
মেলবোর্ন নর্থের মানপ্রীত কাউর লক্ষ করেন যে, কোভিডের সময়ে যে-সব সন্তানের জন্ম হচ্ছে, তারা ‘কোভিড বেবি’ নামে পরিচিত হচ্ছে।
মেয়ে সাগালের জন্মের সময়ে তার স্বামী পাশে ছিলেন। তবে, অনেক মায়েরই এ রকম সুযোগ হয় নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালে থাকার সময়ে তার স্বামী মাত্র দু’ঘণ্টার জন্য তাকে দেখতে আসতে পারতেন।
সন্তান জন্ম হওয়ায় আনন্দিত হলেও এর পাশাপাশি তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, কীভাবে তিনি এর দেখাশোনা করবেন।
তাদের সংস্কৃতি অনুসারে, সাগালের বয়স ছয় সপ্তাহ হওয়ার পর তাকে ঘিরে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, যেখানে দাদা-দাদী ও নানা-নানী-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা একত্রিত হতেন।
কিন্তু, ১৪ মাস পরেও, তার পরিবার সেই অনুষ্ঠানটি কিংবা সাগালের জন্মদিন — কোনোটিই উদযাপন করতে পারে নি। সাগাল এখনও তার দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর দেখা পায় নি।
মাল্টিকালচারাল উইমেন্স’ হেলথ গ্রুপ বলছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর মাঝারি থেকে তীব্র প্রভাব অনুভূত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ৯০ শতাংশ অভিবাসী ও শরণার্থী নারী।
মাল্টিকালচারাল সেন্টার ফর উইমেন্স’ হেলথ এর ড. আদেল মারডোলো বলেন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর বহু নতুন মা’কেই একাকী সন্তানের লালন-পালন করতে হয়েছে।
২০২০ সালে, ভিক্টোরিয়ান প্যারেন্টিং সাপোর্ট হটলাইন — প্যারেন্টলাইন-এ — ২১,৬০০ এরও বেশি সংখ্যক কল এসেছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় দুই হাজারেরও বেশি।
অস্ট্রেলিয়ায় নতুন মায়েদের অনেককেই কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে একাকী সন্তানের লালন-পালন করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে, অভিবাসী ও শরণার্থী পটভূমির মায়েদের জীবন-সংগ্রাম আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করেন ড. আদেল মারডোলো।
গবেষণায় দেখা যায়, যে-সব দেশে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত নয়, সে-সব দেশের মায়েরা প্রসব-পূর্ববর্তী সেবা লাভের জন্য আগ্রহী হন না এবং তাদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যও সন্তোষজনক নয়।
আইসোলেশনের কারণে হাজার হাজার নতুন মা অনলাইনে সহায়তা নিয়েছেন।
মেলবোর্নের এ রকম একজন নতুন মা নেহা লাথরা ছয় বছর আগে ‘কানেক্টিং ইনডিয়ান মামস’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেন। এর মাধ্যমে এ রকম মায়েদেরকে সহায়তা করা হয়, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে যারা বর্ধিত পরিবারের কারও, যেমন, দাদা-দাদী, নানা-নানীদের কাছ থেকে সহায়তা পান না।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়ে তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
সদস্যরা একে অপরকে পরামর্শ দেন এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকেন।
মিজ লাথরা বলেন, কাছাকাছি বাসকারী মায়েরা নতুন মায়েদেরকে খাবার এবং বাজার পৌঁছে দিয়ে সাহায্য করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে এই প্লাটফর্মটি তাদের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলো খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন অভিবাসীরা অন্তত এভাবে উপকৃত হতে পারবেন।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।