দক্ষ কর্মীর ঘাটতি কমাতে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আহবান

australian visa

Australian visa in between two British passport pages. Source: iStockphoto / LuapVision/Getty Images/iStockphoto

অভিবাসন সংক্রান্ত একটি সংসদীয় যৌথ স্থায়ী কমিটি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থাকে নতুন আকার দিতে বেশ কয়েকটি জনশুনানি শুরু করেছে। কমিটি সমগ্র অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান দক্ষ কর্মী এবং শ্রমিকের ঘাটতি মোকাবেলা করতে চায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে দক্ষ অভিবাসীরাই অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত বিনির্মানে স্থানীয় জনশক্তির অভাব দূর করতে পারবে।


স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের দক্ষ কর্মীর ঘাটতি কমাতে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন হতে পারে।

অভিবাসন সম্পর্কিত সংসদীয় যৌথ স্থায়ী কমিটি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থা কীভাবে পুরো অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান দক্ষ কর্মী এবং শ্রমিকের ঘাটতি আরও ভালভাবে পূরণ করতে পারে সে বিষয়ে তাদের অনুসন্ধানে বেশ কয়েকটি গণশুনানি শুরু করেছে।

গ্র্যাটান ইনস্টিটিউট মাইগ্রেশন ক্যাপ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। কিন্তু সংস্থাটি বলছে যে স্বল্পমেয়াদে শ্রম-ঘাটতি পূরণ করতে কমিটিকে স্বল্প-দক্ষ অভিবাসীদের পরিবর্তে কম বয়সী, উচ্চ-দক্ষ অভিবাসীদের আনার সুপারিশ করতে হবে।

গ্র্যাটান ইনস্টিটিউটের মাইগ্রেশন অ্যান্ড লেবার মার্কেটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ট্রেন্ট উইল্টশায়ার বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অতীতে ভালো কাজ করেছে কিন্তু কৌশলগত কারণে পুনর্বিবেচনার একান্ত প্রয়োজন।

গত বছর, ফেডারেল সরকারের ন্যাশনাল স্কিলস কমিশন অস্ট্রেলিয়ান ওয়ার্কফোর্স সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে দেশে ব্যাপক দক্ষকর্মীর ঘাটতি আছে।

এতে দেখা যায় যে বেকারত্বের হার হ্রাসের কারণে ক্রমবর্ধমান চাকরি সন্ধানকারী অস্ট্রেলিয়ানদের সংখ্যা কমেছে, এবং ২০২২ সালে চাকরির বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু এই চাকরিগুলো অস্ট্রেলিয়ার কর্মীরা পূরণ করতে অক্ষম যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য দক্ষকর্মীর ঘাটতি রয়েছে।

মাইগ্রেশন সম্পর্কিত জয়েন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি মাইগ্রেশন সিস্টেমকে আরও ভালভাবে সাজানোর উপায় খুঁজে বের করার মাধ্যমে এই দক্ষতার ঘাটতির প্রভাবগুলিকে কমিয়ে আনতে চায়, বিশেষ করে রিজিওনাল এলাকায় মূল শূন্যপদগুলি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে আরও দক্ষ কর্মীদেরকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে।

মিঃ উইল্টশায়ার বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষ অভিবাসন কর্মসূচির সংস্কার করে এবং তরুণ, মেধাবী কর্মীদের এনে অস্ট্রেলিয়ান বাজেট আরো ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে পারে।

তিনি বলছেন, "অস্ট্রেলীয়রা অভিবাসন থেকে যে প্রধান সুবিধা পায় তা হল রাজস্ব লভ্যাংশ। তাই আমরা মনে করি দক্ষ অভিবাসন কর্মসূচির উন্নতি হলে আগামী ৩০ বছরে ১২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বড় বাজেট দেয়া যাবে।"

যৌথ কমিটি অভিবাসন ইনকোয়ারিতে "শহর ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলিতে প্রাণবন্ত অর্থনীতি এবং সামাজিকভাবে টেকসই" করাই অভিবাসনের মূল বিষয় বলে উল্লেখ করেছে।

কমিটি আরও বলেছে যে "কর্মজীবী অভিবাসীদের আকর্ষণ এবং ধরে রাখার কৌশল" এবং "স্থায়ী বসবাসের জন্য দক্ষ অভিবাসনের পথ শক্তিশালী করার নীতি" এই পর্যালোচনার মূল অগ্রাধিকার।

কমিটি প্রধান শিল্প সংস্থা, মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী এবং অধ্যাপকদের কাছ থেকে ১১৭টি প্রস্তাবনা পেয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা এসিসিআই মাইগ্রেশন ক্যাপ বাড়ানো এবং দক্ষ অভিবাসন বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করার জন্য তাদের সমর্থন জানিয়েছে।

প্রধান নির্বাহী, অ্যান্ড্রু ম্যাককেলার বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে শ্রম ঘাটতি পূরণের জন্য দক্ষ অভিবাসনই কেবল একটি শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতি সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

তবে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে অতি দক্ষ অভিবাসীদের পক্ষ নিতে গিয়ে তারা যাতে স্থানীয় কর্মীদের ত্যাগ না করে।

এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম এবং সর্বাধিক প্রতিনিধিত্বকারী এই ব্যবসায়িক সংস্থা এসিসিআই বলছে যে কমিটিকে সকলের স্বার্থেই "ভারসাম্য" ঠিক রাখতে হবে।

মিঃ ম্যাককেলার বলছেন যে স্থানীয় কর্মীরা শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।

তিনি বলছেন, এখানে সকলেই লাভবান হবে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ নেই যে মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কারণে মজুরি বা কাজের সুযোগ কমেছে। বরং অর্থনীতি আরও বিস্তৃত হয়েছে।

এদিকে, অভিবাসী আইনজীবীরা অস্ট্রেলিয়ান অভিবাসন ব্যবস্থার মধ্যে পদ্ধতিগত সমস্যাগুলি তুলে ধরতে এই সুযোগটি ব্যবহার করতে চান।

ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইস অ্যান্ড রাইটস সেন্টার বা আইএআরসি-এর সেন্টার ডিরেক্টর এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটর জোশুয়া স্ট্রুট বলেছেন যে একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা এবং স্থায়ী বসবাসের পথ নিশ্চিত করা তার সংস্থার প্রধান অগ্রাধিকার।

তিনি বলছেন যে আমাদের অভিবাসন নীতির কিছু বিভ্রান্তিকর দিক আছে এবং অস্থায়ী ভিসা থেকে স্থায়ী ভিসা পাবার পথটি পরিষ্কার নয়। ফলে অস্ট্রেলিয়া কাজের গন্তব্য হিসেবে কম আকর্ষণীয়।

জোশুয়া স্ট্রুট অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থাকে সহজবোধ্য করে তোলার আহ্বান জানান।

এই সপ্তাহে গণশুনানির পর মাইগ্রেশন সংক্রান্ত যৌথ স্থায়ী কমিটি স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা করবে এবং বছর জুড়ে তার ফলাফল প্রকাশ করবে।

ধারণা করা হচ্ছে যে, এই ফলাফল থেকে সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থা নতুন আকার পাবে কারণ অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতির ভবিষ্যত সুরক্ষা করতে স্থানীয় কর্মী ঘাটতি কমাতেই হবে।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 


Share