তামারা ক্যাভেনেট একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং অস্ট্রেলিয়ান সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সবার জীবন কোভিড-১৯ অতিমারির দ্বারা কোন না কোনভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
নিজের আর আপনজনের শারীরির অসুস্থতা সহ মানুষের মনোজগতে আর্থসামাজিক বিভিন্ন অনিশ্চয়তা এবং আশংকার প্রভাব পড়েছে।বিয়ন্ড ব্লু এর স্বেচ্ছাসেবী সেসিল সাই বলেন, তার আগে ডিপ্রেশন ছিল, তাই তিনি নিজের মানসিক অবস্থা ভাল বুঝতে পারেন।
Source: William West/Getty Images
সাইকোথেরাপি চিকিৎসায় তিনি বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
তিনি সিডনীর প্যারামাটায় থাকেন। এই স্থানীয় প্রশাসনিক এলাকাটিতে উচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ কেস থাকায় সেখানে চলাফেরায় কড়া বিধিনিষেধ চলছে। লক ডাউনের সময়সীমা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে সেখানে যা সেসিল সহ সেখানকার বাকি বাসিন্দাদের উপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করছে।
লক ডাউন চলাকালে মিসেস সাই ভাইরাস আক্রান্ত হবার আশংকায় টানা দুই সপ্তাহ ঘর থেকে একদম বের হননি। অবশ্য তিনি এটাও স্বীকার করেন যে তার অন্তত পার্কে যাওয়ার সাহসটুকু থাকা দরকার ছিল, কেননা তাতে মনের ভার অনেকটা হালকা হয়।আশংকার জায়গা থেকে অনেকে সর্বশেষ আপডেট জানতে লাগাতার চোখকান খোলা রাখতে প্রবৃত্ত হন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর খবরের চ্যানেলে সারাক্ষণ কান পেতে থাকেন কি হালচাল চলছে। ডক্টর ক্যাভেনেট এর মতে এর ফলে আসলে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে।
Source: Roman Pohoreck / Pexels
বিয়ন্ড ব্লু এর লিড ক্লিনিক্যাল এডভাইজর গ্রান্ত ব্লাশকি মনে করেন, দৈনন্দিন জীবন সর্বোচ্চ সম্ভব গোছানো আর রুটিন মেনে যাপন করা উচিত। জীবনের অনেক কিছুই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, কিছু কিছু হয়তো পারি না। এসব অভ্যাস আর প্রবণতা যতদূর সম্ভব নিয়ন্ত্রিত রেখে জীবন যাপন করা উচিত।
ডক্টর ব্লাশকি ২৫ বছর ধরে জিপি হিসাবে ডাক্তারি করছেন । শারীরিক আর মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেন তিনি। তার মতে,
ঘরে থেকে কাজ করা বা ওয়ার্ক ফ্রম ভাল, তবে কাজের মধ্যেই ঘরে থাকা ভাল নয়
তাই ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবনের মধ্যে একটা স্বাস্থ্যকর দূরত্ব মেনে চলা উচিত।
ডক্টর ক্যাভেনেট বলেন, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ চলাকালে শরীর চর্চার কথা ভুলে গেলে চলবে না, কেননা শরীর চর্চা কেবল শরীরের নয়, মনের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও জরুরি।ডক্টর ক্যাসান্দ্রা জোয়িক (Cassandra Szoeke) মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ঔষধশাস্ত্রের অধ্যাপক। তার লেখা সিক্রেটস অফ উয়োম্যান্স হেলদি এজিং বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
Source: Pexels/ Pixabay
এই বইয়ে এক অনন্য গবেষণার ফলাফল সন্নিবিষ্ট হয়েছে। এই গবেষণায় মধ্য তিরিশ থেকে প্রৌঢ় বয়সের ৪০০ জন নারীর ত্রিশ
বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রফেসর জোয়িক জানান, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত শরীর চর্চা যেমন প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করা জিমে ব্যায়াম বা সাঁতারানোর মতই উপকারী।
এছাড়াও আমাদের ডায়েটের প্রতি সমান নজর দিতে হবে। অনেক সময় মানসিক চাপ বা উদ্বিগ্নতায় আমরা লাগামছাড়া খাদ্য আর পানীয় গ্রহণ করে ফেলি। ডক্টর ব্লাশকির মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অ পানীয় বাসায় না রাখাই বরং বুদ্ধিমানের কাজ।লক ডাউনের ফলে সহজলভ্য অনেক কিছু এখন যেন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। বন্ধুদের সাথে সিনেমায় যাওয়া বা গল্প করার মত বিষয়গুলির পাওয়া যেন সৌভাগ্যের বস্তু বলে মনে হয়। এই প্রসঙ্গে সেসিল সাইয়ের ভাবনাটা একটু অন্য রকম। তার মতে,
Being in lockdown means also having more time to cook healthy meals. Source: Trang Doan/ Pexels
লক ডাউনের ফলে কাছের অনেক মানুষকে হয়তো আর সন্নিকটে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে তার ফলে অনেক দূরের মানুষ কাছে চলে এসেছে। আগন্তুক যেন হয়ে গেছে আপনজন।
এই অতিমারির কালে মিসেস সাই রোজ ব্যায়াম করছেন। সম্প্রতি তিনি ছবি আঁকাআঁকি শুরু করেছেন। জীবনের নতুন প্রেরণা খুঁজে পেতে আপনি কি নতুন কিছু শুরু করেছেন? আমাদের ফেইসবুক পেইজে মেসেজ করে জানান।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সাহায্যের জন্য লাইফলাইনে কল করুন ১৩ ১১ ১৪ অথবা কল করুন বিয়ন্ড ব্লুতে ১৩০০ ২২৪ ৬৩৬
ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষাভাষীদের মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছে এম্ব্রেস মাল্টিকালচারাল মেন্টাল হেলথ-
জরুরী সাহায্যের জন্য কল করুন- ০০০ (শূণ্য শূণ্য শূণ্য)
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।