বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমির গণমাধ্যমকর্মীদের ৮৫ শতাংশই বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হন

Journalists from diverse backgrounds face abuse online - and at work

Journalists from diverse backgrounds face abuse online - and at work Source: Getty / Ignatiev

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডাইভার্স ব্যাকগ্রাউন্ড বা বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমি থেকে আসা অনেক গণমাধ্যম কর্মীই হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আদিবাসী, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিবন্ধী সাংবাদিকদের পাশাপাশি যারা কুইয়ার অথবা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়, তাদের প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়ন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ ধরণের বৈষম্য অনলাইনে বেশি দেখা গেলেও নিউজরুমের ভেতরেও এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে।


মিডিয়া ডাইভারসিটি অস্ট্রেলিয়ার নতুন একটি প্রতিবেদনে একটি অপমানজনক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, একজন সিনিয়র শ্বেতাঙ্গ সম্পাদক এশীয় পটভূমির এক সাংবাদিককে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখে অবাক হয়ে যান এবং বলে ওঠেন, ‘তোমার কি টয়লেট পরিষ্কার করা শেষ?’

এমডিএ-র পক্ষে গ্রিফিথ এবং ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সংবাদকক্ষের ভিতরে সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীরা যে বৈষম্য এবং হেনস্তার মুখোমুখি হন, সে বিষয়ে যে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ মাত্র।
মারিয়াম ভেইজেদাহ মিডিয়া ডাইভারসিটি অস্ট্রেলিয়ার সিইও হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘শুধু অনলাইনেই কেবল নয়, এমনকি কাজের জায়গায়ও মাইনরিটি গ্রুপ থেকে আসা সাংবাদিকেরা বৈষম্যের মুখোমুখি হন।’

ক্যারেন পার্সি মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট আর্টস অ্যালায়েন্স বা এমইএএ-র সভাপতি, যেটি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের ইউনিয়ন হিসেবে কাজ করে।

তিনি বলেন, এই ধরনের আচরণ সংবাদকক্ষের মধ্যে জবাবদিহিতা সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করে - ঠিক যেমন মিডিয়া সংস্থাগুলি তাদের পরিবেশিত সংবাদে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে।

‘এরকম আচরণ করা আইন-বিরোধী কাজ,’ বলেন তিনি।

তবে এ ধরণের হেনস্থা ও বৈষম্য সবচেয়ে মারাত্মক ও বিস্তৃত রূপে দেখা যায় অনলাইন মিডিয়ায়।

মারিয়াম ভেইজেদাহ আরও বলেন, ‘ফার্স্ট নেশান্স, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমি থেকে আসা এবং এলজিবিটিআইকিউ সম্প্রদায়ের সাংবাদিকদের ৮৫ শতাংশই ব্যক্তিগত অথবা পেশাগত নিপীড়নের শিকার হয়।’

লেখক এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার সমর্থক কার্লি ফিন্ডলের নিজেরও বেশ কিছু অনলাইন বৈষম্যের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কার্লি বলেন, এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা এই আক্রমণকে অনলাইনের বাইরেও নিয়ে গেছে। এই প্রতিবেদনেও এমনটাই বলা হয়েছে যে মিডিয়া কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র কিন্তু উল্লেখযোগ্য অংশের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটছে।

ক্যারেন পার্সি বলেন, জেন্ডার ইক্যুইটি ভিক্টোরিয়া-র সাথে মিলে এমইএএ-র নিজস্ব একটি পূর্ববর্তী গবেষণায় তাদের পর্যালোচনার ফলাফল উল্লেখ করা হয়েছে। তাতেও দেখা যায় এরকম বৈষম্যমূলক প্রবণতা কমছে না।
তবে এই ধরণের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতা-র কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।

আরও উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে যে, টুইটারের মতো মাধ্যমগুলিতে ব্যাপকভাবে বিষোদ্গার করা নিষিদ্ধ অ্যাকাউন্টগুলি ফিরিয়ে আনার বিতর্কিত সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তগুলি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কমানো আরও কঠিন করে তুলেছে।

এমনকি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের ভেতরেও নানা বাধা রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রেই মিডিয়া কর্মীদের কাছে এই প্রত্যাশা করা হয় যে তারা ‘মাথা উচুঁ’ ও মন শক্ত করে নিজেদের কাজ করে চলবে, কারণ এই ধরনের মন্তব্য এবং ট্রলিং-এর শিকার হওয়া তাদের কাজেরই একটি অংশ।

কিন্তু ক্যারেন পার্সি বলেছেন যে এটুকুই যথেষ্ট নয়। এই প্রবণতা রোধে সবাইকে এক সাথে মিলে আরও অনেক কাজ করতে হবে।

মিডিয়া ডাইভারসিটি অস্ট্রেলিয়ার মতো সংস্থাগুলি নিয়মিত লক্ষ্য রাখছে যে গণমাধ্যম জগতে সাংবাদিকরা কীভাবে কাজ করছেন।

মারিয়াম ভেইজেদাহ বলেন, তাদের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও গবেষণা করা যেতে পারে।


Share