বৃটিশ উপনিবেশের পরম্পরায় অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। ক্যানবেরায় অবস্থিত মিউজিয়াম অফ অস্ট্রেলিয়ান ডেমোক্রেসির গবেষক ক্যাম্পবেল রোডস বলেন,
সেই ঐতিহ্যের পরম্পরায় যুক্তরাজ্যের রানী অথবা রাজা অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে থাকেন।
গ্রেট ব্রিটেনের অন্যতম উপনিবেশ হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার গোড়া পত্তন হওয়ার কারণে ব্রিটিশ সরকার ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ঐতিহ্য প্রচলিত হয়ে আসছে, রাজতন্ত্র সেই ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম
সেই ঐতিহ্যের পরম্পরায় যুক্তরাজ্যের রানী অথবা রাজা অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে থাকেন।
১৯৫২ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি উইন্ডসর যুক্তরাজ্য এবং ১৪ কমনওয়েলথ অঞ্চলের রানী হিসাবে রাজত্ব করেছেন।
বৃটেনের ইতিহাসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাজতন্ত্রের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুর পর, তার ছেলে চার্লস রাজা হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন। রাজা তৃতীয় চার্লস হিসাবে তিনি তার রাজত্ব শুরু করেছেন।
Britain's Prince Charles, right, and Camilla, the Duchess of Cornwall, listen as Britain's Queen Elizabeth II delivers the Queen's Speech, in the House of Lords, during the State Opening of Parliament, at the Palace of Westminster in London, Wednesday, June 4, 2014. Credit: Carl Court/AP/AAP Image
অস্ট্রেলিয়ার একটি লিখিত সংবিধান রয়েছে, এবং সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানী রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হিসাবে অধিষ্ঠিত। যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধান ভূ-গোলকের অন্যপ্রান্তে আছেন, তাই তিনি প্রতিনিধি হিসাবে অন্য কাউকে মনোনিত করেন যাকে গভর্ণর জেনারেল বলা হয়।
লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিভাগের এমেরিটাস প্রফেসর জুডিথ ব্রেট জানান,অস্ট্রেলিয়াকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বা ‘ কনস্টিটিউশনাল মোনার্কি ’ বলা হয়ে থাকে যার প্রধান হিসাবে রাজা তৃতীয় চার্লসকে মান্য করা হয়। যদিও হেড অফ দি স্টেট বা রাষ্ট্রপ্রধানের পদবিটি আলংকরিক, তার কোন নির্বাহী ক্ষমতা নেই।
অস্ট্রেলিয়ায় রাজার প্রতিনিধি গভর্ণর জেনারেল ক্যানবেরায় থেকে তার দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনস্ত গভর্ণররা প্রত্যেক রাজ্যের রাজধানীতে থেকে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে তাকে সহযোগিতা করে থাকেন।
Queen Elizabeth II watches Tjapukai Aboriginal ceremonial fire performance near Cairns, 2002. Credit: Torsten Blackwood/AFP via Getty Images
অস্ট্রেলিয়ার প্রাত্যহিক দেশ পরিচালনায় রাজ পরিবারের সরাসরি কোন ভূমিকা আজ আর নেই; এদেশের সমাজ, সরকার বা অর্থনীতিতেও তাদের কোন সরাসরি প্রভাব নেই কিন্তু তারা আজও এদেশের সব বিষয়েই তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিটেনের রানী বা রাজা এদেশের গভর্নর জেনারেল পদে নিয়োগ দান করেন। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে গভর্ণর জেনারেল এদেশের নির্বাচিত সরকারের উপদেশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
স্যান্ডি বায়ার জানান সরকার পরিচালনায় গভর্ণর জেনারেলের সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও তার উপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত করা আছে। রাজ পরিবারের এই প্রতিনিধির সম্মতি ছাড়া সংসদে কোন আইন পাস হতে পারেন, এমনকি এদেশে জাতীয় নির্বাচনও হতে পারেনা।
১৯৮৬ সালের অস্ট্রেলিয়া এক্ট আইন অনুযায়ী ব্রিটেনের সাথে অস্ট্রেলিয়া সরকারের মধ্যকার আনুষ্ঠানিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যদিও রাজ পরিবারের সাথে সংযোগ আগের মতই থেকে যায়।
The Duke and Duchess of Cambridge visit Taronga Zoo, Sydney during their official 2014 tour to New Zealand and Australia Credit: Anthony Devlin/PA Images via Getty Images
ব্রিটিশ রাজণ্যবর্গের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার চেতনা অনেক অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে দেখতে পান বলে মন্তব্য করেছেন স্যান্ডি বায়ার।
অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিকান মুভমেন্টের অন্যতম মুখপাত্র হিসাবে তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রপ্রধান পদে রাজা বা রানীর বদলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ান কেউ রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়া অধিক বাঞ্ছনীয়।
এদিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান লেবার সরকার ম্যাট থিসলেটওয়েইটকে রিপাবলিকের এসিস্টেন্ট মিনিস্টার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে।
বৃটিশরাজের প্রতি মানুষের আবেগেরও পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন জুডিথ ব্রেট। কয়েক দশক পূর্বেও রাজন্যবর্গের অস্ট্রেলিয়া পরিদর্শনের মুহুর্তে দর্শনার্থীর ভিড় হত, এখন আর আগের মত ভিড় জমে না।
অস্ট্রেলিয়া যদি ভারতের মত রিপাবলিক বা প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, কেমন হবে তার শাসনব্যবস্থা? স্যান্ডি বায়ার ও অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্ট এর ভাষ্যমতে অস্ট্রেলিয়া প্রজাতন্ত্রের 'হেড অফ স্টেট' তখন রাজপরিবারের সদস্য কেউ হবেন না, হবেন নির্বাচিত কোন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। এ বিষয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তাদের ইশতেহার 'দ্য অস্ট্রেলিয়ান চয়েস মডেল' বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।