পদ্ধতিগত বাধা এবং ক্লিনিকাল ট্রায়াল সিস্টেমে প্রবেশে সহায়তার অভাবের তারা ক্যান্সার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয় না কিংবা বাদ পড়ে যায়।
ক্যান্সারের ক্লিনিকাল ট্রায়াল গবেষণার প্রধান গবেষক হলেন ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির পিএইচডি প্রার্থী ডঃ অভিজিৎ পাল, যিনি সিডনির লিভারপুল হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি স্টাফ স্পেশালিস্ট এবং ডিরেক্টর অফ অ্যাডভান্সড ট্রেনিং।
আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি ডঃ অভিজিৎ পালের সাথে। তার সাক্ষাৎকারটি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে।
আজকের পর্বে থাকছে, ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি, ক্যান্সারের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি কী এবং সেগুলি কীভাবে পরিচালিত হয়, সেইসাথে এর সাথে থাকা ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা।
ড. অভিজিৎ পাল মেডিকেল অনকোলজিস্ট হিসেবে তার কাজ প্রসঙ্গে বলেন, "যখন ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট হয় তখন এখানে তিনটি ভাগ থাকে - রেডিয়েশন, সার্জিক্যাল এবং মেডিকেল। আমি হচ্ছি মেডিকেল বিভাগে অর্থাৎ আমি ওষুধ ব্যবহার করি বা ওষুধ নিয়ে কাজ করি।"
চিকিৎসা পেশা ছাড়াও পিএইচডি করছেন 'ক্লিনিক্যালটা ট্রায়ালে কারা অংশ নিচ্ছে সেসব বিষয়ে।'
একটা কথা প্রচলিত আছে, 'ক্যান্সার মানে নো আনসার' - সত্যিই কী তাই?
"না এটি সত্যি নয়", বলেন ড. পাল।
তিনি বলেন, অনেকে ভাবে ক্যান্সার মানে সব শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু একজন মেডিকেল অনকোলজিস্ট হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এবং বিদেশে আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি অনেক ভালো ভালো ট্রিটমেন্ট হচ্ছে।
তবে তিনি বলেন, "ক্যান্সার এখনো বিগেস্ট কজ অফ ডেথ ইন দা ওয়ার্ল্ড কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটা নিরাময়ের যোগ্য নয়, আমার মূল বার্তা হচ্ছে ক্যান্সারের চিকিৎসা, গবেষণা, এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখন অনেক উন্নত।"
"একজন ডাক্তার হিসেবে আমি বলতে পারি এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। তবে এখানে গবেষণা হচ্ছে অনেক বড় বিষয়, যার ফলে এখন অনেক নতুন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এখন চিকিৎসার অনেক ভালো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, তাই আমি বলব এখন ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে।"
ক্যান্সার চিকিৎসা এখন কতটা ভালো?
একটি উদাহরণ দিয়ে ড. পাল বলেন, যেমন ধরা যাক ১০ বছর আগেও এডভান্স লেভেলে মেলানোমা হলে মানুষ মারা যেত, কিন্তু গত পাঁচ বছরে কিন্তু গত পাঁচ বছরে চিকিৎসা এত উন্নত হয়েছে যে মানুষের বেঁচে থাকার হার এখন ৫০ ভাগ। তার মানে হচ্ছে আমরা এখন নতুন ইমিউন থেরাপি বের করেছি যেগুলো খুব ভালো কাজ করছে। আমার নিজের ক্ষেত্র হচ্ছে লাঙ ক্যান্সার, এক্ষত্রে এখন যে ওষুধ আমরা পেয়েছি তাতে অনেক গুরুতর পর্যায়ের রোগীরাও অন্তত ৪-৫ বছর বেঁচে যাবে, যেখানে আগে এক বছরের মধ্যেই মারা যেত।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় যেসব পদ্ধতি এখন ব্যবহার করা হয় সে বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে মনে করা হতো ক্যান্সার মানেই কেমোথেরাপি কিন্তু এখন অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ওষুধ একটি।
"আমরা এখন শুধু এখানে ট্যাবলেট ব্যবহার করি, কোন কেমোথেরাপি ব্যবহার ছাড়াই চিকিৎসা করছি।"
"ইউনাইটেড স্টেটস, ইউনাইটেড কিংডম সহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানে বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, এখন ক্যান্সারের জন্য অনেক ভালো থেরাপি হচ্ছে অনেক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে এবং এগুলো ভালো কাজ করছে।"
ক্যান্সার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোর জন্য রোগীদের কিভাবে নির্বাচন করা হয় সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ড. পাল।
"যখন কারো ক্যান্সার হয় তখন তারা স্ট্যান্ডার্ড থেরাপি পায়, সে সময় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ঢুকতে পারলে খুব ভালো হয়, ক্লিনিক্যাল টায়ালে ঢুকলে আগামীকালের ওষুধ আজকে পাচ্ছেন, যেগুলো ট্রায়াল ছাড়া খুব সহজলভ্য ওষুধ নয়। তাই ট্রায়ালে ঢুকতে পারা খুব ভালো বিষয়।"
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সুযোগ কোথায় পাওয়া যায় এ বিষয়ে তিনি বলেন, জনসংখ্যা এবং রোগীর আধিক্যের কারণে পুরো অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ট্রায়াল হয়ে থাকে নিউ সাউথ ওয়েলসে।
