রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনাবসান, রাজা হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হলেন তার বড় ছেলে চার্লস

Queen Elizabeth revealed many secrets about her crown and golden carriage

Queen Elizabeth II has died at the age of 96. Source: AAP / AAP

বাকিংহাম প্যালেস ঘোষণা করেছে যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডে তার বাড়িতে মারা গেছেন। তার বড় ছেলে চার্লস এখন যুক্তরাজ্যের রাজা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ ১৪টি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
  • ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রধান হিসেবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য শাসক ছিলেন
  • তিনি ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রধান যিনি অস্ট্রেলিয়া সফর করেন
  • রানির মৃত্যুতে তার বড় ছেলে চার্লস স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাজ্যের রাজা এবং অন্যান্য ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্ব শেষ হয়েছে। তার পরিবার বলছে যে তিনি তার স্কটিশ এস্টেট, বালমোরাল ক্যাসেলে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কমনওয়েলথের রানি হিসাবে তিনি দায়িত্ত্ব পালন করেছেন।

এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিশোরী হিসাবে, রাজকুমারী এলিজাবেথ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মহিলা শাখায় কাজ করেছিলেন এবং একজন ড্রাইভার এবং মেকানিক হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

১৯৪৭ সালে, তিনি গ্রীস এবং ডেনমার্কের প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের চার সন্তান হলেন: চার্লস, অ্যান, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড।

চার্লস এবং অ্যান ১৯৫২ সালে কেনিয়া সফরের আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

এলিজাবেথের বাবা রাজা জর্জ ষষ্ঠের আকস্মিক মৃত্যুর পর তার সেই সফরটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল।

কয়েক মাস প্রস্তুতির পর, ১৯৫৩ সালের ২রা জুন, লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে তরুণী রাজকুমারীকে মুকুট পরানো হয়েছিল।
Queen Elizabeth II death
File photo dated 22/3/2000 of Queen Elizabeth II receiving flowers from members of the crowd in Central Park, Bourke, Australia. Fiona Hanson/PA Wire Credit: Fiona Hanson/PA
সিংহাসনে আরোহণের কয়েক বছর আগে, রাজকুমারী এলিজাবেথ কমনওয়েলথের সেবায় তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

কনস্টিটিউশনাল মোনার্কির অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল কনভেনর প্রফেসর ডেভিড ফ্লিন্ট বলেছেন যে সেবা করার জন্য তার প্রতিশ্রুতি কমনওয়েলথে সম্প্রচার করা হয়েছিল তার একবিংশ জন্মদিনে ১৯৪৭-এর এপ্রিলে, যখন তিনি তার বাবা-মা এবং ছোট বোনের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ছিলেন।

কমনওয়েলথ ৫৪টি স্বাধীন দেশ নিয়ে গঠিত যার সম্মিলিত জনসংখ্যা ২.৪ বিলিয়ন।

আধুনিক কমনওয়েলথ ১৯৪৯ সালের ২৬শে এপ্রিল গঠিত হয়েছিল যখন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা লন্ডন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করেছিলেন যা কমনওয়েলথকে স্বাধীন সদস্য দেশগুলোর একটি 'মুক্ত সংস্থা' হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই কমনওয়েলথের প্রধান এবং তিনি অস্ট্রেলিয়া সহ ১৬টি কমনওয়েলথ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান(হেড অফ স্টেট)।

অন্যান্য সদস্য দেশগুলি হয় প্রজাতন্ত্র বা তাদের নিজস্ব রাজতন্ত্র রয়েছে।

১৯৫৪ সালে, রানি এবং প্রিন্স ফিলিপ অস্ট্রেলিয়া সফর সহ বিশ্ব ভ্রমণে ছয় মাস কাটিয়েছিলেন।

তিনি ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রধান যিনি অস্ট্রেলিয়া সফর করেন।

রানি তার রাজত্বকালে সামরিক, চিকিৎসা এবং পশু কল্যাণ সংস্থা সহ ৬০০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

