মাদে পারভেজ ও তার সঙ্গী টিম সবসময়েই চাইতো তরুণ বয়সেই তাদের সন্তান হোক।
তাদের পরিকল্পনা ছিল সোজা-সাপ্টা ও পরিষ্কার: ২০ এর কোঠায় বিয়ে করা, এক সঙ্গে কয়েক বছর উপভোগ করা, তারপর সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করা।
কিন্তু, তাদের পরিকল্পনায় বাদ সেধেছে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
২৮ বছর বয়সী মাদে সুইডেন থেকে এসেছেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের সাউথ কোস্টে তিনি তার বিয়ের আয়োজনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখনই কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়।
ইওরোপ থেকে তার পরিবার যদি বিয়েতে যোগদান করতে না পারে, তাহলে এখন আর তিনি বিয়ে করবেন না, বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যমান সীমান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলোর অধীনে স্পাউস, ডি ফ্যাক্টো পার্টনার, ডিপেন্ডেন্ট চিলড্রেন এবং লিগাল গার্ডিয়ানরা অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। তবে, প্যারেন্ট ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রবেশ করতে পারবেন না।
কোভিড-১৯ এর কারণে সীমান্তগুলো বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
এমনকি, মহামারীর আগেও গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের বিষয়টি সাধারণভাবে এতোটা সহজ ছিল না।
আর, মহামারীর সময়টিতে জিপি কিংবা হাসপাতালে গর্ভবতী নারীদের চেক-আপের জন্য এবং সন্তান প্রসবের জন্য যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়।
কোভিড প্রাদূর্ভাবের এই সময়টিতে প্রসব-পরবর্তী ওয়ার্ডগুলোতে দর্শনার্থীদের যাওয়ার সুযোগ অনেক সীমিত। বাড়িতেও অতিথি গ্রহণ করার সুযোগ নেই। ফলে, নতুন মায়েরা আরও একাকী ও সহায়তা-বিহীন হয়ে পড়ছে।
এই রকম নাজুক পরিস্থিতিতে অভিবাসী নারীরা তাদের পরিবারের সাহচর্য পাচ্ছে না। অন্যান্য বহু নারীর মতোই, পরিবারের সহায়তা ছাড়া সন্তান নিতে চান না মাদে।
তার অবস্থা আরও করুণ হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে যখন তিনি জানতে পারেন যে, গর্ভধারণের জন্য তার এখন ফার্টিলিটি সহায়তার দরকার হবে।
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি স্টাডিজ দেখতে পেয়েছে যে, প্রতি পাঁচ জনে এক জন অস্ট্রেলিয়ান নারী এই মহামারীর কারণে তাদের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনায় পরিবর্তন করেছেন।
আর, প্রতি সাত জনে এক জন নারী বলেন যে, তাদের সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোভিড মহামারী প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, ৯২ শতাংশ নারী সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বিলম্ব করতে চান।
‘দ্য ফ্যামিলিস ইন অস্ট্রেলিয়া: টুয়ার্ডস কোভিড নরমাল’ নামের এই সমীক্ষাটি গত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিন হাজারেরও বেশি লোক অংশ নিয়েছেন। এতে আরও দেখা গেছে যে, অংশ নেওয়া নারীদের প্রতি দশ জনের মাঝে এক জনেরও বেশি নারী মহামারীর আগে তাদের প্রথম কিংবা পরবর্তী সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে, ১৮ শতাংশের বেশি নারী মহামারীর কারণে গর্ভধারণের জন্য পুরোপুরি কিংবা আংশিক চেষ্টা করেন নি।
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিশ্চয়তাও নারীদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। মহামারীর সময়টিতে গর্ভধারণের চেষ্টা না করা ৬২ শতাংশ নারী কাজ হারিয়ে কষ্ট করেছেন।
এদেরই একজন হলেন, সাউথ-ওয়েস্ট সিডনির বাসিন্দা আনিকা সাদ।
তিনি ও তার স্বামী স্যাম-এর চার ও এক বছর বয়সী দু’টি মেয়ে আছে।
ইন্টারন্যাশনাল পাইলট হিসেবে কাজ করতেন স্যাম। কাজ চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা দু’জনেই চাইতেন তৃতীয় একটি সন্তান নিতে।
স্যাম এখন ক্যাজুয়াল কাজ করেন। আনিকা বলেন, সম্ভাব্য নিয়োগদাতারা যখনই স্যামের কাজের ইতিহাস দেখে, তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা মনে করে যে, স্যাম খুব দ্রুতই পাইলট হিসেবে কাজে ফিরে যাবে।
আনিকা বলেন, এ বছরের শেষের দিকে তিনি কাস্টোমার সার্ভিস কাজের জন্য চেষ্টা করবেন। তবে, তার দুই সন্তানের চাইল্ডকেয়ারের খরচ তার বেতনের বেশিরভাগ খেয়ে ফেলবে।
এই বৈশ্বিক মহামারী তাদের আর্থিক অবস্থায় আঘাত হেনেছে। এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আনিকার সঙ্গে স্যামের সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, মাদে ও টিম তাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী বছরে যদি সীমান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া না হয়, তাহলে তারা ইংল্যান্ডে চলে যাবেন।
এরা দু’জনেই বলছেন, তারা অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে ও কাজ করতে চান। তবে, পারিবারিক বন্ধনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।