Lead researcher PhD Student Dr. Abhijit Pal's finding shows the patients with cancer from racial and ethnic minorities (CALD ) in Australia are being left out of cancer clinical trials. Credit: Dr Abhijit Pal
"(ট্রায়ালের পদ্ধতির ক্ষেত্রে) এখানে অনেক বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা হয় এবং আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি যারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ঢোকে তারা সুস্থ হয়ে আসে," বলেন তিনি।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে খুব সাবধানতার সাথে রোগীদের নির্বাচন করা হয়, যেটিকে ড. পাল সংজ্ঞায়িত করেন, ইনক্লুশন এবং এক্সক্লুশন পদ্ধতি নামে।
"যদি কারো (ক্যান্সার রোগী) বেশি সমস্যা দেখা দেয় বা যার জীবন ঝুঁকিতে আছে তাদেরকে আমরা ট্রায়ালে নেব না, যারা তুলনামূলকভাবে সুস্থ আছে এমনকি যাদের ক্যান্সার আছে তাদেরকে ট্রায়ালে নেওয়া হয়। আমরা এক্ষেত্রে রিসার্চগুলো খুব সাবধানে করি, আমরা কাউকে অসুবিধায় ফেলতে চাই না, কারো ক্ষতি করতে চাই না," বলেন তিনি।
কিন্তু কিভাবে একজন রোগী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রবেশের সুযোগ পাবে এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. পাল বলেন, যখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্গানাইজ করা হচ্ছে, তখন হয়তো সব জায়গায় সব রকমের ট্রায়াল পাওয়া যাবে না।
"এখন পেশেন্ট হিসেবে তাকে ভাবতে হবে তিনি কোথায় ট্রায়ালটা নেবেন, একজন ডাক্তার হিসেবে আমি জানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অনেক রোগীদের কষ্ট হয়, তাদের ভয় আছে, চিন্তা আছে। তবে, এরপরেও রোগীদেরকে এই ট্রায়াল-এর উপর কনফিডেন্স রাখতে হবে।"
"রোগীরা ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করতে পারে তাদের ট্রায়ালে প্রবেশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে, তারা কেন ট্রায়ালে যাচ্ছে, তাদের সেই অধিকার আছে সে ট্রায়াল সম্পর্কে ভালো করে জানা এবং এটা জিজ্ঞাসা করা ভালো।"
তিনি আরো বলেন, অবশ্যই ডাক্তারের একটি দায়িত্ব আছে, তবে রোগীরাও জানবে তার চিকিৎসার পদ্ধতিটি কি হতে যাচ্ছে।"
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কি সবসময় ঝুঁকিমুক্ত?
ড. পাল বলেন, যদিও অনেক নিয়ম মেনে ট্রায়ালগুলো করা হয়, তবে এরপরেও কিছু ঝুঁকি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভাবতে হবে আমি যদি ট্রায়ালে অংশ না নেই, তবে (অসুস্থতার মাত্রার কারণে জীবন) আরো ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
"যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত তাকে যদি চলতি ওষুধ দেয়া হয় সেটা কাজ নাও করতে পারে, কিন্তু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সে আরো অ্যাডভান্স লেভেলের ওষুধ পাচ্ছে।"
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এখন যেসব ওষুধ আছে সেগুলো অনেক সময় কাজ করে না।
"তাই রিস্ক হয়তো থাকতে পারে, কারণ আমরা এটা বলতে পারিনা যে সব ট্রায়ালই ঝুঁকিমুক্ত। তাই রোগীরা ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারে ট্রায়ালে তার কি ঝুঁকি থাকতে পারে," বলেন তিনি।
রোগীদের ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা ব্যাখ্যা করে ড. পাল বলেন, এসব ক্ষেত্রে (তাদের অনুভূতি) অনেক ভিন্ন হয়, কেউ ঝুঁকি নিতে চায় একটা ট্রায়ালের জন্য, কেউ সবগুলো ট্রায়ালেই ঢুকতে চায়, আবার কেউ কোন ঝুঁকিই নিতে চায় না।
"এক্ষেত্রে তাই ট্রায়াল এবং রোগী ম্যাচ করাটা অনেক শক্ত। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসা, গবেষণা এবং ট্রায়ালের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়," বলেন তিনি।
এখানে প্রকাশিত হলো তার সাথে সাক্ষাৎকারের ১ম পর্ব, শুনতে ক্লিক করুন উপরের অডিও প্লেয়ারে।
আরও শুনুন ডঃ অভিজিৎ পালের সাক্ষাৎকারটির ২য় পর্ব
ক্যান্সার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সুবিধা - যেসব কারণে পিছিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী-বহুভাষী কমিউনিটি
SBS Bangla
17/10/202312:07
এসবিএস রেডিও-র সম্প্রচার-সূচি হালনাগাদ করা হচ্ছে। ৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে, পরিবর্তিত সময়ে শোনা যাবে সরাসরি সম্প্রচার।
প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, বিদ্যমান সময়সূচিতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারবেন, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।
৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে ও নতুন সময়ে যাচ্ছে SBS Bangla Credit: SBS