গর্ভবতী নারীরা জানেন, তাদেরকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টিকা গ্রহণ করতে।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্ড নিউ জিল্যান্ড কলেজ অফ অবস্টেট্রিসিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট এর ড. বিজয় রোচ বলেন, গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ সন্তান — উভয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে কোভিড-ভ্যাকসিন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের অবস্টেট্রিসিয়ান ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. ক্লেয়ার হোয়াইটহেড বলেন, গত বছরের শেষ দিকে যখন করোনা-সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়, তখন গর্ভবতী নারীদের নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক উদ্বিগ্ন ছিল।
ড. হোয়াইটহেড বলেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের জটিলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি ৩ জনে ১ জন নারীর শ্বাস-গ্রহণে সহায়তা করার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করার দরকার হবে এবং প্রতি ৭ জনে ১ জনের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যাওয়ার দরকার হবে।
ড. রোচ বলেন, অভিবাসী পটভূমির নারীদের উচ্চ-ঝুঁকির পেছনে কারণ কী, সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
মনাশ হেলথের ইনফেকশাস ডিজিজ ফিজিশিয়ান প্রফেসর মিশেল গিলস বলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীরই কোভিড-টিকা নেওয়া থাকে না।
ফেডারাল সরকারের হেলথ ওয়েবসাইট অনুসারে, এম-আরএনএ ভ্যাকসিনগুলো গর্ভবতী নারীদের জন্য ‘প্রেফারড ভ্যাকসিন’। অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত ফাইজার ভ্যাকসিনই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন মডার্না ভ্যাকসিনের সরবরাহ ক্রমশ বাড়ছে। প্রফেসর গিলস বলেন, গর্ভবতী নারীদের ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
প্রফেসর গিলস ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এম-আরএনএ ভ্যাকসিনগুলো নিজেরা সংক্রামক নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এম-আরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। এটা নিয়ে ভুল ধারণা আছে যে, এটি নতুন একটি পদ্ধতি, যা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয় নি।
প্রফেসর গিলস বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলো নতুন হলেও সেগুলো কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অবহিত।
তিনি বলেন, গর্ভস্থ সন্তানের কাছে শুধুমাত্র গর্ভবতী নারীর শরীরে উৎপন্ন হওয়া অ্যান্টিবডি পৌঁছুতে পারে।
বিদেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের উচ্চ ঝুঁকি থাকে মৃত কিংবা অপরিণত সন্তান প্রসব করার।
আর, প্রসবের সময়ে নবজাতকদেরও অনেক সমস্যা হয় এবং তাদেরকে নিউবর্ন ইনটেনসিভ কেয়ারেও রাখার দরকার হয়।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্ড নিউ জিল্যান্ড কলেজ অফ অবস্টেট্রিসিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট এর অবস্টেট্রিসিয়ান ও কাউন্সিলর ড. নিশা খোট বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মায়েরা ভাগ্যবতী। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মায়েদের মতো তাদের কোভিড-১৯ ঝুঁকির অভিজ্ঞতা হয় নি।
তিনি বলেন, সব ধরনের টিকা গ্রহণের পরই তাৎক্ষণিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া সম্ভবপর। যেমন, ইঞ্জেকশন লাগানোর স্থানে ব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, অস্তি-সন্ধিতে প্রদাহ, ইত্যাদি। তবে, টিকা-গ্রহণের পর সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এসব হতে দেখা যায়।
শুধুমাত্র গর্ভবতী নারীদেরই টিকা নেওয়া প্রয়োজন, বিষয়টি তা নয়।
মার্সি হসপিটাল ফর উইম্যানের ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সাব স্পেশালিস্ট ড. অ্যালিসন ফাং বলেন, যে-সব দম্পতি সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছেন, সন্তান নেওয়ার আগে তাদের উভয়েরই কোভিড-১৯ টিকা নেওয়া উচিত।
যারা মাত্র সন্তান প্রসব করেছেন, সে-সব নারীর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো মায়েদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে কোভিড টিকা গ্রহণের জন্য, যাতে করে তাদের মাঝেও অ্যান্টিবডি পরিবাহিত হয়।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।