যদিও তিনি তার জীবদ্দশায় অগণিত সংখ্যক লোকের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন, তবে তিনি অনেকের সাথে সাক্ষাৎকারকে অনুপ্রেরণাদায়ক বলে মনে করেছিলেন।

১৯৯৭ সালে, প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর রানি র জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
Diana In Canada
CHARLO, CANADA - JUNE 18: Princess Diana, In Charlo, During An Official Tour Of Canada. (Photo by Tim Graham/Getty Images) Credit: Tim Graham Photo Library
পাঁচ দিন প্রকাশ্যে না আসা এবং জনরোষের মুখোমুখি হওয়ার পরে, তিনি প্রিন্সেস ডায়ানাকে একজন ব্যতিক্রমী এবং প্রতিভাধর মানুষ বলে বর্ণনা করে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অধীনে রাজতন্ত্র জনপ্রিয় প্রমাণিত হয়েছিল এবং ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রজাতন্ত্র হবে কীনা এজন্য গণভোট ব্যর্থ হয়েছিল, এর ফলে প্রজাতন্ত্র নিয়ে বিতর্ককারী উভয় পক্ষই তার জীবদ্দশায় এই বিষয়টি পুনরায় সামনে আনতে চায় নি।

২০১২ সালে, তার ক্ষমতা লাভের ডায়মন্ড জুবিলী বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।

তিন বছর পর তিনি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক হয়ে ওঠেন। ফলে তিনি তার গ্রেট গ্রেট গ্রান্ডমাদার রানি ভিক্টোরিয়ার ৬৩ বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যান।
prince_philip_aap_0.jpg
Britain's Queen Elizabeth II and her husband Prince Philip. (AAP)
২০২১ সালের এপ্রিলে, রানির স্বামী প্রিন্স ফিলিপ মৃত্যুবরণ করেন তার ১০০তম জন্মদিনের দুই মাস আগে। তাদের আমৃত্যু দাম্পত্য জীবন ছিল ৭৩ বছরের।

সিংহাসনে বসার ৭০ বছর উদযাপন করার সময় রানি তার প্ল্যাটিনাম জুবিলি বছরে প্রবেশ করেন। এসময় রাজপরিবারকে রানি র দ্বিতীয় পুত্র প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের নির্যাতনের জন্য দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টাইনের সাথে বন্ধুত্বকে ঘিরে বিতর্ক মোকাবেলা করতে হয়; এবং একই সময়ে প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেল এবং পরিবারের বাকিদের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরী হয়।
রানির মৃত্যুতে মানুষের তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ এবং শ্রদ্ধা জানানো অব্যাহত আছে। রাজতন্ত্র সমর্থক ডেভিড ফ্লিন্ট তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ান এবং কমনওয়েলথের সমস্ত নাগরিকদের রানি র কাছে ঋণী হওয়া উচিত যিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ব্যক্তি।

রানির মৃত্যুতে তার ৭৩ বছর বয়সী বড় ছেলে চার্লস স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাজ্যের রাজা এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড সহ অন্যান্য ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। তিনি রাজা তৃতীয় চার্লস নামে পরিচিত হবেন।
The Prince of Wales greets Sir Kenneth Olisa, The Lord-Lieutenant of Greater London (left) with a Namaste gesture at the annual Prince's Trust Awards 2020.
The Prince of Wales greets Sir Kenneth Olisa, The Lord-Lieutenant of Greater London (left) with a Namaste gesture at the annual Prince's Trust Awards 2020. Source: AAP / AAP Image/Yui Mok/PA Wire
এক বিবৃতিতে রাজা চার্লস বলেছেন, তার মায়ের মৃত্যু তার পরিবারের জন্য 'বড় দুঃখের মুহূর্ত'।

"আমরা একজন লালিত সার্বভৌম এবং একজন অত্যন্ত প্রিয় মায়ের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত," তিনি বলেন।

"আমি জানি তার অভাব সারা দেশ, রাজ্য এবং কমনওয়েলথ এবং সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ গভীরভাবে অনুভব করবে।"

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও লিংকে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share