নিউ সাউথ ওয়েলসের ১১৯ বছরের পুরনো অপরাধ আইন বিলুপ্ত করে বিতর্কিত একটি বিল পাশ করলো রাজ্যটির সংসদের নিম্ন কক্ষ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এমপিরা একটি সংশোধিত আইনের পক্ষে ভোট দেন। এর মাত্র একদিন আগে রাজ্যের সংসদের উচ্চ কক্ষে এটি পাশ হয়। এর আগে সেখানে ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হয়। বিলটি কোনো ডিভিশন ছাড়াই পাশ হয়।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য অ্যালেক্স গ্রিনউইচ গত মাসে প্রস্তাবিত এই আইনটি সংসদে প্রথম উত্থাপন করেন। চূড়ান্ত ধাপে সংসদের নিম্ন কক্ষে তিনিই আবার সংশোধিত এই বিলটি উত্থাপন করেন।
সিডনি আসনের এই এমপি বলেন,
“এই ঐতিহাসিক সংস্কারের পেছনে আপনারা যে ভূমিকা পালন করলেন তার জন্য সকল সদস্যকে ধন্যবাদ।”
তিনি আরও বলেন, “এর জন্য আমরা গর্ব অনুভব করতে পারি।”
নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রাইম অ্যাক্ট থেকে গর্ভপাত বাদ দিয়েছে দি রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ কেয়ার রিফর্ম বিল ২০১৯।এই আইনে একজন নিবন্ধিত চিকিৎসকের দ্বারা গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ সময়কালের মধ্যে গর্ভপাত ঘটানোর বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
এই সময়কালের পরে গর্ভপাত করতে হলে দু’জন চিকিৎসকের সম্মতি লাগবে।
এর আগে নিউ সাউথ ওয়েলসে গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের পর গর্ভপাতের কোনো সুযোগ ছিল না।সংসদে এই আইনটি পাশ হয় বেশ কয়েকটি সংশোধনীসহ। এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যে, গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ পরে গর্ভপাত ঘটাতে হলে চিকিৎসকরা যেন একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি টিমের কাছ থেকে কিংবা হাসপাতালের অ্যাডভাইজোরি কমিটির কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে এবং গর্ভপাত করানোর সময়ে জীবিত নবজাত শিশুদের অবশ্যই যেন যত্ন নেয় তারা।
NSW Independent MP Alex Greenwich. Source: AAP
প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর মধ্যে যেগুলো নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয় সেগুলোর মধ্যে একটিকে সমালোচকরা ‘বর্ণবাদী’ বলে অভিহিত করেন। সেটি হলো শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে গর্ভপাত বাতিল করার বিষয়টি। কিন্তু এটি সংসদের উচ্চ কক্ষে ভোটে বাতিল হয়ে যায়। সংসদের উচ্চ কক্ষ এই বিলটির নাম পরিবর্তন করে দি অ্যাবরশন ল রিফর্ম অ্যাক্ট ২০১৯ করার পক্ষেও ভোট দেয়।
৪০ ঘণ্টায় শতাধিক সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয়। নিউ সাউথ ওয়েলস সংসদের উচ্চ কক্ষে এটি ছিল তৃতীয় দীর্ঘতম বিতর্ক।
এই বিলটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যে এবং ফেডারাল রাজনীতিবিদদের মধ্যে পুরোদমে বিতর্ক হয়েছে। কেউ কেউ প্রস্তাবিত এই বিলটি নিয়ে গরম ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তারা নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বার্জিক্লিয়ানের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এই বিলটির চরম বিরোধিতা করেছেন লিবারাল এমপি তানিয়া ডেভিস। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলেন যে, তিনি সংশোধনীগুলোর প্রতি সমর্থন দেবেন।
তিনি বলেন,
“সংসদে আমাদের অনেকেই এবং এর বাইরে আমাদের সম্প্রদায়গুলোতে মূল বিলটি নিয়ে উদ্বেগ ছিল … আসল বিলটিতে ছাড়, সংশোধনীসমূহ, পরিবর্তনগুলো নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনা হয়েছে এবং এটি একটি ভাল দিক।”“আমি সত্যিই মনে করি সংশোধনগুলো … নারীরদের জন্য অধিকতর নিরাপত্তাবিধান করবে।”
Tanya Davies speaks during amendments to the introduction to the Reproductive Healthcare Reform Bill 2019. Source: AAP
গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন গ্রিন্স দলের এমপি জেনি লিয়ং। তিনি বলেন, এই বিলটি পাশ করা হলে মানুষ “ব্যক্তিগত ও নিজস্ব সিদ্ধান্তসমূহ” গ্রহণ করতে পারবে।
ভোটের আগে তিনি বলেন,
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমরা এ পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। কিন্তু, আমি আরও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এর জন্য এত লম্বা সময় লাগলো।”
“আমরা বড় কিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছি।”
“এই রাজ্যে আজ আমরা সবার জন্য লিঙ্গ-সমতা-আদর্শ অনুভবের আরও নিকটবর্তী হয়েছি”, বলেন তিনি।
নিউ সাউথ ওয়েলসে ইতোপূর্বে গর্ভপাত বেআইনী ছিল। তবে, চিকিৎসকরা গর্ভপাত ঘটাতে পারতেন শুধুমাত্র তখনই যখন তারা মনে করতেন যে, গর্ভধারণ-অবস্থা গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।