ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে রাজা তৃতীয় চার্লসকে মুকুট পরানোর সময় অনেক অস্ট্রেলিয়ানই তাদের টেলিভিশন পর্দায় এই জাঁকজমক ও উচ্ছ্বাসের ঝলক দেখছিলেন।
তবে আগ্রহী অনেকেই সেই ভিড়ের অংশ হওয়ার জন্যে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এবং সোনালী গাড়িটি দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছিলেন।
রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানটি ছিল গত সাত দশকের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান, যেখানে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য নেতাদের এক শত জনেরও বেশি উপস্থিত ছিলেন। সেই সাথে লন্ডনের রাস্তায় হাজার হাজার আগ্রহী দর্শকও জড়ো হয়েছিল।
তবে এই ভিড়ে শুধু রাজার সমর্থকরাই উপস্থিত ছিলেন না, বিরোধী মতের মানুষেরাও ছিলেন।
লাল, সাদা ও নীল রঙের পোশাক পরিহিতদের থেকে আলাদা হয়ে 'নট মাই কিং' লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে মধ্য লন্ডনে মিছিলের মত করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত হলুদ পোশাকধারী বিক্ষোভকারী।
পুলিশ রাজতন্ত্র-বিরোধী গোষ্ঠী রিপাবলিকের নেতাসহ আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে গন্ডগোল ঠেকানোর গুরুত্ব বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের অধিকারকে ছাড়িয়ে গেছে।
প্রতিবাদকারীদের একজন হ্যারি স্ট্রাটন ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ, কিন্তু চার্লস আমাদের তার উল্টোটাই মনে করাচ্ছে।’
একইভাবে অস্ট্রেলিয়াতেও মানুষের অনুভূতি মিশ্র ছিল। অনেক অস্ট্রেলিয়ান এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে আনন্দিত ছিলেন।
কুইন্সল্যান্ডের প্রত্যন্ত শহর কুইলপি এ উপলক্ষে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কাউন্সিলর লিন বার্নস বলেছেন, এর মাধ্যমে তাদের তরফ থেকে নতুন রাজাকে সম্মান জানানো হলো।
তবে অনেকেই বলছেন, রাজতন্ত্রের অধীন থেকে বেরিয়ে এসে অস্ট্রেলিয়াকে প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার সময় হয়েছে।
বারোটি প্রাক্তন উপনিবেশের ফার্স্ট নেশনস মানুষেরা সমবেত হয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে নতুন রাজাকে ঔপনিবেশিক সময়ের ক্ষতিকর প্রভাব স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উইরাজুরি গোষ্ঠীর নারী ও আইনজীবী, টায়লাহ গ্রে এই স্বাক্ষরকারীদের একজন। তিনি বলেন, আমরা রাজা চার্লসকে অস্ট্রেলিয়ায় এসে ঔপনিবেশিক সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইন্ডিজেনাস মানুষদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থণার আহ্বান জানাই।
প্রকৃতপক্ষে রিপাবলিকান মুভমেন্ট অব অস্ট্রেলিয়া মনে করে যে রাণীর মৃত্যু নতুন এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংকেত হিসেবে কাজ করেছে।
রিপাবলিকান আন্দোলনের নেতা ক্রেইগ ফস্টার বলেছেন, তিনি আশা করেন এই অভিষেক অনুষ্ঠানই হয়ত শেষ কোনও অনুষ্ঠান হতে চলেছে যেখানে একজন অস্ট্রেলীয় নেতা একজন রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
মি. ফস্টার বলেন, একটি প্রজাতন্ত্র হয়ে উঠতে পারলে গত ২৫ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে তার সঠিক প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অস্ট্রেলিয়ার বহুসাংস্কৃতিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের ইতিহাস রাজতন্ত্রের ঔপনিবেশিক শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে সাংঘর্ষিক।
রাজতন্ত্রবাদীরা এখনও রাজার সেবামূলক পবিত্র ও ধর্মীয় শপথকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
অস্ট্রেলিয়ান মোনার্কিস্ট লীগের সভাপতি ফিলিপ বেনওয়েল বলেছেন, এটি নির্দিষ্ট কোনো রাজার চেয়ে বরং সংবিধানের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত।
যারা রাজতন্ত্রের অপ্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যুক্তি প্রদান করেন তাদের উদ্দেশ্যে মি. বেনওয়েল বলেন, এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ভরতার জায়গা হিসেবে কাজ করে।
তবে গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে সরকারের রুদ্ধদ্বার আলোচনাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন মি. ফস্টার। উদাহরণ হিসেবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অস্ট্রেলিয়ানদের জন্যে এটি ছিল ইতিহাস এবং দেশপ্রেমের প্রতীক। স্কোয়াড্রন লিডার মিচেল ব্রাউন এই পদযাত্রায় অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন গার্ডের নেতৃত্ব দেন।
আবার বহু অস্ট্রেলিয়ানই এই অনুষ্ঠান নিয়ে ততটা আগ্রহী ছিলেন না, অনেকেই এর পরিবর্তে ফুটবল খেলা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।